স্বাধীনতা দিবসে উদযাপনেও পরিবর্তন, কেন্দ্রের সমালোচনায় মুখর মুখ্যমন্ত্রী

এবছরই প্রথমবার রেড রোডে বর্ণাঢ্য কুচকাওয়াজের মধ্যে দিয়ে স্বাধীনতা দিবস উদযাপন করল রাজ্য সরকার। স্বাধীনতার ৬৬ বছরের ইতিহাসে এই প্রথম সরকারি উদ্যোগে স্বাধীনতা দিবস পালিত হল ভারতের কোন অঙ্গরাজ্যে। ৭৮ লক্ষ টাকা ব্যয়ে জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠানের নেতৃত্বে সেনবাহিনীর বদলে ছিল রাজ্য পুলিস। রাজ্যপালের বদলে গার্ড অফ অনার নিলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

Updated By: Aug 15, 2012, 11:44 AM IST

এবছরই প্রথমবার রেড রোডে বর্ণাঢ্য কুচকাওয়াজের মধ্যে দিয়ে স্বাধীনতা দিবস উদযাপন করল রাজ্য সরকার। স্বাধীনতার ৬৬ বছরের ইতিহাসে এই প্রথম সরকারি উদ্যোগে স্বাধীনতা দিবস পালিত হল ভারতের কোন অঙ্গরাজ্যে। ৭৮ লক্ষ টাকা ব্যয়ে জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠানের নেতৃত্বে সেনবাহিনীর বদলে ছিল রাজ্য পুলিস। রাজ্যপালের বদলে গার্ড অফ অনার নিলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এদিন পায়ে হেঁটে মেয়ো রোড অনুষ্ঠান মঞ্চে পৌঁছন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখানে পতাকা উত্তোলনের পর মুখ্যমন্ত্রী রাজ্য পুলিস কর্মীদের অভিবাদন গ্রহণ করেন। তবে আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ পাননি কোন স্বাধীনতা সংগ্রামী বা তাঁদের পরিবারের সদস্যরা। আমন্ত্রণ জানানো হয়নি রাজ্যের বিরোধী দলগুলিও। সবকিছু মিলিয়ে এবারের স্বাধীনতা দিবসের চিত্রটা ছিল প্রচলিত প্রথার থেকে একেবারে আলাদা।
অন্যদিকে প্রতিবারের মতো এবারও মধ্যরাতে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে স্বাধীনতা দিবস পালন করেছে তৃণমূল কংগ্রেস। হাজরায় এই উপলক্ষ্যে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাণীকুঠিতেও মধ্যরাতে দলীয় পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে স্বাধীনতা দিবসের সূচনা করা হয় তৃণমূল কংগ্রেসের তরফে। সেখানে জাতীয় পতাকা তোলেন তৃণমূল কংগ্রেস বিধায়ক অরূপ বিশ্বাস। স্বাধীনতা দিবসে রাজ্যবাসীর উদ্দেশে ভাষণেও কেন্দ্রের বিরুদ্ধে তোপ দাগলেন মুখ্যমন্ত্রী। সারের দাম বৃদ্ধির জন্য সরাসরি কেন্দ্রীয় সরকারকে দায়ী করেছেন তিনি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভিযোগ, কেন্দ্রই সারের দাম বাড়িয়েছে। রাজ্য তত্পর হলেও, কেন্দ্রীয় সরকার বিপিএল কার্ডের কাজ শুরু করতে পারেনি বলে অভিযোগ করেন তিনি। জাতীয় সড়কের সংস্কার এবং উন্নয়ন নিয়েও কেন্দ্রের বিরুদ্ধে উদাসীনতার অভিযোগ তুলেছেন মুখ্যমন্ত্রী। সেইসেঙ্গেই রাজ্যের গরিব মানুষের জন্য গত একবছরে অনেক কাজ করেছে তাঁর সরকার বলেও দাবি করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, কৃষকদের জন্য ক্রেডিট কার্ড, শস্যবিমা থেকে প্রান্তিক মানুষের জন্য সামাজিক মুক্তি কার্ড। সব কাজই সাফল্যের সঙ্গে করেছে তাঁর সরকার।  
গত একবছরে সরকারি এবং বেসরকারি ক্ষেত্রে তিন লক্ষ করে কর্ম সংস্থান হয়েছে। স্বাধীনতা দিবসের ভাষণে এমনই দাবি করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। একই সঙ্গে, আগামিদিনে এমপ্লয়মেন্ট ব্যাঙ্ক তৈরি করা হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি। সেইসঙ্গেই বন্দি মুক্তির দাবির আড়ালে রাজ্যে হিংসাত্মক কাজে মদত দিচ্ছে কয়েকটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন বলেও মন্তব্য করেছেম তিনি। তাঁর হুঁশিয়ারি, প্রকাশ্যে বন্দি মুক্তির কথা বলে আড়ালে খুনের রাজনীতি বরদাস্ত করবে না রাজ্য সরকার। মহাকরণে বসে নয়, প্রশাসনে গতি আনতে মহাকরণই পৌঁছে যাচ্ছে জেলায় জেলায় বলেও দাবি মুখ্যমন্ত্রীর। এভাবেই প্রশাসনকে তৃণমূলস্তরে পৌঁছে দিয়েছে তাঁর সরকার।সরব হয়েছেন বনধের বিরোধিতায়ও। রাজ্যে কর্মসংস্কৃতি ফেরাতে হলে বনধের পথ থেকে সরে আসতে হবে। একই সঙ্গে, অন্যায়ের সামনে মাথা নত না করারও আহ্বান জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।

