আত্মপ্রত্যয়ের চৌকাঠ পেরিয়ে দর্শকের মনদুয়ারে

Updated By: Jul 31, 2015, 05:14 PM IST
আত্মপ্রত্যয়ের চৌকাঠ পেরিয়ে দর্শকের মনদুয়ারে

শর্মিলা মাইতি
ছবির নাম: চৌকাঠ
রেটিং: ***1/2

আমরা মেয়েরা নাকি যত দূরেই যাই, চৌকাঠ পেরতে পারি না। খিড়কি থেকে সিংহদুয়ারের লক্ষ্মণরেখা একটা মেয়ের জীবন আসলে বহুবিধ চৌকাঠ পেরনোর অঙ্গীকার। যত দেওয়ালই ভাঙি না কেন, মুক্ত আকাশের নীচে দাঁড়াতে পারি না। যত জানালাই খুলি না কেন, শ্বাস নিতে পারি না। বন্দি থাকার অভ্যাস না সহজাত প্রবৃত্তি, কোনটাকে দায়ী করা যায়? জোরে কণ্ঠ ছাড়লেও, রপ্ত করতে পারিনি মুক্তি শব্দের সঠিক অভিধানসম্মত অর্থ। রাজা দাশগুপ্ত ঠিক এই প্রশ্নের মুখ থেকেই নির্মাণ করতে শুরু করেছেন চৌকাঠ। অনেকদিন পর পরিচালকের একটি সত্ প্রচেষ্টা। অনেকদিন পর একটি আমূল ভাল ছবি দেখার নির্মল, নির্ভার আনন্দ। সহজ কথায়, সহজ গল্প বলে দর্শকের একেবারে মনের দরজায় গিয়ে কড়া নাড়া।

এই সাবজেক্টে অনেক কাহিনিই হতে পারত। কঠিন, কঠোর, তীব্র। কিন্তু সেই সব আর্তনাদগুলো বাদ দিয়ে নারীর মনের ভেতরের জিজ্ঞাসা আর তার আশু সমাধান, বড় সুন্দরভাবে দেখালেন পরিচালক। দেবী (শ্রীলেখা মিত্র) স্বচ্ছল পরিবারের হাসিখুশি গৃহিণী। সংসার সুখের হয় রমণীর গুণে। সেই সব রমণীয় গুণের ভাণ্ডার তার আছে। স্বামী রণো-র (টোটা রায়চৌধুরী) বড় আদরণীয় সে। এক গাড়ি দুর্ঘটনাই ফাটল ধরাল তার সাজানো বাগানের প্রাচীরে। এক নারীর মাত্র এক রাতের কয়েক ঘণ্টার অন্তর্ধান কীভাবে বদলে দিল, দাঁত নখ বের করে দিল পরিবার নামের এক সুরক্ষাবলয়ের। যে বলয়ের মধ্যে একটি মেয়েকে সমাজই ঠেলে রাখে। বন্দিনী করে রাখে।

আপাতদৃষ্টিতে এক স্বামী-স্ত্রী সম্পর্কের গল্প। চৌকাঠের ক্যালিগ্রাফি-ও অনেকটা সহজ পাঠের ছবির সাদৃশ্য আছে। কাঠ খোদাই করে শিল্পকর্ম। এই সারল্যটাই চোখে পড়ে ছবি জুড়ে। বাহুল্যবর্জিত স্ক্রিপ্ট। এক কথায় লজিক্যাল। মেয়েদের ক্ষমতা অথবা না-পারা, কোনওটাকেই অযথা বেশি প্রাধান্য দেওয়া হয়নি। তবে, সবকিছু পেরিয়ে মিডিয়াকে একটু কালো পোঁচ দেওয়া হয়েছে। ইনভেস্টিগিটিভ জার্নালিস্টের চরিত্রে সায়নী বেশ স্মার্ট। টিভি চ্যানেলগুলোর ব্রেকিং নিউজের প্রতি আমরণ, অমানুষিক, আগ্রাসী খিদেটাকে বেশ বাঁকা চোখে দেখা হয়েছে।
দেবী নিজস্ব, একান্ত নিজস্ব একটি ডিসিশন নেয়। সামাজিক লজ্জা, প্রচুর বাঁকা প্রশ্নের মুখে মাথা না নুইয়ে। এর জন্য বড় মূল্য দেয় সে। যেটা অনেক মেয়েই মন থেকে পারবে না। নষ্ট করে দেয় আগামী সন্তানের ভ্রূণ। ভাল লাগবে টোটা-শ্রীলেখার টানাপড়েনের দৃশ্যগুলো। পরিণত অভিনয়ের ছোঁয়ায় অনেক বেশি বাস্তব। শ্রীলেখার অন্যতম সেরা অভিনয় হিসেবে নিশ্চয়ই লেখা থাকবে তাঁর কেরিয়ারগ্রাফে। কিছু কিছু জায়গায় তাঁর আন্ডারটোন অ্যাক্টিং সত্যিই স্টাডি করবার মতো।
গল্পটা খুব সহজ গতিতে এগিয়েছে। ন্যারেটিভের মারপ্যাঁচ নেই। কিন্তু ক্লাইম্যাক্সে সেই ধাক্কাটা কোথাও যেন উধাও মনে হয়। বড় স্ট্রং পয়েন্ট অবশ্যই প্রত্যেকের প্রাণঢালা অভিনয়। যে তালিকায় একজন শিশুশিল্পীও

 

.