হলে গিয়ে হতাশ নয়....

পূজা বসু ছবি-টু স্টেটস ***1/2

Updated By: Apr 21, 2014, 05:32 PM IST

পূজা বসু

ছবি-টু স্টেটস

***1/2

চেতন ভগতের `টু স্টেটস` উপন্যাস বহু আগে অনেকেই পড়ে ফেলেছেন। মাখোমাখো এমন কলেজ প্রেমের গল্প অনেকেই হয়তো রিলেট করে ফেলেছিলেন তাঁদের নিজেদের লাভ স্টোরির সঙ্গে। কিন্তু গল্পের মূল ফোকাস প্রেমে জাত-পাতের সংঘাত। আঠাশটি রাজ্য এবং সাত-সাতটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের এই দেশে এমন প্রেম কাহিনি তৈরি না হওয়াটাই অস্বাভাবিক! যাই হোক, এমন রিয়্যালিটি (লেখকের নিজের জীবনের গল্প) নিয়ে ছবি তৈরির কথা অনেক দিন ধরেই ভাবছিলেন পরিচালক করণ জোহর। কিন্তু কাস্টিং সমস্যায় পিছিয়ে যাচ্ছিল ছবিটি। অবশেষে অর্জুন, আলিয়া। ঝকঝকে দুটি মুখ। এক্কেবারে ফ্রেশ। আগের ছবি `হাইওয়ে`তেই আলিয়া বুঝিয়ে দিয়েছেন, সিনেমা তাঁর রক্তে। কিন্তু অর্জুনের জন্য সত্যিই একটা পরীক্ষা ছিল। ঠিক যেমন ছিল গল্পে কৃষ মলহোত্রার। কারণ, আগের যে ক`টা ছবি তিনি করেছেন, সব গুলোতেই তিনি অ্যাংরি ইয়ং ম্যান। প্রেমেও rough and tough...। তাই কৃষের মতো ভীরু অথচ লড়াকু প্রেমিক হয়ে উঠতে পারবেন তো অর্জুন? শুধু পেরেছেন বললে ভুল হবে, অনকটাই এক হয়ে গিয়েছেন চরিত্রের সঙ্গে। অনন্যার প্রেমে পড়েও তার-থেকে-দূরে-দূরে-থাকা-থেকে তাদের প্রথম চুমু। উপন্যাসটি পড়তে পড়তে এই কৃষই তো আপনার চোখের সামনে ভেসে উঠেছিল।
সাবলীল অভিনয় আলিয়ারও। বিশেষত, তাঁর মিষ্টি হাসি আর চোখে দুষ্টুমির ঝিলিক...। প্রেমে না পড়ে উপায় কী!

এ বার আসা যাক ছবির মূল পর্বে। কথায় বলে, পোলস অ্যাপার্ট। তা হলে উত্তর এবং দক্ষিণ ভারত মিলবে কী ভাবে। সেখানেই এসে পড়লেন পাত্র-পাত্রী, বাবা-মায়েরা। লাউড পাঞ্জাবি মায়ের চরিত্রে অমৃতা সিং বেশ মানানসই। ছেলের প্রতি তাঁর ভালবাসা হোক বা ছেলের গার্ল ফ্রেন্ডকে নিয়ে অমৃতার রিঅ্যাকশন, বেশ মজাদার। একই সঙ্গে স্বামীর সঙ্গে তাঁর তিক্ত কেমিস্ট্রিটাও ভালভাবেই ফুটিয়েছেন অমৃতা। আর কৃষের বাবার চরিত্রে রণিত রায়কে দেখলে `উড়ান` ছবিটির কথা বারবার মনে পড়বে। মিস্টার এন্ড মিসেস স্বামীনাথন হিসেবে রেবতী এবং শিবকুমার সুব্রহ্মণ্যম দারুণ। মেয়ের প্রেম এবং নাছোড়বান্দা মেয়ের প্রেমিকের কাছে শেষ পর্যন্ত হার মানতে হয় রেবতীকে। সমাজ নিয়ে নানা বাধা ঠেলে ফেলতে যে এখনও এই দেশে মেয়ের মায়েদের কেমন অনুভূতি হয়, রেবতীর এক্সপ্রেশনে বোঝা গিয়েছে ভালই। রেবতীর লিপে `সাথিয়া, ইয়ে তুনে কেয়া কিয়া` (সলমন রেবতীর ছবি `লাভ`-এর গান) শুনলে একটু নস্টালজিক লাগবে। ধন্যবাদ অভিষেক বর্মণকে, ছবিটি পরিচালনার জন্য। কৃষ-অনন্যার কলেজ-প্রেম কোন কোন পথ ধরে বিয়েতে পরিণত হয়, সেটা বইয়ের পাতা থেকে বড় পর্দায় সফল ভাবেই তুলে এনেছেন তিনি। রিস্ক তো একটা ছিলই। উপন্যাসটি এতটাই জনপ্রিয় যে,
উনিশ-বিশ হলে কেউ কি অভিষেককে ছেড়ে দিতেন? চেতন ভগত্ মহাশয় নিশ্চয়ই আনন্দ আর ধরে রাখতে পারছেন না। একে তো নিজের প্রেম কাহিনি লার্জ ক্যানভসে দেখা, আর তাতে শঙ্কর-এহসান-লয়ের মনভরানো মিউজিক। ছবির এডিটিং খুব মসৃণ। নম্রতা রাও তাঁর ছাপ রেখেছেন এই ছবিতেও। বিশেষ করে `ওফ-ও` গানটির মধ্যেই অনেকটা সময়, অনেক গুলো পার্বণ এবং ঋতু পরিবর্তন বুঝিয়েছেন কোরিওগ্রাফার। তার জন্য অবশ্যই পরিচালক এবং সম্পাদক নম্রতার কাজ প্রশংসনীয়। আর যাকে ছাড়া টু স্টেটসের সেই এসেন্স পাওয়াটা মুশকিল ছিল তিনি অবশ্য বিনোদ প্রধান। বিনোদের ক্যামেরার কাজ অনবদ্য। ছবির দ্বিতীয়ার্ধ কিছুটা অহেতুক টানা হয়েছে বলে মনে হতেই পারে। তবে অর্জুন কাপুর এবং মনীষ মলহোত্রার পোশাকে আলিয়াকে দেখতে দেখতে সময়টা ভালই কেটে যাবে। প্রেম মানেই যে সুইত্‍জারল্যান্ড বা শিফন বা মিনি ড্রেসের প্রয়োজন নেই, টু স্টেটসের প্রেম কাহিনি তারই প্রমাণ। আর সব শেষে বলতেই হচ্ছে যে, করণ জোহরের ছবি মানেই তো এক ধরনের সেলিব্রেশন। এটাও তাই। প্রেমের সেলিব্রেশন! ভোটের উত্তাপ আর আইপিএলের বাজারে, সময় করে অবশ্যই বড় পর্দায় দেখে আসুন `টু স্টেটস`, মাথাটা হাল্কা হবে।

.