ফুঁসছে মুয়ূরাক্ষী, দামোদর, ব্যাপক বন্যার কবলে দক্ষিণবঙ্গ, ক্রমশ খারাপ হচ্ছে পরিস্থিতি

Updated By: Aug 3, 2015, 08:43 AM IST
ফুঁসছে মুয়ূরাক্ষী, দামোদর, ব্যাপক বন্যার কবলে দক্ষিণবঙ্গ, ক্রমশ খারাপ হচ্ছে পরিস্থিতি

ডিভিসির ছাড়া জল হুহু করে ঢুকে পড়ছে দামোদর দিয়ে। আর তাতেই উলুবেড়িয়ার উদয়নারায়ণপুরের কাছে ভাঙল দামোদরের বাঁধ। জল ঢুকতে শুরু করে দিয়েছে হরিহরপুরে। বন্যার জলে এখন পুরোপুরি জলের তলায় বাগনান, শ্যামপুর এবং আমতা এক নম্বর ব্লক। গতকাল সন্ধের পর থেকে উদয়নারায়ণপুরের তিনটি জায়গা দিয়ে জল ঢুকতে শুরু করে। পরিস্থিতি জটিল হতে দেখে শুরু হয়ে যায় মাইকিং। এদিকে বাগনানের বিভিন্ন এলাকায় ত্রাণ নিয়ে ক্ষোভ দানা বাঁধতে শুরু করেছে।ঝাড়খণ্ডে অতিবৃষ্টি হলে কোনপথে রাজ্যে নেমে আসবে বিপর্যয়?

ঝাড়খণ্ডে অতিবৃষ্টি হলে মাইথন ও পাঞ্চেতের জলাধারে জলের চাপ বাড়বে। দুই জলাধার থেকে ছাড়া জল পৌছবে দুর্গাপুরে। ইতিমধ্যে ক্যাচমেন্ট এলাকায় বৃষ্টি হলে দুর্গাপরের নিজস্ব জলের পরিমাণও বাড়বে। দুর্গাপুর জল ছাড়লে প্লাবিত হবে বর্ধমান, হুগলি ও হাওড়ার নীচু এলাকাগুলি। অন্যদিকে, তিলপাড়া ও ম্যাসাঞ্জোর ব্যারেজ থেকে ছাড়া জল বহন করে ময়ূরাক্ষী নদী। ময়ূরাক্ষী নদীতে জলের চাপ বাড়লে ভাসবে বীরভূমের সাঁইথিয়া থেকে মুর্শিদাবাদের কান্দি পর্যন্ত বিস্তীর্ণ এলাকা।

এছাড়াও সিদ্ধেশ্বরী ও কুয়ে নদীর জলস্ফীতিতে ভাসতে পারে দুবরাজপুর সহ বিস্তীর্ণ এলাকা। ভাগীরথীর জল বাড়ায় ঘোরালো হয়েছে নদিয়ায় বন্যা পরিস্থিতি। গতকাল দুপুরে জল ঢুকে যায় মায়াপুরের ইসকন মন্দিরে। নবদ্বীপ শহর, পলাশির হাটচাপড়া, শান্তিপুর, কৃষ্ণনগর দুই নম্বর ব্লকের বিস্তীর্ণ এলাকা জলমগ্ন রয়েছে। ভাগীরথীর জল আরও বাড়লে পলাশি, নাকাশিপাড়া,কালিগঞ্জ, কৃষ্ণনগর দু নম্বর ব্লকের ধর্মদা, সাধনপাড়া পঞ্চায়েত এলাকার বেশকিছু গ্রাম নতুন করে প্লাবিত হবে। পাশাপাশি ভাগীরথীর জল বাড়লে শাখানদী জলঙ্গীরও জল বাড়বে। ফলে নতুন করে প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে নদিয়ার চাপড়া, করিমপুর, তেহট্ট ব্লকের বহু গ্রাম। দ্বারকেশ্বর নদীর জল ঢুকে নতুন করে প্লাবিত হল বাঁকুড়ার কোতুলপুর ব্লকের বিস্তীর্ণ অঞ্চল। একটানা বৃষ্টিতে জলবন্দি হয়ে পড়েছেন ইন্দাস, সোনামুখী ও পাত্রসায়ের ব্লকের বহু মানুষ। কাঁচা বাড়ি ভেঙে পড়ায় আশ্রয়হীন হয়ে পড়েছেন বিস্তীর্ণ অঞ্চলের মানুষ। দুর্গত এলাকায় ত্রাণ না পৌছনোয় ক্ষোভ বাড়ছে মানুষের মধ্যে। মাসাঞ্জোর ও তিলপাড়া ব্যারেজ থেকে ছাড়া জলে অবনতি হল বীরভূমের বন্যা পরিস্থিতির। গতকাল রাতে মাসাঞ্জোর থেকে ছাড়া হয় পঞ্চান্ন হাজার কিউসেক জল। তিলপাড়া থেকে ছাড়া হয় ষাট হাজার কিউসেক জল।  

