কে বলে পোকেমন খারাপ? পোকেমন মানুষের থেকেও বড়

Updated By: Aug 1, 2016, 09:05 PM IST
কে বলে পোকেমন খারাপ? পোকেমন মানুষের থেকেও বড়

স্বরূপ দত্ত

আমার ব্যক্তিগতভাবে কোনও গেম খেলার নেশা তো দূর, খেলাই হয়ে ওঠে না কখনও। আসলে, জীবনের খেলায় এতটাই মেতে রয়েছি, সেখানে মোবাইলে তথাকথিত মোশোনিং গেম খেলার খুব একটা সময় হয় না। আর তার থেকেও বড় কথা, ছেলেবেলা থেকে বেড়ে ওঠার দিনগুলোতে বাবা-মায়ের কথার কিছু তো প্রভাব থাকেই। বাবা-মা বলতেন, গেমটা খেলে কী হবে! তখন অবশ্য মোবাইলে গেম খেলার সুযোগ ছিল না। তবে, চাইলে একটু আধটু ভিডিও গেম খেলাই যেত। কিন্তু বাবা বলতেন, গেমটা যে বানাচ্ছেন কল্পনাশক্তি দিয়ে, হলে তাঁর মতো হও। হ্যাঁ, আত্মসম্মাণ আর অস্তিত্বের প্রশ্ন বলে কথা। তাই খেলোয়াড় হতে মন চায় না। চাইলে, খেলাটাই তৈরি করতে মন চাইবে আজ, পরেও।

যে বিষয়টা নিয়ে কথা বলব বলে শুরু করা। ইদানিং, পোকেমন গো-কথাটা, আমার স্ত্রীর ওগো, হ্যাঁগো, কিগোর থেকেও কানে বাজছে যেন। সারাদিনে আমার মতো মানুষের কানেও কথাটা বার ৫০ আসে তো বটেই। এই শব্দটা এখন রোজ খবরকাগজে দেখি আরও অন্তত বার পাঁচ-দশ। আর টেলিভিশনে আরও বার পাঁচ-দশ। সব মিলিয়ে ডিসকাউন্ট দিয়ে ধরেও অন্তত ৬০ বার পোকেমন গো শুনছি। কত সব খবর দেখছি, শুনছি এই নতুন গেমটা নিয়ে।

খবর কাগজে বিজ্ঞাপন দিয়ে রীতিমতো পোকেমন গো-এর এক্সপার্টদের চাকরিতে নেওয়া হচ্ছে! এবং, স্যালারিটাও কম নয়। মাসে ৫০ হাজার টাকা! লোকটার কাজ কী হবে? সে তাঁর ক্লায়েন্টের জন্য পোকেমন খুঁজে এনে দেবে! ভাবা যায়, সীতার যদি একটা সোনার হরিণ ধরার 'এক্সপার্ট' লোক থাকতো, পোকেমন ধরার মতো! কেউ কেউ রীতিমতো সরকারি চাকরি ছেড়ে দিচ্ছেন। তালিকায় রয়েছেন শিক্ষকরাও! কত বড় সামাজিক অবক্ষয়! শিক্ষক, শিক্ষকতা ছাড়লেন, পোকেমন ধরে বেড়াবেন বলে! টাকাটাই সব! জানি না, তিনি শিক্ষক হয়েছিলেন কীভাবে! এগুলো খবর। তাই চোখ, কানে আসে। উপায় কী এড়িয়ে যাওয়ার!

কোনও বাচ্চা দিব্যি ট্রেনে চেপে বাড়ি থেকে পালাচ্ছ! আজকের ছেলেরা আর মুম্বইতে মিঠুন বা অমিতাভ হতে যাচ্ছে না। তারা পোকেমন ধরতে বেরিয়ে পড়েছে! মাঝবয়সী ভদ্রমহিলা পোকেমন ধরার নেশায় উঠে পড়ছেন বিরাট বড় গাছে! অনুষ্কা শর্মার মতো নামজাদা অভিনেত্রীও দরাজ সার্টিফিকেট দিচ্ছেন পোকেমনকে। ব্যস্, বাচ্চাদের উপর এর প্রভাব তো পড়বেই। তালিকায় রয়েছেন আরও অনেক সেলিব্রেটি। এসবের জন্যই হোক অথবা নিজেদের ভুলে, রাস্তায়, রাস্তায় দুর্ঘটনা লেগেই রয়েছে এই পোকেমন খেলার জন্য।

তা, এতদিন ধরে পোকেমন নিয়ে যত খবর পড়েছি, সবকটা পড়ে বা শুনে মুখ থেকে বেরিয়েছে একটাই শব্দ বোগাস! আরও খারাপ কিছু হয়তো। কিন্তু ভাবনাটা বদলে দিল একটা ছবি আর খবর। সিরিয়ায় আজ শিশুগুলো হাতে পোস্টার নিয়ে রাস্তায় দাঁড়িয়ে পড়েছে! যাতে পোকেমন ভেবে তাদের কেউ একটু আশ্রয় দেয়। তারা একটু বাঁচতে পারে! তাদের যাতে দুটো খাবার জোটে! ঘরছাড়া, না খেতে পাওয়া, যুদ্ধে বিধ্বস্ত, শরণার্থীদের মাঝের এই শিশুগুলোর এখন বেঁচে থাকার মাসিহা হয়ে উঠেছে পোকেমন! জানি না কে কী বলবেন। এই পোস্টারটা দেখে আমার বুকটা কেঁপে উঠেছে। আর মুখ থেকে বেরিয়েছে, 'সাবাশ পোকেমনের স্রষ্টাকে। কী জিনিস বানিয়েছেন! তামাম দুনিয়ার সব বয়সের মস্তিষ্কটাকে একেবারে ঘেঁটে মোবাইলে পুরে দিয়েছেন! আর আজ কিনা শিশুগুলোও এই পৃথিবীটায় একটু বেঁচে থাকতে মাসিহা ভাবছে ওই গেমের চরিত্রটাকেই!' পোকেমন বেঁচে থাকুক শ'সাল। মানুষ আর এখন মানুষকে বাঁচায় না। খুন করে। পোকেমন বলে একটা 'গেম' অন্তত কালকের পৃথিবীতে যারা থাকবে, সেই শিশুগুলোকে বুঝিয়ে দিতে পেরেছে, মানুষ মারবে। আর পোকেমন বাঁচাবে! জিও।

.