আতঙ্কের মহানগর: লাগাতার সহকর্মীদের হাতে গণধর্ষণের শিকার রেলকর্মী। চলেছে খুনের হুমকি, ব্ল্যাকমেলিং। নিষ্ক্রিয় পুলিস। চলছে নির্যাতিতার লড়াই

বর্বরতার চরম নিদর্শন খাস কলকাতায়। তিন বছর ধরে লাগাতার গণধর্ষণ, খুনের হুমকি।  চিতপুর রেল ইয়ার্ডের মধ্যেই মহিলা রেল কর্মীর  ওপর নির্যাতন।  অভিযোগ রেল কর্মীদের বিরুদ্ধেই। চব্বিশ ঘণ্টায় সুবিচারের দাবিতে মুখ খুললেন নির্যাতিতা।দুহাজার দশ সালের  আটাশে মে।  জ্ঞানেশ্বরী ট্রেন দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছিলেন  স্বামী। স্বামীর অকাল মৃত্যুতে চিতপুর রেল ইয়ার্ডে  সেই চাকরি পান তাঁর স্ত্রী।  রেলের চাকরিতে যোগ দিয়েই চরম বিপদের মুখোমুখি হতে হয় স্বামীহারা অসহায় মহিলাকে।

Updated By: Jul 26, 2014, 09:38 AM IST
আতঙ্কের মহানগর: লাগাতার সহকর্মীদের হাতে গণধর্ষণের শিকার রেলকর্মী। চলেছে খুনের হুমকি, ব্ল্যাকমেলিং। নিষ্ক্রিয় পুলিস। চলছে নির্যাতিতার লড়াই

কলকাতা: বর্বরতার চরম নিদর্শন খাস কলকাতায়। তিন বছর ধরে লাগাতার গণধর্ষণ, খুনের হুমকি।  চিতপুর রেল ইয়ার্ডের মধ্যেই মহিলা রেল কর্মীর  ওপর নির্যাতন।  অভিযোগ রেল কর্মীদের বিরুদ্ধেই। চব্বিশ ঘণ্টায় সুবিচারের দাবিতে মুখ খুললেন নির্যাতিতা।দুহাজার দশ সালের  আটাশে মে।  জ্ঞানেশ্বরী ট্রেন দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছিলেন  স্বামী। স্বামীর অকাল মৃত্যুতে চিতপুর রেল ইয়ার্ডে  সেই চাকরি পান তাঁর স্ত্রী।  রেলের চাকরিতে যোগ দিয়েই চরম বিপদের মুখোমুখি হতে হয় স্বামীহারা অসহায় মহিলাকে।

কার কাছে যাবেন, কোথায় গেলে সুবিচার মিলবে? কোনও কিছুই জানা নেই।হুমকি আর লোকলজ্জার ভয়ে মুখ বুজেই দিনের পর দিন সহ্য করেছেন অমানুষিক অত্যাচার।

অত্যাচারের মাত্রা ক্রমশ বাড়ছিল। ধর্ষণ থেকে শুরু হল গণধর্ষণ। কাজের জায়গা হয়ে উঠল চরম আতঙ্কের।

এইভাবেই একদিন অন্তঃসত্বা হয়ে পড়লেন নির্যাতিতা। তারপরেও বন্ধ হয়নি গণধর্ষণ। ক্ষতবিক্ষত অবস্থায় একদিন বাড়ি ফিরে স্বামীর কাছে উগরে দিলেন সব যন্ত্রণা। স্ত্রীয়ের চরম লাঞ্ছনার কথা শুনে বিষ খেয়ে আত্মঘাতী হওয়ার চেষ্টা করেন নির্যাতিতার স্বামী। বিয়ের পরেও চলতে থাকে ধর্ষণকারীদের ব্ল্যাকমেল। গণধর্ষণের ছবির ভিডিও ফুটেজ ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে চলতে থাকে গণধর্ষণ। এরমধ্যেই অন্তসত্বা হয়ে পড়েন মহিলা। ওই অবস্থাতেও লাগাতার গণধর্ষনের শিকার হতে হয় মহিলাকে।

