'গরু', 'গুজরাট', 'হিন্দুত্ব' বলা যাবে না! অমর্ত্য সেনের জীবনী নিয়ে তৈরি তথ্যচিত্রও 'সেন্সর্ড'

'গরু', 'গুজরাট', 'হিন্দু মিডিয়া' এবং 'হিন্দুত্ব: নিউ পার্সপেক্টিভ অব ইন্ডিয়া, আপত্তি এই চার শব্দ নিয়ে। আর তার জেরেই ছাড়পত্র পেল না নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনের জীবনী নিয়ে তৈরি তথ্যচিত্র, "দ্য আর্গুমেনটেটি ইন্ডিয়ান"। 

Updated By: Jul 12, 2017, 01:29 PM IST
'গরু', 'গুজরাট', 'হিন্দুত্ব' বলা যাবে না! অমর্ত্য সেনের জীবনী নিয়ে তৈরি তথ্যচিত্রও 'সেন্সর্ড'

কলকাতা: 'গরু', 'গুজরাট', 'হিন্দু মিডিয়া' এবং 'হিন্দুত্ব: নিউ পার্সপেক্টিভ অব ইন্ডিয়া, আপত্তি এই চার শব্দ নিয়ে। আর তার জেরেই ছাড়পত্র পেল না নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনের জীবনী নিয়ে তৈরি তথ্যচিত্র, "দ্য আর্গুমেনটেটি ইন্ডিয়ান"। 

তথ্যচিত্রটির পরিচালক অর্থনীতিবিদ সুমন ঘোষ সেন্সর বোর্ডের এই আপত্তির প্রসঙ্গে প্রতিক্রিয়ায় জানিয়েছেন," আমি যখন ছবিটা বানাই, তখন এই বিষয়গুলো মাথাতেই ছিল না। নিজস্ব অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি আসলে দোষ সেন্সর বোর্ডে বসে থাকা মানুষগুলোর নয়। কোথা থেকে গোটা বিষয়টা পরিচালিত হচ্ছে, সেটাই আসল। 'গভঃ ক্রিমিনালিটি ইন গুজরাট', এখানে গুজরাট শব্দ নিয়ে আপত্তি রয়েছে সেন্সর বোর্ডের। আপত্তি যদি থাকেই তাহলে 'ক্রিমিনালিটি' শব্দের ওপর হওয়া উচিত।" এই প্রসঙ্গে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন অবশ্য কোনও মন্তব্য করতেই নারাজ। তাঁর মতে, "আমার এই বিষয়ে কিছু বলার নেই। ছবিটি আমার তৈরি নয়। আমি ছবির বিষয়বস্তু। যা বলার পরিচালকই বলবেন"।      

"দ্য আর্গুমেনটেটিভ ইন্ডিয়ান" তথ্যচিত্রের ওপর সেন্সর বোর্ডের যে আপত্তি, সেই বিষয়ে প্রতিক্রিয়া দিতে গিয়ে সাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় জানিয়েছেন, "প্রথমত ছবিটি আমি দেখিনি। তবে যে বিষয়গুলো নিয়ে সেন্সর বোর্ড আপত্তি জানিয়েছে, এসব নিয়ে তো বিতর্ক হচ্ছে-ই। সংলাপে ক্লিপ বসালেই তো আর সমস্যার সমাধান হবে না। এটা কোনও কাজের কথাও নয়। এই তথ্যচিত্রের ছাড়পত্র না পাওয়া দুর্ভাগ্যজনক।" 'জ্ঞানপীঠ' শঙ্খ ঘোষ এই ঘটনার কড়া নিন্দা করে জানিয়েছেন, "স্পর্ধা যে কতদূর পৌঁছেছে তার একটা লজ্জাজনক নজির আমরা দেখছি।" এই ঘটনায় সেন্সর বোর্ডের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন কবি শ্রীজাত বন্দ্যোপাধ্যায়ও। তাঁর সাফ কথা, "আমি ছবিটি দেখেছি। আমার কোথাও মনে হয়নি এই শব্দগুলো আপত্তিজনক। এই শব্দগুলো বাদ দেওয়ার কোনও প্রয়োজনই নেই। এই ছবির অবিলম্বে ছাড়পত্র পাওয়া উচিত।"

উল্লেখ্য, এটাই প্রথমবার নয়, এর আগেও বিভিন্ন ইস্যুতে বিতর্ক তৈরি করছে ভারতীয় সেন্সর বোর্ড। বর্তমান চেয়ারপার্সন পহেলাজ নিহালনি নানান সময়ই ভারতীয় এবং বিদেশি ছবির ওপর কাঁচি চালিয়ে শিরোনামে এসেছেন। এবারও তেমনই এক ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটল। নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনের জীবনী নিয়ে তৈরি তথ্যচিত্র, "দ্য আর্গুমেনটেটিভ ইন্ডিয়ান"-এর চারটি শব্দে কাঁচি চালাতে হবে বলে পরিচালককে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অমর্ত্য সেনের সংলাপে থাকা 'গরু', 'গুজরাট', 'হিন্দু মিডিয়া' এবং  'হিন্দুত্ব: নিউ পার্সপেক্টিভ অব ইন্ডিয়া', এই চার শব্দে 'বিপ' ব্যবহার করতে হবে, এমনই নির্দেশ সেন্সর বোর্ডের। রাজনৈতিক মহল থেকে সাংস্কৃতিক ক্ষেত্র, সেন্সর বোর্ডের এই 'গৈরিকীকরণের' বিরুদ্ধে নিন্দায় সরব সবাই। বুদ্ধিজীবী মহলের একাংশের অভিযোগ, 'সংঘ এবং বিজেপি গোটা দেশজুড়ে উগ্র হিন্দুত্ববাদ স্থাপনের প্রচেষ্টা চালাচ্ছে।' তাঁদের আরও অভিযোগ, এভাবে চলতে থাকলে ভারতীয় শিক্ষা এবং সংস্কৃতির বিনাশ অবশ্যম্ভাবী।  

.