ভূত বসেছে শিয়রে

গা'টা একটু ছমছম করছে কি? করারই তো কথা। হাজার হোক আজ তো ভূত চতুর্দশী। ভূত তাড়াতে হবে বলেই তো চোদ্দ প্রদীপ জ্বালানো। আলোয় চারিধার ভরিয়ে রাখা। গাঁ ঘরে তো আবার আজ রাতে ঘর থেকে বের হওয়াই মানা। সবার এক কথা, "আজ বেরোস না। তেনারা এসে দেবে গলা টিপে!" এমনিতে এখন দিবসের ছড়াছড়ি। গান্ধী দিবস, প্রজাতন্ত্র দিবস, শিশু দিবসের সঙ্গে হালে যোগ হয়েছে হাসি দিবস, খুশি দিবস, বন্ধু দিবস, প্রেম দিবস আরও আরও কত কী। সেই হিসাবে দেখলে আজ বাঙালির ভূত দিবস। কালিপুজোর ঠিক আগের রাতে এদেশে ভূত চতুর্দশী। কৃষ্ণপক্ষের সেই ঘোর আঁধারে প্রেতের দলকে পিছুটান দেয় ধরণী। ওরা ফিরে আসে নিজের নিজের বাসার আনাচে কানাচে। ভীরু মানুষ আত্মরক্ষার আশায় সাজিয়ে রাখে জ্বলন্ত প্রদীপের পাহারা। বলবৃদ্ধি জন্য ১৪ রকম শাকের আয়োজন করে ভাতের পাতে। শুধু এখানে নয় পশ্চিমের দেশেও ৩১ অক্টোবর তারিখটা চিহ্নিত 'হ্যালোইন' নামে। আত্মাদের গা-ছমছমে রি-ইউনিয়ন ডে।

Updated By: Nov 12, 2012, 10:12 PM IST

গা'টা একটু ছমছম করছে কি? করারই তো কথা। হাজার হোক আজ তো ভূত চতুর্দশী। ভূত তাড়াতে হবে বলেই তো চোদ্দ প্রদীপ জ্বালানো। আলোয় চারিধার ভরিয়ে রাখা। গাঁ ঘরে তো আবার আজ রাতে ঘর থেকে বের হওয়াই মানা। সবার এক কথা, "আজ বেরোস না। তেনারা এসে দেবে গলা টিপে!" এমনিতে এখন দিবসের ছড়াছড়ি। গান্ধী দিবস, প্রজাতন্ত্র দিবস, শিশু দিবসের সঙ্গে হালে যোগ হয়েছে হাসি দিবস, খুশি দিবস, বন্ধু দিবস, প্রেম দিবস আরও আরও কত কী। সেই হিসাবে দেখলে আজ বাঙালির ভূত দিবস। কালিপুজোর ঠিক আগের রাতে এদেশে ভূত চতুর্দশী। কৃষ্ণপক্ষের সেই ঘোর আঁধারে প্রেতের দলকে পিছুটান দেয় ধরণী। ওরা ফিরে আসে নিজের নিজের বাসার আনাচে কানাচে। ভীরু মানুষ আত্মরক্ষার আশায় সাজিয়ে রাখে জ্বলন্ত প্রদীপের পাহারা। বলবৃদ্ধি জন্য ১৪ রকম শাকের আয়োজন করে ভাতের পাতে। শুধু এখানে নয় পশ্চিমের দেশেও ৩১ অক্টোবর তারিখটা চিহ্নিত 'হ্যালোইন' নামে। আত্মাদের গা-ছমছমে রি-ইউনিয়ন ডে।

বিদেশে যেটা হ্যালোউইন, আমাদের সেটা ভূত চতুর্দশী। কিন্তু এদেশের ভূতদের দুর্ভাগ্য ওদেশের হ্যালউইনের মত এদেশের ভূত চতুর্দশী বাজার সেভাবে নেই। তাই তো আজ সেভাবে এসএসএম এল না, 'ভূত দিবসের ভৌতিক শুভেচ্ছা, সাবধানে থেকো বন্ধু।'