রক্তাক্ত শরীরে একদিন বাড়ি ফিরে স্বামীর প্রশ্নের মুখে পড়ে ভেঙে পড়েন নির্যাতিতা। উগরে দেন  চেপে রাখা সব যন্ত্রণা।

সবশুনে সহ্যকরতে পারেননি নির্যাতিতার স্বামী। বিষ খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন তিনি।

কাজে গেলেই ভয়ে কুঁকড়ে যেত শরীর।  বাধা দিতে গেলেই ক্যামেরায় তোলা ছবি ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিত ধর্ষণকারীরা। সেই ভয়েই নিজের  ওপর সব অত্যাচার মুখ বুজে সহ্য করে যেতেন নির্যাতিতা।  এরমধ্যেই এল প্রেম। স্থানীয় এক যুবকের সঙ্গে তৈরি হল ভালোবাসার সম্পর্ক। স্বামী নেই। পরিবার,পরিজন,কাকে বলবেন এই যন্ত্রনার কথা। তাই মুখ বুজেই সব সহ্য করছিলেন। এরমধ্যেই জীবনের মোড় ঘুরল।  সামনে এল এক নতুন জীবনের স্বপ্ন। স্থানীয় এক যুবকের সঙ্গে তৈরি হল  ভালোবাসার সম্পর্ক। বিয়েও হল।

জীবনটা যখন একটু একটু করে পাল্টাতে শুরু করেছে। একটা ছোট্ট সংসার, পাশে একটা ভালোবাসার মানুষ। তৈরি হচ্ছে টুকরো,টুকরো স্বপ্ন ।সেখানেও থাবা বসাল ধর্ষণকারীদের দল। গণধর্ষণের ছবি ক্যামেরাবন্দি আছে, এই ভয় দেখিয়ে ফের শুরু হল গণধর্ষণ। কখনও ফাঁকা ট্রেনের কামরায়, কখনও গ্যারেজে। রোজ, লাগাতার।

আগে ছিল  প্রাণে মারার হুমকি, তার সঙ্গে এবার যোগ হল মহিলার স্বামীকেও প্রাণে মারার হুমকি। বেঁচে থাকার  একমাত্র অবলম্বনকে হারাতে চাননি মহিলা। তাই মুখ বুজেই সহ্য করে যাচ্ছিলেন অত্যাচার। নারকীয় অত্যাচার।

সর্বস্ব খুইয়ে মৃত্যুর মুখ থেকে স্বামীকে ফিরিয়ে আনেন নির্যাতিতা। শুরু হয় এক নতুন লড়াই। সুবিচারের দাবিতে প্রশাসনের দ্বারস্থ হয় দম্পতি। বিচার মেলাতো দুরঅস্ত, উল্টে নির্যাতিতারই চরিত্র নিয়েই প্রশ্ন তোলে পুলিস। শুক্রবার দমদম জিআরপির তরফে অভিযোগ নেওয়া হয়। ঘটনায় মামলাও রুজু হয়েছে বলে জানিয়েছে রেল পুলিস। গোটা ঘটনায় পুলিসি নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ এনেছেন নির্যাতিতা ও তাঁর স্বামী।

মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এসে নির্যাতিতার পাশে দাঁড়ালেন স্বামী। সুবিচারের দাবিতে দ্বারস্থ হলেন প্রশাসনের। কিন্তু সেখানে এক বিচিত্র অভিজ্ঞতা।  অভিযোগ নিয়ে চিতপুর ও দমদম জিআরপির দ্বারস্থ হন দম্পতি।  দুজায়গাতেই অভিযোগ নিতে অস্বীকার করে পুলিস। উল্টে দোষ চাপানো হয় নির্যাতিতার ঘাড়েই। পরামর্শ মেলে ডিভোর্সের।

পুলিসের এহেন উপদেশে স্তম্ভিত নির্যাতিতা। অপরাধীদের চরম শাস্তির দাবি জানিয়েছেন অসহায় দম্পতি। এই লড়াইয়ের শেষ দেখতে চান দুজনেই।

 

 

.