খাজিয়ারে খুনসুটি

`দোহাই তোদের একটুকু চুপ কর, ভালবাসিবারে দে আমারে অবসর...` ডালহৌসি থেকে ২৩ কিলোমিটার এবং কালাতোপ থেকে ১৩ কিলোমিটার দুরে অবস্থিত ভারতের সেই মিনি সুইজারল্যান্ড, খাজিয়ার। ভারতবর্ষের ঊষ্ণ রোমান্টিকতা ঘেরা এক নন্দন কানন।

Updated By: Oct 7, 2012, 09:03 PM IST

`দোহাই তোদের একটুকু চুপ কর, ভালবাসিবারে দে আমারে অবসর...` ডালহৌসি থেকে ২৩ কিলোমিটার এবং কালাতোপ থেকে ১৩ কিলোমিটার দুরে অবস্থিত ভারতের সেই মিনি সুইজারল্যান্ড, খাজিয়ার। ভারতবর্ষের ঊষ্ণ রোমান্টিকতা ঘেরা এক নন্দন কানন।
সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে বেশ অনেকখানি উপরে এই অপরূপ অরণ্য ঘেরা অঞ্চলকে অনেকে হিমাচল প্রদেশের গুলমার্গও বলেন। নানান রঙা সবুজ তৃণভূমি ঘিরে দাঁড়িয়ে আছে পাইনের ঘন সারি। তৃণভূমির ঠিক মাঝখানে এক ছোট্ট লেক। তাতে এক ভাসমান দ্বীপ। খাজিয়ারের দৃশ্যপট ফটোগ্রাফারদের স্বর্গ। নববিবাহিতদের বাঙ্ময় হয়ে ওঠা অধরের একলা শ্রোতা।
লেক থেকে কিছুটা দুরে দ্বাদশ শতাব্দীর খাজি নাগের মন্দির। মন্দিরের দেওয়াল ও ছাদের গায়ে কুরুক্ষেত্র যুদ্ধে জয়ী পাণ্ডব এবং বিজিত কৌরবদের ছবি খোদাই করা। কাঠ দিয়ে অপূর্ব খোদাই করা মন্দিরের বহির্ভাগ।
একটি গল্ফ কোর্সও আছে। তবে রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে বেশ জীর্ণ। তবে প্রিয় মানুষটির চোখে চোখ রেখে সময় কাটানোর জন্য আইডিয়াল লেকের চারপাশ ধরে অথবা ঘন পাইন বনের ভেতর দিয়ে হাঁটা। যদি একটু অ্যাডভেঞ্চার প্রিয় হন, তাহলে পাইন বনের আরও গভিরে যান ঘোড়ায় চরে।
এই ফাঁক যাঁরা সুইজারল্যান্ডের মধুচন্দ্রিমা মিস করলেন বলে আফশোষ করছেন, তাঁদের জন্য কয়েকটা তথ্য দিয়ে রাখা ভাল। সুইজারল্যান্ডের সঙ্গে খাজিয়ারের সদৃশের আলঙ্কারিক তকমা পরে ১৯৯২ সালে। ওই বছর জুলাইতে ভারতবর্ষে সুইস চ্যান্সারী প্রধান উইলি টি ব্লেজার খাজিয়ার দেখে বলেছিলেন `মিনি সুইজারল্যান্ড`। তিনি খাজিয়ারের রাস্তায় সুইস ভ্রমণের ছবি সম্বলিত একটি সাইনবোর্ড-ও টাঙিয়ে দেন। যেখানে নির্দেশ করা ছিল খাজিয়ার থেকে সুইজারল্যান্ডের রাজধানী বার্নের দূরত্ব ৬১৯৪ কিলোমিটার। পৃথিবীর ১৬০ খানা অঞ্চলের মধ্যে খাজিয়ার একটা যার সঙ্গে সুইজারল্যান্ডের ভৌগোলিক মিল লক্ষ্য করা যায়। ব্লেজার, খাজিয়ার থেকে একটি পাথরও নিয়ে গেছিলেন নিজের দেশে। যা পরে ব্যবহৃত হয়েছিল সুইজ পার্লামেন্ট তৈরিতে, মিনি সুইজারল্যান্ডের প্রতীক হিসেবে।
কোথায় থাকবেন: খাজিয়ারে একটু টুরিজম হোটেল এবং কয়েকটি কটেজ আছে টুরিস্টদের থাকবার জন্য। এছাড়া পি ডবলিউ ডি ও বনবিভাগের দুখানা রেস্ট হাউস-ও আছে । সম্প্রতি গড়ে উঠেছে কয়েকটি প্রাইভেট হোটেল। খাজিয়ার যাবার বাস সার্ভিস সীমিত, এবং বাসের সময় মাঝে মাঝেই স্থানীয় চাহিদার ওপর ভিত্তি করে বদল হয়।
কী ভাবে জাবেন: ট্রেনে যেতে চাইলে দিল্লি থেকে পাঠানকোটের ট্রেন ধরুন। যেতে মোটামুটি ১০ ঘণ্টা লাগবে। পাঠানকোট থেকে গাড়ি ভাড়া করলে ২/৩ ঘণ্টায় চলে যাওয়া যাবে ডালহৌসি। ডালহৌসি খাজিয়ার ঘণ্টা খানেকের রাস্তা। এছাড়া পাঠানকোট থেকে ঘন ঘন বাস-ও ছাড়ে ডালহৌসির দিকে। প্লেনে যেতে চাইলে পাঠানকোট এয়ারপোর্টে নামতে হবে। তবে সাবধান, শীতকালে ঘন কুয়াশার জন্য মাঝেমাঝেই প্লেন ক্যানসেল হয়। পাঠানকোট থেকে খাজিয়ারের বাস-ও আছে, তবে বাস সার্ভিস খুব নিয়মিত নয়, এবং সময়-ও মাঝে মাঝেই অদল বদল হয়।

.