স্বাধীনতা দিবসের ভাষণেও আমরা ওরার ব্যবধান ঘোচাতে পারলেন না মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সরকারের উন্নয়নের খতিয়ান তুলে ধরতে গিয়ে বারবারই তাঁর বক্তব্যে উঠে এসেছে পূর্বতন সরকারের কাজের প্রসঙ্গ। স্বাধীনতা দিবসে প্রধানমন্ত্রী বা কোনও মুখ্যমন্ত্রীর ভাষণে সাধারণত দলীয় প্রসঙ্গ স্থান করে নেয় না। গুরুত্ব দেওয়া হয় সংহতি এবং ঐক্যেই। কিন্তু, রাজ্যবাসীর উদ্দেশে মুখ্যমন্ত্রীর ভাষণে কিছুটা হলেও চিড় ধরল সেই ঐতিহ্যে। ভাষণে রাজ্যে পালাবদলকে দ্বিতীয় স্বাধীনতা অর্জন বলেও উল্লেখ করেন মুখ্যমন্ত্রী। আইন-শৃঙ্খলা ইস্যুতে বামেদের পাল্টা সমালোচনার পথে হেঁটেছেন তিনি। তিনি বলেন, পূর্বতন সরকারের আমলে থানায় ডায়েরি নেওয়া হোত না। তাই কোনও অপরাধ হলে সাধারণ মানুষ জানতে পারতেন না। মুখ্যমন্ত্রীর দাবি, তাঁদের জমানায় থানায় ডায়েরি নিচ্ছে পুলিস। সেকারণেই বিভিন্ন অভিযোগ প্রকাশ্যে আসছে বলে দাবি করেন মুখ্যমন্ত্রী।
রাজ্যের শিল্প মানচিত্রে বিনিয়োগের হার যথেষ্টই আশাব্যঞ্জক বলে জানালেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ইতিমধ্যেই এরাজ্যে শিল্পে এক লক্ষ কোটি টাকা বিনিয়োগ হয়েছে। বেশকিছু  প্রতিষ্ঠান একাধিক জেলায় দ্রুত তাদের কাজ শুরু করতে চলেছেন বলেও জানান মুখ্যমন্ত্রী। গ্রামের মানুষের জন্য তেত্রিশটি মাল্টি সুপার হাসপাতাল তৈরি করার প্রতিশ্রুতিও দেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নতুন সরকার হাসপাতালের শয্যা সংখ্যা বাড়ানোর বিষয়েও উদ্যোগী হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।

.