দৃশ্যই দিক নির্দেশক, অনবদ্য অজয়!

Updated By: Jul 31, 2015, 05:22 PM IST
দৃশ্যই দিক নির্দেশক, অনবদ্য অজয়!

শর্মিলা মাইতি
ছবির নাম: দৃ্শ্যম
রেটিং: ****

অনেক জ্ঞানীগুণীজনই এখনকার জেনারেশনকে বলে থাকেন, ভিস্যুয়াল জেনারেশন। যারা বলে কম, কথা শোনার অভ্যাস কম কিন্তু ফোটো তোলার অভ্যেস বেশি। মুঠোফোনে ছবি তুলে অল্প কথায় সবাইকে জানানোর, দেখানোর আগ্রহেই মত্ত। এটার অবশ্য একটা মনস্তাত্ত্বিক ভিত্তিও আছে। সার সার ছবি হিউম্যান ব্রেনে অনেক বেশি স্থায়ী প্রভাব ফেলে। যে প্রভাব বইয়ের পাতার অক্ষরের যেকেও বেশি অভিঘাতসম্পন্ন। তাই, সিনেমা থেকেই সাধারণ মানুষ অনেক কিছু শেখে।
এই কটা লাইন লেখার মানে, দৃশ্যম ছবির স্বরবর্ণ লেখা। যে-টুকু জানলে এই ছবি দেখার আনন্দ অনেক বেশি বেড়ে য়াবে। বলিউডের ট্রেন্ড মেনে আবারও এক সাধারণ মানুষের অসাধারণত্বের গল্প। কিন্তু আ ওয়েডনেসডে, স্পেশাল ২৬ কিংবা চেন্নাই এক্সপ্রেসের চেয়ে ট্রিটমেন্টটা অনেক আলাদা। দৃশ্যম আসলে দূরদৃষ্টির সঙ্গে ক্ষমতার লড়াইয়ের কাহিনি। সীমিত ক্ষমতার সঙ্গে রাষ্ট্রের লড়াইয়ের কাহিনি। ছোট পরিবারের মূল্যবোধের সঙ্গে আইনের ধৃষ্টতার লড়াই। আর এই লড়াইয়ে, রক্তক্ষয় মেনে নিয়েও জয়ী কম ক্ষমতার। জয়, সাধারণ এক বাবার।
আবারও বলিউডে প্রমাণিত হল, দিকের মধ্যে দক্ষিণই শ্রেষ্ঠ। অবিশ্বাস্য, হাড়-হিম করা স্ক্রিপ্ট। চিত্রনাট্যকার উপেন্দ্র লিমায়ে এবং পরিচালক নিশিকান্ত কামাথের মধ্যে আন্ডারস্ট্যান্ডিংটা অনেকটাই সুখী পরিবারের মতো। অতিনাটকীয়তা-রহিত। সঙ্গে সঠিক সঙ্গত ক্যামেরা-ওয়ার্কের। নায়ক অজয় দেবগণের চোখ থেকে এক্সট্রিম ক্লোজ আপে ফ্ল্যাশব্যাকে পৌঁছে যাওয়ার দৃশ্যটা একটা উদাহরণ হিসেবে ধরা যেতে পারে অনেকগুলোর মধ্যে।

অজয় দেবগণ। আরও কত কী বিস্ময় বের হবে তাঁর ঝুলি থেকে কে জানে! এত গভীর এক অভিব্যক্তি নিয়ে থাকেন তিনি, যার তল মেলা ভার। এক কথায় বিরল। দীর্ঘ অভ্যাসের পর আসে। মাত্র এক সপ্তাহ আগে বজরঙ্গী-র চরিত্রে অভিনয় করে সলমন খান দেখিয়ে দিয়ে গিয়েছেন পাওয়ার অফ কমন ম্যান কাকে বলে। কাজেই, অজয়ের চোখের সামনে এখন ৪০০ কোটির পাহাড়প্রমাণ ল্যান্ডমার্ক। তিনিও পেয়েছেন তুরুপের তাস কমন ম্যানের চরিত্র। আরও একটু বিস্তৃত করলে, কমন ফ্যামিলিম্যান। হাম দো, হমারা দো। এই ছোট পরিবারের সংহতি কীভাবে এক অপ্রতিরোধ্য আইনের, রাষ্ট্রের মোকাবিলা করে, সেটাই দেখানো হল সারা ছবি। ১৬৩ মিনিটের লম্বা ছবি, যেন শেষ হল এক নিমেষে। রুদ্ধশ্বাস, গতিময়। বার বার দর্শককে প্রায় হ্যামলিনের বাঁশিওয়ালার মতো সমাধানসূত্রে পৌঁছে দিচ্ছে, দর্শক যখনই ভাবছেন উত্তরটা খুঁজে পেয়ে গিয়েছেন, ঠিক তখনই সব ভেঙেচুরে উঠে আসছে অন্য কোনও রহস্য। আবার জন্ম নিচ্ছে নতুন প্রশ্ন। এই খেলাটা আছে সারা ছবি জুড়ে। নিজের পরিবারকে বাঁচানোর জন্য এক কম-পড়াশোনা জানা বাবার আপ্রাণ, মরিয়া চেষ্টার কাছে পরাজিত হচ্ছে রাষ্ট্র। এই অসমশক্তির লড়াইয়ে লিলিপুটের জয়, দেখতেই হবে আপনাকে।

দুঁদে ডিআইজি-র চরিত্রে টাবু। অনেকদিন পর পর্দায় এক শক্তিশালী বুদ্ধিমতী একরোখা নারীচরিত্রে অপূর্ব লাগল তাব্বুকে। এই অভিনেত্রীই করেছিলেন চাঁদনী বার, নেমসেক-এর মতো কঠিন চরিত্র। বলিউডি ছবি যাকে ইউজ করতেই পারল না। ভাল লাগবে রজত কাপুরের অভিনয়ও। শ্রিয়া শরণও বেশ সুন্দর, সপ্রতিভ। ইশিতা দত্তও সঠিক সুযোগ পেলে নিজেকে প্রমাণ করে দেখাবেন, বোঝাই যায়।
এ ছবি দেখার আগে স্বরবণটা নিশ্চয়ই জেনে আগে তিনটে কথা মাথায় রাখবেন। এক, পড়াশুনোয় মাথা না থাকলে রাতের পর রাত জেগে সিনেমা দেখুন, নানা সমস্যার সমাধানসূত্র পাবেন। দুই, দোসরা অক্টোবর মানেই গাঁধীজির জন্মদিন, এমন চিরাচরিত ধারণাটায় একটু টুইস্ট আনুন, জীবনটাই বদলে যাবে। তিন, আপনার বাবার উপরে আরও একটু বিশ্বাস বাড়ান, অনেক অজানা বিপদ থেকে বেঁচে যাবেন।

 

.