সে কথা থাক আজ বরং একটু ভূত চর্চা হয়ে যাক।

ভূত কারা?-- ছোটদের কাছে ভূত হল লাল চোখে গাছের ওপর পা দুলিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা এমন এক না মানুষ যাদের কথা না শুনলেই গলা টিপে দেবে। পড়াশোনা না করলেই গলা টিপে দেবে। দুষ্টুমি করলেই ঘাড়ে চেপে বসবে। একটু বড় হলে ভূতের মানেটা একটু পাল্টে যায়। তখন ইচ্ছে হয় ভূতকে চাক্ষুষ দর্শন করতে। ভূতকে ধরার নেশায় তখন আঠারো বছর (কবি নজরুল ইসলামের ভাষায় বললাম) একেবারে অ্যাডভেঞ্চারের নেশায় বুঁদ। এবার আরও একটু বড় হলে বেকারত্বটাই একটা মস্ত ভূত হয়ে দাঁড়ায়। চাকরির দয়ায় দোরে দোরে ঘুরে বেড়ানো যুবকের কাছে তখন ভূতের ভয় মানে মায়ের গলার ডাক "বাবা কিছু পেলি"? সংসার জীবনে পরে আবার ভূতের মানেটা পাল্টে যায়। তখন মাঝে মাঝে বেঁচে থাকার ইচ্ছা হারিয়ে যাওয়াটাই বড় ভূত। বুড়ো বয়সের ভূত আবার মৃত্যুর হাতছানিটা। এ ভূতের ওঝা আবার বড় বড় ডাক্তাররাও হতে পারে না।

ভূত বলে কিছু আছে কি?-- কোটি টাকার প্রশ্ন বলা যায়। যে কোনও তর্কের সেরা বিষয় এটা। সেই তর্কের আবহে যদি বৃষ্টি আর পাঁপড় যোগ হয় তাহলে তো জমে ক্ষীর। বঙ্গ দেশে অন্তত হাজার জন এমন মানুষ আছেন যাঁরা দাবি করেন তেনাদের দেখেছেন। অন্তত পঞ্চাশ হাজার মানুষ আছেন যারা বলেন আমি দেখেনি কিন্তু এমন মানুষ আছে যারা তাদের দেখেছেন। অন্তত লাখ মানুষ আছেন যারা বলেন রাতের আলো বন্ধ হলেই টের পান ঘরের বাইরে কারা যেন হাঁটছেন। যুক্তিবাদীরা হেসে বলেন, সত্যি যদি দেখে থাকো দেখাও তো দেখি। মনোবিদরা বলেন সবাইটা মনের ভুল। আসলে ভূত অনেকটা ভিত বিশ্বাসের ইঁটে গাঁথা। তবে লাখ কথার এক কথা হল চুলোয় যাক যুক্তি বিশ্বাস করতে ভাল লাগে তেনারা আছেন।

ভূতেরা কেমন আছেন?--দিন দিন জনবসতি বাড়ছে। খোলা জায়গা কমছে তাই ভূত বাবাজিদের থাকার জায়গা কমছে। এটাই এই বিষয়ে জনপ্রিয় মত। শুনছি নাকি ভূতরাও মানুষদের মত জন্ম নিয়ন্ত্রনের কৌশল শিখে ফেলেছে। ফলে অনেক প্রজাতির ভূত এখন উধাও। যেমন মেছো ভূত (মাছের দাম বেড়েছে বলে উধাও), পেত্নি (সবাই আজ রূপচর্চা করে তিলোত্তমা, তাই উধাও)। ওসব আর থাকে না। বদলে শোনা যায় 'তোকে ফেসবুক ভূতে পেয়েছে', 'তোকে গেমের ভূতে পেয়েছে', এসব আর কী।

তবে কী, যতদূর মনে হয় তেনারা ভাল নেই। গ্যাসের দাম আকাশছোঁয়া। পেট্রোলের দামও বেশ। এ অবস্থায় কেই বা আর মরে পুড়ে ভূত হতে চাইবে‌!

