টেক ওয়ান এন জি

টেক ওয়ান এন জি শর্মিলা মাইতি ছবির নামঃ টেক ওয়ান রেটিংঃ *1/2

Updated By: Apr 26, 2014, 08:39 PM IST

টেক ওয়ান এন জি
শর্মিলা মাইতি
ছবির নামঃ টেক ওয়ান
রেটিংঃ *1/2
বেশ ঢাউস ঢাউস শব্দসম্ভার বসিয়ে শুরু করেছিলেন পরিচালক মৈনাক।
নারীসত্তাকে বেদিতে বসিয়ে, পুজো-আচ্চা করে। যাঁরা রামায়ণ-মহাভারত
পড়েননি, তাঁদেরও যে এ-ছবি দেখতে আসবার অধিকার আছে, তা তিনি প্রথমেই
ইংরিজিতে বুঝিয়ে দিলেন. পাকাপোক্ত স্ট্র্যাটেজি। আশ্চর্যের কিছু নেই, বরং
প্রশংসার্হ। যে-ছবির পাবলিসিটি হয় শুটিং শুরুর আগে থেকেই নায়িকার ফুল
ফ্রন্টাল ন্যুডিটি-র “প্রমিস” দিয়ে, প্রবল ডেসিবেলে ঢাক পিটিয়ে নগ্ন
হওয়ার নেপথ্যকাহিনি ছাপা হয়, তাতে করে রামায়ণ-মহাভারত না-পড়া দর্শকের
প্রত্যাশা তো খানিক ছিলই। ট্যাঁশ দর্শক তো হিপোক্রিট, ডাউনলোড করেই
দেখবেন বলে গরমে বাড়িতে বসে থাকেন, লয়্যাল দর্শককে আসতেই হবে, তাঁদের
জন্য স্ক্রিনজুড়ে সব দেখানো জরুরি বইকী!
সে যাই হোক। গুড ফ্রাইডে রিলিজ। শহর-জুড়ে ল্যাম্পপোস্টে যিশু হয়ে ঝুলছেন
নায়িকা। তাঁর ভাগ্য ও অধিকার নিয়েও বেশ ক-লাইন সাব-হেড। আবারও এই
দুর্ধর্ষ স্ট্র্যাটেজির প্রশংসা না করে পারা গেল না। হাইপ তোলার এমন নতুন
কায়দাকানুন সত্যি কী বিচিত্র! ছবির প্রোমো, সে-ও বুদ্ধি খাটিয়ে বানানো।
প্রোমোর ভেতরেই আধখানা শটেই মাংসের টুকরো ঝুলিয়ে দেওয়া হল। ঝাঁ-ঝাঁ
রোদ্দুরেও যাতে প্রত্যাশার পারদে আঁচ না ফেলে!
ছবিতে আসি। মোড়কের চাকচিক্যের ভেতরে কী পেলাম। না, অভিনেত্রীর এক স্লাইস
জীবনপাতা। অন্য নায়িকারা সাহস করে বলেন, নগ্ন হব, কুছ পরোয়া নেই. দোয়েল
মিত্র, পরোয়া না করে, “করে” দেখালেন. বাঙালি অভিনেত্রী, বাড়ির বউ, সমাজ,
প্রেস, টলিউডের গুনগুনানি, সব কটা তরোয়ালের ফলা উঁচিয়ে উঠল। বাস্তবে
নায়িকা পাওলি দাম যে সাহস করেছিলেন, সেটাই পর্দায় রিক্রিয়েট করবেন বলে
কথা দিয়েছিলেন নায়িকা। শুধু কথা দিয়েই ক্ষান্ত হননি, কখনও আবার মুখে
লিউকোপ্লাস্ট সাঁটিয়ে, হাত-পা দড়ি দিয়ে বেঁধে ফোটোশুট করে বোধহয় বোঝাতে
চাইলেন আমরা মেয়েরা কতখানি নিরানন্দে আছি। যতটা গর্জালেন, ততটা বর্ষাতে
পারলেন কি? আদতে দর্শক ‘দূরদর্শন’ দেখল। ফুল ফ্রন্টাল ন্যুডিটির দৃশ্যে