বন্যা পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে আজ জেলায় যাচ্ছেন পুর ও নগরোন্নয়নমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম।  দুই ব্যারেজ থেকে জল ছাড়ার ফলে ফুঁসছে সিদ্ধেশ্বরী, কুঁয়ে ও ময়ূরাক্ষীসহ বিভিন্ন নদী। ময়ূরাক্ষী তীরবর্তী এলাকায় জারি করা হয়েছে লাল সতর্কতা। বইধারা ব্যারেজের জলের চাপে ভেঙে পড়েছে ব্রাহ্মণী নদীর বাঁধ। বাঁধ ভাঙার ফলে ও জল ছাড়ায় লাভপুরের বিভিন্ন গ্রাম এবং রামপুরহাট দুই নম্বর ব্লকের বেশকয়েকটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। অন্যদিকে ডিভিসি ও হিংলোর জলের চাপে ফুণসছে অজয় নদ। ইতিমধ্যে অজয় নদের বিভিন্ন এলাকায় বাঁধে ফাটল দেখা দিয়েছে। ভীমগড়, খয়রাশোল, ঘেরো পাড়াসহ বিভিন্ন এলাকায় বাঁধ মেরামতির কাজে হাত লাগিয়েছেন গ্রামবাসীরাই।  

একসময় বালিমাফিয়াদের তৈরি সুড়ঙ্গ দিয়ে জল  ঢুকতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন গ্রামবাসীরা। তাই প্রশাসনের সাহায্যের আশায় বসে থেকে নিজেরাই বালির বস্তা, ট্রাক্টর, জেসিপি দিয়ে বাঁধ মেরামতির কাজে হাত লাগিয়েছেন খোদ এলাকাবাসীরাই। চলছে রাতভর বাঁধ পাহার দেওয়ার কাজও। ডিভিসি থেকে ছাড়া এক লক্ষ চার হাজার কিউসেক জলে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হুগলিতে। পুরশুরা, খানাকুল ও আরামবাগের বিস্তীর্ণ অংশ প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। লাগাতার বৃষ্টিতে ফুঁসছে দামোদর, মুণ্ডেশ্বরী, দ্বারকেশ্বর নদী। বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে খানাকুল, গোঘাটেরও।  নতুন করে জল ঢুকেছে কুমারগঞ্জ,রিয়া, ধুরকুণ্ডা, পশ্চিম চাকলা, কামারপুকুর।  ডিভিসির খাল উপচে জল ঢুকেছে পাণ্ডুয়ায়। ডিভিসি ও কুম্তী নদী ভাসিয়েছে বলাগড়।

আরও একানব্বই হাজার কিউসেক জল ছাড়ল ডিভিসি। আজ সকালে এই বিপুল পরিমাণ জল ছাড় হয়। এর ফলে হুগলির বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। রাতেই এক লক্ষ চার হাজার কিউসেক জল ছাড়ায় বর্ধমানের সব নদীতে লাল সতর্কতা জারি করেছে প্রশাসন। জেলার বন্যা পরিস্থিতি দেখতে আজ বর্ধমান যাচ্ছেন রাজ্যের মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস। কালনা এক নম্বর ব্লকে মন্তেশ্বর, পূর্বস্থলীসহ একাধিক গ্রাম জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। জলমগ্ন কালনা শহরের পাঁচ ও দশ নম্বর ওয়ার্ড। বহু মানুষ গ্রাম ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে পাড়ি দিয়েছেন। জলবন্দি হয়ে পড়েছেন কালনার ঝাউডাঙা গ্রামের বহু মানুষ। গতকাল রাতে তাঁদের উদ্ধারে নামে সেনা। কেতুগ্রাম ও মঙ্গলকোটের পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে। রাতে মাইকে প্রচার চালান মঙ্গলকোটের বিডিও। বাঁধগুলির পরিস্থিতি সরেজমিনে খতিয়ে দেখেন তিনি। কেতুগ্রামের বনফুল গ্রামে বাঁধে ফাটল দেখা দিয়েছে। খবর পেয়ে রাতেই ঘটনাস্থলে যান কেতুগ্রাম এক নম্বর ব্লকের বিডিও, জেলাপরিষদের সভাধিপতি  এবং কেতুগ্রাম থানার ওসি। বাঁধ পাহারায় মোতায়েন করা হয়েছে লোক। নতুন করে জল ঢুকেছে  আউসগ্রামের কুড়িটি গ্রামে। মেমারির বিস্তীর্ণ এলাকা জলমগ্ন। জল জমেছে ভাতারেও। ভাসছে পূর্বস্থলী, কেতুগ্রাম।

.