১৯৪৫ সালের পরেও নেতাজির বেঁচে থাকার ইঙ্গিত ফাইলে, যদিও নেই কোনও নির্দিষ্ট প্রমাণ

নেতাজি অন্তর্ধান রহস্যে আরও ধোঁয়াশা। তাইহোকু বিমান দুর্ঘটনায় তাঁর মৃত্যু হয়েছিল কিনা এ প্রশ্নের সর্বজনগ্রাহ্য উত্তর এখনও নেই। নেতাজি গবেষকদের একাংশের দাবি, ১৯৪৫ সালের  ১৮ অগাস্টের পরও তিনি বেঁচে ছিলেন। রাজ্য সরকারের ফাইলে এ সংক্রান্ত নানা নথি রয়েছে বলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন।   

Updated By: Sep 18, 2015, 10:25 PM IST
১৯৪৫ সালের পরেও নেতাজির বেঁচে থাকার ইঙ্গিত ফাইলে, যদিও নেই কোনও নির্দিষ্ট প্রমাণ

ব্যুরো: নেতাজি অন্তর্ধান রহস্যে আরও ধোঁয়াশা। তাইহোকু বিমান দুর্ঘটনায় তাঁর মৃত্যু হয়েছিল কিনা এ প্রশ্নের সর্বজনগ্রাহ্য উত্তর এখনও নেই। নেতাজি গবেষকদের একাংশের দাবি, ১৯৪৫ সালের  ১৮ অগাস্টের পরও তিনি বেঁচে ছিলেন। রাজ্য সরকারের ফাইলে এ সংক্রান্ত নানা নথি রয়েছে বলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন।   

১৯৪৫ সালের ১৮ অগাস্ট তাইহোকু বিমান দুর্ঘটনায় নেতাজির মৃত্যু হয়েছিল। স্বাধীনতার আগে ফিগেস কমিশন, স্বাধীনতার পর শাহনওয়াজ কমিটি ও খোসলা কমিশন এ কথা বললেও গবেষকদের অনেকেই তা মানতে চাননি। মুখার্জি কমিশনও বিমান দুর্ঘটনায় নেতাজির মৃত্যুর তত্ত্ব উড়িয়ে দিয়েছে।  শুক্রবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, উনিশশো পঁয়তাল্লিশের পর নেতাজির বেঁচে থাকার কথা উল্লেখ রয়েছে প্রকাশিত ফাইলে।

নেতাজির শেষ পরিণতি কী হয়েছিল তা নিয়ে সাধারণ মানুষের  কৌতুহলের যেমন শেষ নেই তেমনই গবেষকরাও দ্বিমত।

১৯৬৪ সালে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা অফিস অফ স্ট্র্যাটেজিক সার্ভিসের নথি বলছে, নেতাজি দেশে ফিরলে নেহরু সরকারের ওপর তার প্রভাব কী হবে তা নিয়ে তারা চিন্তিত। 

১৯৪৫ সালের ১৮ অগাস্ট কোনও বিমান দুর্ঘটনা হয়নি বলে মনোজ মুখার্জি কমিশনকে জানায় তাইওয়ান প্রশাসন।  

১৯৪৯ সালে নেতাজির দাদা শরত্‍ বসু নেশন পত্রিকায় দেওয়া সাক্ষাত্‍কারে জানিয়েছিলেন, নেতাজি চিনে আছেন।       

শুক্রবার, রাজ্য সরকার যে ফাইলগুলি প্রকাশ করেছে তার একটিতে দেখা যাচ্ছে, ১৯৪৯ সালের ৯ ডিসেম্বর, জুরিখ থেকে ডক্টর এল অ্যাবেগ শরত্‍ বসুকে চিঠি দিচ্ছেন। 
নেশন পত্রিকায় শরত্‍ বসুর ওই সাক্ষাত্‍কারের কথা চিঠিতে উল্লেখ করছেন তিনি। একইসঙ্গে ডক্টর অ্যাবেগ বলছেন, জাপানি সূত্র থেকে উনিশশো ছেচল্লিশে নেতাজির বেঁচে থাকার খবর পান তিনি। 

চৌষট্টিটি ফাইল। বারো হাজার পাতার ওপর নথি। সাংবাদিক-গবেষকরা ইতিহাস ঘাঁটতে শুরু করে দিয়েছেন। মানিকতলার পুলিস মিউজিয়ম থেকেই কি উন্মেচিত হবে নেতাজি অন্তর্ধান রহস্যের নতুন কোনও অধ্যায়? অপেক্ষায় দেশবাসী। 

স্বাধীনতার পরও নেতাজির পরিবারের ওপর নজরদারি চলত। রাজ্য সরকারের হেফাজতে থাকা ফাইলেও তার প্রমাণ মিলেছে বলে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কংগ্রেস আমলে কলকাতায় নেতাজির পরিবারের ওপর নজরদারি দুর্ভাগ্যজনক বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।  

১৯৪৮ থেকে ১৯৬৮ পর্যন্ত নেতাজির পরিবারের ওপর নিয়মিত নজরদারি চলেছিল।

নেতাজির দুই ভাইপো অমিয়নাথ বসু এবং শিশিরকুমার বসুর ওপর নজরদারি চালাত রাজ্য পুলিসের গোয়েন্দা শাখা। 

উডবার্ন পার্ক এবং এলগিন রোডে বসু পরিবারের দুটি বাড়িতে নজরদারি চালিয়ে পাওয়া তথ্য কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার কাছে পাঠানো হতো।  

গত এপ্রিলে কেন্দ্রের হেফাজতে থাকা নেতাজি সংক্রান্ত দুটি গোপন ফাইল সামনে আসে। সেই ফাইলদুটি থেকেই এ খবর জানা যায়।

উনিশশো চৌষট্টি সাল পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী ছিলেন জওহরলাল নেহরু। তারপরও কেন্দ্রে কংগ্রেসের সরকার ছিল। উনিশশো সাতষট্টি সাল পর্যন্ত এ রাজ্যেও একটানা ক্ষমতায় ছিল 
কংগ্রেস। ফলে, নেতাজির পরিবারের ওপর নজরদারির খবর সামনে আসায় তাদের ঘাড়েই দায় এসে পড়ে। এ বার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও কংগ্রেসের অস্বস্তি বাড়ালেন। জানালেন, নেতাজির পরিবারের ওপর নজরদারির তথ্য রয়েছে রাজ্য সরকারের ফাইলেও। 

কংগ্রেস আমলে নেতাজি সংক্রান্ত ফাইল নষ্ট করে ফেলার মতো গুরুতর অভিযোগ করেছেন চন্দ্র বসু। 

স্বাধীনতার পরও নেতাজির পরিবারের ওপর নজরদারি চলত কেন? তবে কি সরকারের মনেও সন্দেহ ছিল, তাইহোকু বিমান দুর্ঘটনায় তাঁর মৃত্যু হয়নি?

.