“বিশেষ বডি পার্টস” ঝাপসা করেই দেখানো হল শেষমেশ। গোটাটা স্বস্তিকাকে
ভিতু বলে দুষলে হবে না, এটা পরিচালকের কল হতে পারে, অথবা হতে পারে সেন্সর
বোর্ডের ফাইন্যাল অ্যাডভাইস। মোট কথা, যেটা দেখানো হল, তার জন্য ব্রেভারি
অ্যাওয়ার্ড ক্যাটাগরিতে ফার্স্ট রাউন্ডেই বেরিয়ে যেতে হবে। সাহস
ব্যাপারটাতে প্রথমেই “সাবধান বিপজ্জনক বাড়ি”-র নোটিশ পড়ে গেল।
জীবন আর সিনেমা এক নয়, জননী। পাওলি দাম যেটা “করতে” পেরেছিলেন প্রচারের
তুঙ্গে থেকে, একফালি সেই দৃশ্যের গুণগত মান যাই-ই হোক, যতটাই
দুর্ভাগ্যজনক হোক রিলিজ না-করা ছবির লিক-হয়ে-যাওয়া ক্লিপিং, বাস্তবের
কঠিন সমালোচনার তিরের রক্তক্ষরণও সামলেছিলেন। ছিলেন তো? দ্বিচারণ তো
করেননি?
বাকি কাহিনি স্বস্তিকার কমফর্ট জোন। তিনি যে-ভঙ্গিমায় চলেন, বলেন, কতকটা
সেইরকমই। ভূতের ভবিষ্যত্‍ ছবির কদলীবালার মতো খুব বেশি
এক্সপেরিমেন্টেশনের জায়গা নেই, বরং বাস্তবের রোল-প্লে করার সুযোগ বেশি।
মা-মেয়ের কাহিনি। মেয়ের চরিত্রে তাঁর নিজেরই কন্যা অন্বেষা। তাঁদের
কথোপকথনের দৃশ্যগুলো খুবই প্রাণবন্ত। বড় সুন্দর টিউনিং। শিশুশিল্পী
হিসেবে চমকে দিলেন অন্বেষা, কখনও মায়ের থেকেও কয়েক ধাপ উঁচুতে গিয়ে।
স্বস্তিকার নো-মেকআপ লুকও খুবই মানানসই। অনেকগুলো অভিব্যক্তি ফুটে ওঠে
সহজে। পর্ন ফিল্মে ডাক পাওয়ার মোবাইল কলেও তাঁর এক্সপ্রেশন দারুণ। তবে
কতকগুলো হোঁচট তাঁর ব্যক্তিত্বের জায়গাটা গুলিয়ে দিল। যে-নারী অভিনেত্রী
হিসেবে এত বড় পদক্ষেপ নিতে পারেন, তিনি শাশুড়ির কাছে, বয়ফ্রেন্ডের কাছে
এত বেশি নুয়ে পড়েন কীভাবে? অভিনেত্রী মানেই কী ডিপ্রেশন কাটানোর জন্য
একটানা মদ-সিগারেট? বার বারই একইরকম কান্নায় ভেঙে পড়া? একঘেয়ে লাগে।
পার্টির দৃশ্যে তাঁর ফ্রাস্ট্রেশন ভেন্টিলেশনের অভিনয়টা স্বতঃস্ফূর্ত।
বলিষ্ঠ নয়। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি অনেক ঝড়ঝাপটা পেরিয়েছেন। পর্দায় আর
একটু মডিউলেশন দরকার ছিল নিশ্চয়ই। সেটা পাওয়া গেল না।
চিত্রনাট্যের শ্লথগতিও একটা কারণ। মৈনাককে মনে হল বেশ ভয়ে ভয়ে পরিচালনা
করেছেন। কোনও পর্বেই কোনও ড্রামা ক্রিয়েট করতে পারেননি। মিডিয়া, যা এই
