সারদা কেলেঙ্কারিতে গভীর ভাবে জড়িত রজত মজুমদার, দাবি সিবিআই-এর

সারদা কেলেঙ্কারিতে তিনি কোনওভাবেই যুক্ত নন। তদন্তকারীদের কাছে বারবার এই দাবি করেছেন রজত মজুমদার। প্রাক্তন ডিজির দাবি, বেতনভুক কর্মচারী হিসেবে সারদা গোষ্ঠীর নিরাপত্তার দিকটি তিনি দেখতেন। কিন্তু, তদন্ত থেকে পাওয়া একাধিক তথ্য বলছে অন্য কথা।

Updated By: Aug 23, 2014, 07:55 PM IST
সারদা কেলেঙ্কারিতে গভীর ভাবে জড়িত রজত মজুমদার, দাবি সিবিআই-এর

কলকাতা: সারদা কেলেঙ্কারিতে তিনি কোনওভাবেই যুক্ত নন। তদন্তকারীদের কাছে বারবার এই দাবি করেছেন রজত মজুমদার। প্রাক্তন ডিজির দাবি, বেতনভুক কর্মচারী হিসেবে সারদা গোষ্ঠীর নিরাপত্তার দিকটি তিনি দেখতেন। কিন্তু, তদন্ত থেকে পাওয়া একাধিক তথ্য বলছে অন্য কথা।

নিছক কর্মচারী নন। সুদীপ্ত সেনকে জেরা করে ও সারদার নথি ঘেঁটে, রজত মজুমদারের আরও বৃহত্তর ভূমিকার সন্ধান পেয়েছে সিবিআই।

দুহাজার আটে আর্মড পুলিসের ডিজি পদ হিসেবে অবসর গ্রহণ করেন রজত মজুমদার। রাজ্যের এক প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর মাধ্যমে তাঁর যোগাযোগ হয় সারদা কর্তা সুদীপ্ত সেনের সঙ্গে। সারদা গোষ্ঠীতে উপদেষ্টা হিসেবে বিভিন্ন কোম্পানির নিরাপত্তার বিষয়টি দেখতেন রজত মজুমদার। কলকাতা পুলিস ও সিআইডি থেকে DSP এবং ACP পদমর্যাদার অবসরপ্রাপ্ত তিন অফিসারকেও সারদা গোষ্ঠীতে নিয়ে আসেন তিনি।
কলকাতা ও রাজ্য পুলিস থেকে ইনসপেক্টর পদমর্যাদার সাত অবসরপ্রাপ্ত কর্মীকেও সারদা গোষ্ঠীতে চাকরি দেন রজত মজুমদার।

নিরাপত্তা উপদেষ্টার কাজের বাইরেও সারদার একাধিক লেনদেনে রজত মজুমদারের জড়িত থাকার প্রমাণ পেয়েছে সিবিআই। কী সেই লেনদেন?

২০১০ সালে জেনাইটিস কর্তা শান্তনু ঘোষের থেকে একটি নিউজ চ্যানেল কেনে সারদা গোষ্ঠী।

একটি সংবাদপত্র গোষ্ঠীর  সরাসরি বিরোধে ওই রাজ্যের বহু জায়গায় চ্যানেলের ডিস্ট্রিবিউশন ক্ষতিগ্রস্থ হয়।

চ্যানেলের ডিস্ট্রিবিউশন বাড়াতে রজত মজুমদার নিজের পুলিসি ও রাজনৈতিক যোগাযোগকে কাজে লাগান বলে জানতে পেরেছে সিবিআই।

তদন্তকারীদের কাছে সুদীপ্ত সেনের দাবি, MSO ও কেবল অপারেটরদের দেওয়ার জন্য ওই সময় তাঁর থেকে মাসে দুকোটি টাকা নিতেন রজত মজুমদার।

পরবর্তী সময়ে ওই সংবাদপত্র গোষ্ঠীর সঙ্গেই নিউজ চ্যানেলটির চুক্তি হয়। তাতেও রজত মজুমদার মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা পালন নেন বলে তদন্তে জানা গেছে। এরপরেই পদোন্নতি হয়ে সারদা গোষ্ঠীর ভাইস প্রেসিডেন্ট হন রজত মজুমদার। কিন্তু, তার ভূমিকা এখানেই সীমাবদ্ধ নয়।

সারদার এক পুরনো সার্ভেয়ারকে জিজ্ঞাসাবাদ করার সময় জমি লেনদেনেও রজত মজুমদারের যুক্ত থাকার প্রমাণ মিলেছে।
সারদা কনস্ট্রাকশন ও সারদা রিয়েলটির বহু জমি লেনদেনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছেন রজত মজুমদার।
লাস ভেগাসে বিশ্ববঙ্গ সম্মেলনেও রজত মজুমদার প্রথম সারির উদ্যোক্তা ছিলেন বলে তথ্য মিলেছে।

রজত মজুমদারের বিরুদ্ধে সারদার টাকা আত্মসাতের একাধিক অভিযোগ পেয়েছেন তদন্তকারীরা। রজত মজুমদারের বিরুদ্ধে অভিযোগ,  

সারদার নিউজ চ্যানেলের ডিস্ট্রিবিউশন বাবদ পাওয়া মাসে দুকোটি টাকার বড় অংশ তিনি আত্মসাত্ করতেন।

লাস ভেগাসে বিশ্ববঙ্গ সম্মেলনের খরচ দেখিয়েও তিনি প্রায় চার কোটি টাকা সরান বলে অভিযোগ।

রজত মজুমদারের বিরুদ্ধে জমি লেনদেনের টাকা সরানোরও অভিযোগ রয়েছে।

বেতনেও গরমিল। সারদা গোষ্ঠীতে সাত লক্ষ টাকা মাইনে পেতেন রজত মজুমদার। তার বাইরেও মাসে তিন লক্ষ টাকা পেতেন তিনি। তার কোনও হিসেব নেই।

সারদা গোষ্ঠীর পে-রোলে নিরাপত্তা উপদেষ্টা হিসেবে রজত মজুমদারের অস্তিত্ব দুহাজার এগারোর জুন থেকে দুহাজার বারোর জুলাই পর্যন্ত। কিন্তু, তার আগে বা পরেও রজত মজুমদারের সঙ্গে সুদীপ্ত সেনের ঘনিষ্ঠতার তথ্য মিলেছে। এমনকি সুদীপ্ত সেনের ফেরার হওয়া ও ধরা পড়ার পিছনেও রজত মজুমদারের ভূমিকা ছিল বলে জানতে পেরেছেন তদন্তকারীরা।

 

.