আইপিএলকে লেখা একটা উড়ো চিঠি

আইপিএল শুরুর ঠিক আগে হঠাত্‍ই একটা চিঠির খোঁজ পাওয়া গেল। সেই চিঠিটা ভারী অদ্ভুত। মনে হয় কোনও ক্রিকেটপ্রেমী লিখেছেন। বিশেষ অনুমতি নিয়ে সেই চিঠিটা আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হল।

Updated By: Mar 31, 2013, 10:55 PM IST

পার্থ প্রতিম চন্দ্র
আইপিএল শুরুর ঠিক আগে হঠাত্‍ই একটা চিঠির খোঁজ পাওয়া গেল। সেই চিঠিটা ভারী অদ্ভুত। মনে হয় কোনও ক্রিকেটপ্রেমী লিখেছেন। বিশেষ অনুমতি নিয়ে সেই চিঠিটা আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হল।
প্রিয় আইপিএল,
আমি নেহাতই ছাপোষা একজন ক্রিকেট অনুরাগী। দশটা-পাঁচটার সরকারী কর্মচারী। টিকিটের দাম আর ঝামেলার ভয়ে মাঠে কোনওদিন খেলা দেখতে যায়নি। আমার যাবতীয় ক্রিকেট প্রেম ড্রয়িংরুমের এই পুরনো টিভি সেটটার মধ্যে আবদ্ধ। এই টিভিতে দেখেই আমার ক্রিকেট ভালবাসা শুরু, ক্রিকেটার ভক্তি শুরু।
আজ তোমায় কিছু কথা বলব বলে এই চিঠিটা লিখতে বসলাম। জানো তোমার জন্মের আগে থেকেই তোমায় নিয়ে আমার মনে একটা আলাদা আগ্রহ তৈরি হয়েছিল। আসলে একটা কথা লুকিয়ে লাভ নেই, ক্রিকেট তোমার আসার আগে একটু হলেও কোণঠাসা হয়ে পড়েছিল। ঠুক ঠুক, বোরিং এসব শব্দবন্ধগুলো ক্রিকেটের বিশ্বায়নের বিজ্ঞাপনে রাক্ষস হয়ে দেখা দিচ্ছিল। সেই সময়ই তোমার উত্থান।
প্রথম দিনে তোমায় দেখে চোখটা ধাঁধিয়ে গেল। বাবা কী রঙীন তুমি! মাত্র ২৪০টা বলের ব্যাপার, তার মধ্যে কত রঙ। প্রথম দিন থেকেই তোমায় আমার মনে ধরে গেল। কুড়ির ক্রিকেটের ধুন্ধুমার ব্যাপারটা খেলাটাকে ফর্মুলা ওয়ানের গতি দিল। একটা মিনিট টিভির সামনে থেকে নড়েছো কী মরেছো... প্রতি বলে হয় চার, নয় ছয় কিংবা উইকেট। দারুণ ব্যাপার। আমার মত ছা পোষা লোকের কাছে ব্যাপরটা পার্কে ঘুরতে বেরিয়ে টার্জানকে দেখতে পাওয়ার মজা আর কী।
সেই সঙ্গে বলিউড তারকারদের লম্ফঝম্প, মালিকদের আবেগ আর সমর্থকদের চিত্‍কার আলাদা একটা মাত্রা দিল। আর হ্যাঁ, ছয় চারের ফাঁকে চিয়ারলির্ডাসদের নাচটা উপড়ি দেখতেও বেশ ভাল লাগত। চিয়ারলির্ডাসদের ব্যাপারটা দেখে মনে হত সার্কাসে বাঘ সিংহের খেলার ফাঁকে স্বল্প পোশাকে খেলা দেখানো সুন্দরীদের শরীরি‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍ খেলাটা কিছুটা রিলিফের মত। অফিস থেকে তাড়াতাড়ি ফিরে টিভির সামনে কখনও নাইটদের জন্য, কখনও কিংসদের জন্য গলা ফাটানোটা অভ্যাস হয়ে গেল।
