সিঁদুর

Updated By: Apr 15, 2017, 12:46 PM IST
সিঁদুর

সুজয় চক্রবর্তী

---- হ্যালো অনু? দিদি বলছি।
---- হ্যা বল্, কি খবর?
---- খবর ভালো না রে, তোকে একটা খারাপ খবরই দিচ্ছি...সুদীপ্ত মারা গেছে।
----কি, কি বললি! কবে?
----গত মঙ্গলবার। আজকে ওর ছেলে এসেছিল। শুক্রবার শ্রাদ্ধ।
বড়ো করে একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল অনু। তারপর দিদি তনিমার কুশলবার্তা জেনে নিয়ে রিসিভারটা নামিয়ে রাখল ও।

বিয়ের পরও এই অ্যালবামটা হাতছাড়া করেনি অনু। অ্যালবামটাতে পুরনো দিনের অনেক ছবি আছে। অনেক স্মৃতি।  পাড়াতুতো বান্ধবী ববিতার বিয়ের  ছবিও রয়েছে সেখানে। অনেকের সঙ্গেই জ্বলজ্বল করছে পাতলা চেহারার একটা ছেলের মুখ। সুদীপ্ত। সেই সুদীপ্ত, যাকে অনু ভালোবেসেছিল। সেই সুদীপ্ত, যে একদিন ঘনিষ্ঠ মুহূর্তে চার দেয়াল সাক্ষী রেখে সিঁদুর পরিয়ে দিয়েছিল অনুকে! হাতটা কেঁপে উঠেছিল ওর। আর অনু, অঝোরে কেঁদে ফেলে মুখ গুঁজেছিল সুদীপ্তর বুকে। এরপর থেকে লুকিয়ে লুকিয়ে কতবার সিঁদুর পরেছে  অনু! প্রকাশ্যে আসেনি তা। আসতেই দেয়নি কেউ কেউ। ঠিক যেমন সিনেমায় হয়।

তারপর দুবছর কেটেছিল। অনুর বিয়ে হয়ে গেল প্রফেসর বরের সঙ্গে। আর দেবদাস না হয়ে ঘর বাঁধল সুদীপ্তও। সে তখন অমলকান্তির মতোই একটা ছাপাখানায় কাজ করে। তারপর পাক্কা পঁচিশটা বছর। অনুর একমেয়ে, একছেলে। ওদিকে সুদীপ্ত'রও এক ছেলে। একদিন সুদীপ্ত'র মাথায় একটা পাকা চুল দেখে পরিহাস করেছিল অনু। আর আজ, তাকে মাসে দুবার কালি মেহেন্দি লাগাতে হয়। অ্যালবামটা পাশে রেখে আয়না ধরে আরেকবার সিঁদুর পরল অনু। তারপর ছবিটার দিকে তাকিয়ে বলে উঠল, "এই দেখো, তোমার পরিয়ে দেওয়া সিঁদুর আমি এখনও পরছি। দেখো.... আমার সিঁদুর আছে, তুমিও আছো।"

.