শিউলি পারফিউম (মহাষষ্ঠীতে বিশেষ গল্প)

Updated By: Oct 19, 2015, 03:38 PM IST
শিউলি পারফিউম (মহাষষ্ঠীতে বিশেষ গল্প)

 সৌম্য সিংহ

জমজমাট পুজোর বাজার। দু’টো জিনস, দু’টো পাঞ্জাবী, একটি শার্ট, আর একটি প্যান্ট। দশ হাজারের সাড়ে পাঁচ খরচা। পকেটে এখনও সাড়ে চার। হন্যে হয়ে ঘুরছি। কোনও দোকানেই নেই শিউলি পারফিউম।

‘শিউলি পারফিউম! তা আবার হয় নাকি!’—দোকানদারদের তো চক্ষু চড়কগাছ।

—‘হতেই হবে!...’ পদ্মাবতী এবার আমার থেকে না চেয়েছে শাড়ি, না নাইটি। সামান্য একটাই আবদার তার। শিউলি পারফিউম। প্রথমটা শুনে আমিও অবাক হয়েছিলাম। তারপর জেদটা চেপেই বসল। টাকা দিতে আমি প্রস্তুত, আমার চাই শিউলি পারফিউম।

ছেলেবেলায় মা’কে দেখেছি পুজোর সময় আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চার্লি সেন্ট ছড়াতে। তারপর বাবার দু’ বগলেও ফ্যাঁচ ফ্যাঁচ, আর আমার-দিদির গায়ে সামান্য। মোটামুটি পরিবারে যদি চার্লি আসতে পারে, তাহলে স্বচ্ছল পরিবারে পদ্মাবতীর আবদারি শিউলি পারফিউম কেন নয়!

এভাবে দু’দিন, তিনদিন, চারদিন—হেঁটে হেঁটে হাঁটু জখম। শিউলি পারফিউম আর পাওয়া গেল না। এদিকে গিন্নি আবার ন্যাকা ন্যাকা ঢঙে হুমকিও দিয়ে দিয়েছে—‘হয় এবার, নয় নেভার। শিউলি পারফিউম না পেলে আমি আর তোমার সঙ্গে থাকতে পারব না...’

হতাশ হয়েই হাঁটছিলাম। কিছুটা আনমনাও। গোটা শহরের নীল-সাদা আলোগুলি নিভু নিভু। আকাশটাও অনেক নীচে নেমে এসেছে, আর কিছুক্ষণের মধ্যেই আমার মাথায় ভেঙে পড়বে। আবদারি পদ্মাবতীতেও আর আকর্ষণ বোধ করছি না। পুরোটাই আঁধার...

পিছন থেকে আমার পাঞ্জাবী টেনে ধরল বছর ছয়েকের একটি মেয়ে। মেয়েটির গায়ে জামা নেই, শুধু একটা প্যান্ট। চুলগুলো তেল না পড়ে পড়ে খয়েরি আর জটবদ্ধ। সিজন চেঞ্জে সর্দিও জমেছে নাকে। মেয়েটি অপলক চেয়ে আমার দিকে। আমি বললাম—‘কী চায়!’ মুখ খুলল মেয়ে—‘কাকু ফুল নেবে?’ না বলতে পারলাম না। মেয়েটি হাতের মুঠো আমার হাতে রেখে ঢেলে দিল—এক মুঠো শিউলি। আমি নাকের কাছে ফুলগুলি আনতেই সুবাসিত শিউলি ভুলিয়ে দিল পারফিউম বৃত্তান্ত।

চারদিকে আলো জ্বলে উঠেছে। ঝলমলে শহর। দূর থেকে ভেসে আসছে ঢাকের শব্দ। সিগনালে-‘বাজলো তোমার আলোর বেণু…’

আমি হন হন করে হাঁটছি। এই ফুলগুলি দিয়েই মালা গাঁথতে হবে। সে মালা দিয়েই সাজিয়ে দেব পদ্মাবতীর খোঁপা। শাড়ি, মেক আপ, আর শিউলির গন্ধে মো মো করবে ওর সৌন্দর্য।   

.