আমার পাশে তখন চেঁচাতে শুরু করল মা, বোনেরাও। বেশ জমে গেল। মনে হল সিরিয়াল, সিনেমাকে কষে একটা থাপ্পড় দিতে পেরেছো তুমি। এই পর্যন্ত সব ঠিক ছিল। কিন্তু তোমায় নিয়ে দেখা স্বপ্নটা যে এত তাড়াতাড়ি দুঃস্বপ্নে পরিণত হবে বুঝতে পারিনি।
দেখলাম দিন যত গেল তোমার মধ্যে মেদ বাড়তে থাকল। ব্যবসা, টাকা, আমোদ ক্রিকেটকে ক্রমশ ঢেকে ফেলল। সূর্যগ্রহণের সময় যেমন চাঁদের ছায়ায় সূর্য ঢাকা পড়ে যায়, তেমনভাবেই বাইশ গজটা ঢাকা পড়ল সস্তা প্রচার আর সিন্দুকের ফাঁপা আওয়াজে।
মালিক জোর করে মদ খেয়ে মাঠে নামতে চেয়ে বিতর্ক বাঁধাল। ক্রিকেটার শ্লীলতাহানি করে জেল খাটল,
বিশ্বাস কর এসব চাইনি। এসব চাই না। ছোটবেলায় একটা প্রবাদ পড়েছিলাম। তখন কথাটা অতটা বুঝিনি। সেটাই বলব তোমায়। বন্যেরা বনে সুন্দর, শিশুরা মাতৃক্রোড়ে। এই কথাটা ধার করে বলব ক্রিকেট সুন্দর বাইশ গজেই। তাতে বিনোদন থাকুক ক্ষতি নেই। টাকা উড়ুক গাত্রদাহ হওয়ার কারণ নেই। তবে খেলাটা ছায়ায় ঢাকা পড়ে বাকি সব সামনের সারিতে চলে আসাটা দেখে খুব খারাপ লাগে। তাই তোমায় বাধ্য হয়েই বলছি। দয়া করে ব্যাট, বল, চার, ছয় এগুলোই যেন তোমার চেনার আসল কারণ হোক।
জানি তুমি আমার চিঠিটা পড়ে এখন হয়তো হাসছো। ভাবছো আমি সত্যি পাগল। যুক্তি হিসাবে দেখাবে তোমার ব্র্যান্ডভ্যালুর আকাশছোঁয়া দরের কথা। এটাও বলবে যে মেসিদের চ্যাম্পিয়ন্স লিগ, অলিম্পিক বিশ্বকাপের পর তুমিই বিশ্বের সবচেয়ে দামী টুর্নামেন্ট। কিন্তু বিশ্বাস কর সেটা নেহাতই একটা শুকনো তথ্য আর পরিসংখ্যান।
আসল কথা হল এভাবে চললে কালের নিয়মে তুমি হারিয়ে যাবে। ইতিহাস বলে, প্রকৃতি বলে শুধু চাকচিক্য আর সাময়িক সুখ দেখিয়ে মানুষের মনে দীর্ঘদিন টিকে থাকা যায় না। ভাল প্যাকেট দিয়ে মুড়ে দিল একটা প্রোডাক্ট হয়ত শুরুতে ভাল বিক্রি হয়, কিন্তু সেটার মধ্যে আসল জিনিস না থাকলে সেই প্রোডাক্টটা খুব তাড়াতাড়ি জনপ্রিয়তা হারায়। তুমি খেয়াল করেছো কী তোমারও তাই হচ্ছে। ২০০৮ এর তুমি আর ২০১২ তুমির ফারকটা দেখেছো কি! তোমার জনপ্রিয়তা এখন অনেক কমেছে। বিজ্ঞাপন, বিনিয়োগ, এনডোর্সমেন্টের অনেকটা আসছে তোমার অতীত দেখে।
তাই বলি জেন্টলম্যানদের গেমটা খেলো। ক্রিকেটকে ফিরিয়ে দাও ক্রিকেটে। দেখবে You will really rock...

ইতি
ক্রিকেট পাগল দেশের এক ছাপোষা নাগরিক

.