কিরণ বেদীর সংস্থা ছাড়লেন ট্র্যাভেল এজেন্ট অনিল

ফের বড়সড় ধাক্কা খেল টিম আন্নার দুর্নীতিবিরোধী 'সংগ্রাম'। মঙ্গলবার বিমানভাড়া কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্ত প্রাক্তন আইপিএস অফিসার কিরণ বেদীর এনজিও ইন্ডিয়া ভিশন ফাউন্ডেশনের অছি পরিষদ থেকে পদত্যাগ করলেন সংগঠনের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সদস্য অনিল বাল।

Updated By: Oct 20, 2011, 04:35 PM IST

ফের বড়সড় ধাক্কা খেল টিম আন্নার দুর্নীতিবিরোধী 'সংগ্রাম'। মঙ্গলবার বিমানভাড়া কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্ত প্রাক্তন আইপিএস অফিসার কিরণ বেদীর এনজিও ইন্ডিয়া ভিশন ফাউন্ডেশনের অছি পরিষদ থেকে পদত্যাগ করলেন সংগঠনের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সদস্য অনিল বাল। শুধু ইন্ডিয়া ভিশন ফাউন্ডেশনের কর্মকর্তাই নয়, টিম আন্নার অন্যতম সদস্য কিরণ বেদীর ভ্রমণ সংক্রান্ত যাবতীয় দায়িত্ব ন্যস্ত ছিল অনিলের উপর।
পেশায় ট্র্যাভেল এজেন্ট অনিলের মালিকানাধীন সংস্থা 'ফ্লাইওয়েল ট্র্যাভেল'-এর নাম কিরণ বেদীর সাম্প্রতিক বিমান ভাড়া কেলেঙ্কারিতে উঠে আসায় যথেষ্ট বিপাকে পড়েছিলেন তিনি। মঙ্গলবার ইন্ডিয়া ভিশন ফাউন্ডেশনের ট্রাস্টি বোর্ড থেকে ইস্তফার সিদ্ধান্ত ঘোষণার পর মিডিয়ার মুখোমুখি হয়ে অনিল বলেন, কলঙ্ক থেকে অব্যাহতি পেতে এবং নিজের সুনামের প্রতি সুবিচার করার জন্যই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি।
দুর্নীতিমুক্ত ভারত গড়ার প্রচারে টিম আন্নার অন্যতম মুখ কিরণ বেদীর বিরুদ্ধে সম্প্রতি বিমান ভাড়ায় কারচুপির অভিযোগ ওঠে। বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও স্বেচ্ছাসেবী সংস্থায় আমন্ত্রণে দেশের একপ্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে গিয়ে দুর্নীতিমুক্ত দেশ গড়ার পক্ষে প্রচার চালান এই প্রাক্তন আইপিএস অফিসার। অভিযোগ, এই প্রচারের সময় আয়োজক সংস্থাগুলির থেকে বাড়তি বিমান ভাড়া নিয়েছেন তিনি। চলতি বছরের ২৯ সেপ্টেম্বর এয়ার ইন্ডিয়ার এআই ৫০৬ বিমানে দিল্লি থেকে হায়দরাবাদ যান কিরণ বেদী। তারপর হায়দরাবাদ থেকে চেন্নাই যান এআই ৫৪৬ বিমানে। পরের দিন দিল্লি ফেরেন এআই ৫৩৯ বিমানে। এই সফরের জন্য এয়ার ইন্ডিয়াকে ভাড়া বাবদ তিনি দেন ১৭,১৩৪ টাকা। কিন্তু, যে সংস্থাগুলির জন্য তাঁর এই সফর, তাদের কাছে বিমান ভাড়া বাবদ তাঁর খরচ দেখান ৭৩,১১৭ টাকা। অর্থাত্‍ একটি সফরেই বিমান ভাড়া বাবদ গরমিলের অঙ্ক প্রায় ৫৬,০০০ টাকা। শুধু একটি সফরেই নয়, প্রমাণ মিলেছে কিরণ বেদী একাধিক বিমান ভাড়ার ক্ষেত্রে কারচুপি করেছেন। যার শুরু ২০০৬-এর ১২ মে থেকে। ওই দিন তিনি দিল্লি থেকে মুম্বই যান আইসি ৮৬৩ বিমানে। ফেরত আসেন আইসি ৮৬৬ বিমানে। সেসময় যাতায়াত মিলিয়ে তিনি দেন ৫,৭৩৩ টাকা। কিন্তু, যে স্যোশাল লিগাল ইনফরমেশন সেন্টারের হয়ে তাঁর সফর ছিল, তাদের কাছ থেকে বিমান ভাড়া হিসাবে নেন ১৮,০৮৫ টাকা।
উল্লেখ্য, কিরণ বেদী আইপিএস থাকাকালীন ভারত সরকারের শৌর্য পদক পান। ভারত সরকারের নিয়ম অনুযায়ী শৌর্য পদক বিজয়ীরা এয়ার ইন্ডিয়ার বিমান ভাড়ায় ৭৫ শতাংশ ছাড় পান। ২০০৬ সাল থেকেই সেই সুযোগের সদ্ব্যবহার করে বিমানে ভ্রমণ করেছেন কিরণ বেদী। শৌর্য-সুবিধা নিয়ে ইকনমি ক্লাসের উড়ানে চড়লেও, যে সমস্ত সংস্থার আমন্ত্রণে সফর করেছেন তাদের কাছ থেকে বিমানের বিজনেস ক্লাসের পুরো ভাড়া আদায় করেছেন তিনি।
এর আগে প্রশান্ত ভূষণ, অরবিন্দ কেজরিওয়াল এমনকী খোদ আন্না হাজারের ট্রাস্টের বিরুদ্ধে এর আগে আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। কিরণ বেদীর ঘটনা সামনে আসার পর স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন ওঠে, যাঁদের ব্যক্তিগত জীবনে স্বচ্ছতার অভাব রয়েছে তাঁদের পক্ষে কি দুর্নীতিমুক্ত ভারত গড়ার প্রচারক হওয়া সম্ভব। মারাত্মক এই অভিযোগের মুখে পড়ে প্রথমে কিরণ বেদী জানান, তিনি বাড়তি টাকা নিয়েছেন তাঁর নিজের স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ইন্ডিয়া ভিশন ফাউন্ডেশনের জন্য। কিন্তু পরিস্থিতি আরও ঘোরাল হয়ে ওঠায় সোমবার বিমানভাড়া বাবদ নেওয়া অতিরিক্ত টাকা আয়োজক সংস্থাগুলিকে ফিরিয়ে দেওয়ার কথা ঘোষণা করেন প্রাক্তন আইপিএস অফিসার। ইতিমধ্যেই কংগ্রেসের তরফে কিরণ বেদীর বিরুদ্ধে সরাসরি দুর্নীতির অভিযোগ তোলা হয়েছে। এবার অনিলের পদত্যাগ তাঁকে আরও বিড়ম্বনায় ফেলল। আর সেই সঙ্গে আবার প্রশ্ন উঠল, টিম আন্নার সদস্যদের ব্যক্তিগত সততা নিয়ে।

.