সিনেমায় ভূত-- মানুষের ভূত বিশ্বাসকে ইন্ধন দেয় সিনেমা। বাংলা সিনেমা তো ভূতকে একেবারে কিংবদন্তি করে তুলেছে। সত্যজিত রায়ের 'গুপি গাইন বাঘা বাইন'-সিনেমায় এর সাদা-ভূত কালো ভূতের লড়াই তো সব বয়েসের সেরা বিনোদন। আর তিন বর দেওয়া ভূতের রাজার দেখা তো সবাই পেতে চায়। ক'মাস আগের সিনেমা ভূতের ভবিষ্যত তো আবার বাংলা সিনেমার বর্তমানকেই উজ্জ্বল করে দিল। 'বিকেলে ভোরের ফুল' সিনেমায় স্বয়ং উত্তম কুমারও তো ভয় পেয়ে গেছিলেন।

তবে হিন্দি সিনেমায় ভূতের ছবি মানে ও আবার অন্য কিছু। সেখানে অলৌকিক স্বাদের ছবি ও কাহিনিতে রগরগে দেহ দৃশ্যায়ন। ঘুমন্ত নায়িকার নাভির আবরণ না সরালে ভূতের লালসা প্রমাণিত হয় না। ভূতের সঙ্গে যৌনতার ককটেল দেওয়াটা অবশ্য হলিউড কায়দা। সে কথা থাক বরং বলা যাক সিনেমা ব্যবসা থুড়ি শিল্পে ভূত মানে 'মা লক্ষ্মী'। অন্তত বক্স অফিস তাই বলে।

রাজনীতির ভূত--রাজনীতিতেও ভূত থাকে‌! সত্যি বলছি থাকে। হ্যাঁ, সেটা রাজনীতিবিদরা হাড়ে হাড়ে টের পান। সব কথা বলার আগে ভেবে বলতে হয় ভোট আসবে তো। মন খুলে কিছু করতে হলেই ভোটের ভূত গলা টিপতে আসে। তা ছাড়া নিন্দুকরা বলেন, সব দলেই নাকি একটা করে ভূত থাকে। তারা কারা সেটা জনগণই ঠিক করে দেন। ভোটের আগে তারা বর্তমান, ভোটের পরে তারা ভবিষ্যত।

খেলার মাঠের ভূত--খেলার মাঠে আবার ভূতেরা দাপিয়ে বেড়ান। এখন ধোনি চাইবেন পিচটা এমন হোক যেন কুকরা স্পিনের ভূত দেখেন। মোহনবাগান সমর্থকরা চাইবেন, শৈলেন মান্নার ভূত যেন ওডাফাদের ওপর ভর করে। ভারতীয় হকিতেও একটা ভূত লাগবে। সানিয়া সিঙ্গলস ছেড়ে দিচ্ছেন তাই টেনিসে ভারতের লাগবে একজন পেত্নি। পেত্নিটাই 'কোট আনকোট' দেওয়া হল না। থাক ভূতদেরে ব্যাপারস্যাপার। তেনারা ঠিক ক্ষমা করে দেবেন।

এই রে লিখতে লিখতে টের পেলাম কে যেন বলছে এবার তোর চাকরিটা খাবো। ভয় লাগছে। আসলে আমার কাছে ভূত হল চাকরিটা। তাই আজ চলি অনেক কাজ পরে। সময় থাকলে আপনি বরং পরে ফেলুন। কে জানে হয়তো আমার লেখাটাই আপনার ভূত বলে মনে হবে!

পার্থ প্রতিম চন্দ্র

Tags:
.