গোটা ছবিতে ছায়ার মতো ভূমিকা নেয়, তার চেহারা এত এলেবেলে? যে-সাংবাদিককে
দোয়েল মিত্র-র ইন্টারভিউ নেওয়ার দায়িত্ব প্রত্যর্পিত, তাকে এমন নড়বড়ে
মদ্যপ করে দেখানো হয়? শুধু কী তাই, কনফারেন্স রুমের হোয়াইট বোর্ডে
ব্রেকিং নিউজ হেডিং! তার তলায় অবান্তর কিছু খবর বসানো! এক বিখ্যাত
সাংবাদিকের টক শোয়ে সেট এত সাধারণ, আর লাইটিং এত ম্যাড়মেড়ে যে কেবল
চ্যানেলগুলোর কাছ থেকেও টিপস নিতে হবে।
দোয়েল মিত্র একটি ইন্টারন্যাশনাল ফেস্টিভ্যালে বেস্ট অ্যাকট্রেস
অ্যাওয়ার্ড পাচ্ছেন। মুহূর্তে বদলে যাচ্ছে ছবিটা। মিডিয়া বলছে, যেমনটা
মিডিয়াকে খাওয়ানো হয়, এই প্রথম কোনও ভারতীয় অভিনেত্রী আন্তর্জাতিক
পুরস্কার পাচ্ছেন। নাঃ, এখানেও হজম হল না। কোন ফেস্টিভ্যাল? কী
অ্যাওয়ার্ড? সারা পৃথিবীতে ২৫০-এরও বেশি ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল আছে। যদি এর
বাস্তব কানেকশনটা ধরে নেওয়া যায় কিউ-এর ছবি গাণ্ডু-তে ঋ-র সাফল্যকে (
কারলোভি ভ্যারি ফেস্টিভ্যালে তিনি বেস্ট অ্যাকট্রেস অ্যাওয়ার্ড
পেয়েছিলেন। এই ফেস্টিভ্যাল বিশ্বের অন্যতম কুলীন। গান্ডু একটি
আন্ডারগ্রাউন্ড ছবি), তবে এই বদলে যাওয়া ছবিটা আকস্মিক ও অতিনাটকীয়। ঋ-এর
সাফল্য নিয়ে এত মারমার-কাটকাট হয়নি বাস্তবে। দুর্ভাগ্য। পরিচালকের অবগতির
জন্য বলি,”এই প্রথম ভারতীয় অভিনেত্রী” দুম করে এমন স্টেটমেন্টটা ছবির
গুরুত্ব অনেকখানি কমিয়ে দেয়। একশ বছরের ইতিহাসে বহু ভারতীয় অভিনেত্রীই
আন্তর্জাতিক আঙিনায় পুরস্কৃত হয়েছেন। ছবিতে নগ্নতা থাকুক বা না থাকুক।
হাতে রইল পেনসিল। ফুল ফ্রন্টাল ন্যুডিটি। যেটা এ ছবিতে একইসঙ্গে লোক-টানা
আর ইন্টেলেকচুয়াল টাচ হিসেবে প্রচারিত হয়েছে। আচ্ছা বলুন তো, কেট
উইন্সলেটকে কি “দ্য রিডার” ছবির প্রচারের জন্য ঢাক পিটিয়ে বলতে হয়েছিল কি
যে নগ্নদৃশ্য আছে? পশ্চিম ছেড়ে দিন, ফুল ফ্রণ্টাল ন্যুডিটি, রাজ কপূরের
মন্দাকিনী, জিনাত আমন-দের আমলেই ভারতীয় ছবিতে স্বমহিমায় আছেন। শৃঙ্গাররসে
টইটম্বুর হয়ে। নয়নাভিরাম সে-দৃশ্যে যৌবন মজে আছে যুগের পর যুগ। ইউটিউব
জেনারেশনেও ম্লান হয়নি সে দৃশ্যসুখ।
সাহস থাকলে “বাংলায়” বলুন না! কিন্তু সাহসটা শেষ অবধি করবার সত্সাহস রাখুন প্লিজ!

.