বিরাট মান বাঁচালেন, ধোনি বাঁচালেন সিংহাসন

শতরানের জন্য একটি রান দরকার! অ্যান্ডারসনের সোজা বলটি অফস্টাম্পের দিকে ঠেলে দেন তিনি। হয়ত সব বিতর্কের অবসান ঘটিয়ে টেস্ট কেরিয়ারের সেরা জিনিসটি আজ পেতে চলেছেন। রানটা পূরণ করার আগে সেই আনন্দে একটু অন্যমনস্ক হয়েছিলেন। হঠাৎ মিডঅফ থেকে দ্রুত গতিতে আসা বলটি ধোনি ক্রিজে পৌঁছানোর আগেই উইকেট ভেঙে দেয়। ইংল্যান্ডের অধিনায়ক বধ করলেন ভারতের অধিনায়ককে। আর শতরানটি পূর্ণ হল না। তাতে হয়ত ভারতের অধিনায়ক মহেন্দ্র সিং ধোনির কিছু এসে যায় না। তাঁর জীবনের অনেকগুলি সেরার মধ্যে আর একটি সেরা ইনিংস উপহার দিয়ে গেলেন এই নাগপুর মাঠে।

Updated By: Dec 15, 2012, 06:34 PM IST

ইংল্যান্ড- ৩৩০
ভারত- ২৯৭/৮
রবিচন্দ্রন অশ্বিন- ৭
শতরানের জন্য একটি রান দরকার! অ্যান্ডারসনের সোজা বলটি অফস্টাম্পের দিকে ঠেলে দেন তিনি। হয়ত সব বিতর্কের অবসান ঘটিয়ে টেস্ট কেরিয়ারের সেরা জিনিসটি আজ পেতে চলেছেন। রানটা পূরণ করার আগে সেই আনন্দে একটু অন্যমনস্ক হয়েছিলেন। হঠাৎ মিডঅফ থেকে দ্রুত গতিতে আসা বলটি ধোনি ক্রিজে পৌঁছানোর আগেই উইকেট ভেঙে দেয়। ইংল্যান্ডের অধিনায়ক বধ করলেন ভারতের অধিনায়ককে। আর শতরানটি পূর্ণ হল না। তাতে হয়ত ভারতের অধিনায়ক মহেন্দ্র সিং ধোনির কিছু এসে যায় না। তাঁর জীবনের অনেকগুলি সেরার মধ্যে আর একটি সেরা ইনিংস উপহার দিয়ে গেলেন এই নাগপুর মাঠে।
তবে ধোনি যে কাজটি শেষ করতে পারলেননা, সেটা অনেক আগেই করে দেখালেন বিরাট কোহলি। এই সিরিজে তাঁর স্কোরবোর্ডে ২০-র বেশি রান ছিল না। প্রথম সারির ব্যাটসমানের সঙ্গে তাঁর ব্যার্থতাও সমলোচনায় জড়িয়ে পড়েছিল। কিন্তু আজকে সব জড়তা কাটিয়ে তিনি ঝলসে উঠলেন। সয়ানের বলে বাউন্ডারি মেরে বিরাট কোহলি,  তাঁর টেস্ট কেরিয়ারে তৃতীয়তম শতরানটি পূর্ণ করেন।
এখনও ৩৩ রানে পিছিয়ে ভারত। তবে যেখান থেকে ইনিংস গড়ার কাজ শুরু করেছিলেন বিরাট ও মাহি, সেটাই সবথেকে দুর্ভেদ্য কাজ ছিল। ভারতের দ্বিতীয় দিন শেষে রান ছিল ৪ উইকেট খুইয়ে ৮৭। সেখান থেকে ১৯৮ রানের পার্টনারসিপ তৈরি করে লড়াইয়ে ফেরালেন ভারতকে। এই পার্টনারসিপ একে অপরের অবলম্বন করেই গড়ে ওঠা। কখনও কোহলি, ধোনিকে এগিয়ে যাচ্ছেন। আবার ধোনি কখন এগিয়ে যাচ্ছেন। বিপদের সময় যে যে নিয়ম মানলে বিপদ থেকে মুক্ত হবে, সেগুলিই চোখে পড়ল তাঁদের পার্টনারসিপে। চা-পানের পর বিরাট কোহলি ১০৩ রানে সয়ানের বলে এলবিডব্লিউ হন।
তবে একেবারে দেওয়ালে পিঠ ঠেকার পর চমকপ্রদভাবে কামব্যাক ভারতীয় দলের। 'কোনঠাসা ভারত', 'ধূলিসাৎ ভারত' কিংবা ব্রিটিশ আগ্রাসনে ভারত সবই তুচ্ছ করে জড়তার খোলস থেকে বেড়িয়ে এল ধোনিবাহিনী। যেখানে অ্যালেস্টার কুক পরপর টেস্টে সেঞ্চুরি করে অধিনায়কত্বের ভূমিকাকে জরালো করছিলেন, সেখানে মহেন্দ্র সিং ধোনি একেরপর এক ব্যর্থতায় দিশাহারা হয়ে উঠেছিলেন। নিজের সিংহাসন হারানোটাও নিশ্চন্ত হতে চলেছিল। কখনও স্পিনিং পিচ নিয়ে বিতর্ক, কখনও পিচ অভি়জ্ঞ প্রবীরবাবুর সঙ্গে বিতর্কে জড়িয়ে পড়েছেন। আবার নিজের দলের খারাপ ব্যাটিং পারফর্মেন্সের জন্য গম্ভীরের সঙ্গে বিতর্কে জড়িয়ে পড়েছেন। এতকিছু করেও কোনও ফল হয়নি। সব বিতর্কের অবসান ঘটাতে গেলে যে তাঁর ব্যাটে জবাব দিতে হবে এটা তিনি নিশ্চিত করে নিয়েছিলেন। না হলে এটা তাঁর সবথেকে বেশি সময় নিয়ে 'এক কম শতরান' হতে পারে! 'ধীরে চল নীতি' নিয়ে মহেন্দ্র সিং ধোনি এক ঢিলে দুটি পাখি মারলেন সেটা বলাই যায়। এক, সব বিতর্কে জল ঢাললেন এবং ভারতকে লড়াইয়ে ফেরালেন। দুই, নিজের রাজত্বকে আরও একবারের জন্য বাঁচিয়ে নিলেন।
ধোনি আউট হতেই আর একটি উইকেট হারায় ভারত। অযাচিত দান হিসাবে পীয়ূষ চাওলা, সয়ানের ঝুলিতে ১ রানে নিজের উইকেটটা দিয়ে আসেন। তৃতীয় দিনের শেষে ভারতের রান দাঁড়ায় ২৯৭/৮। অশ্বিন ক্রিজে রয়েছেন ৭ রানে। হাতে দুটি উইকেট। গতকাল ফের অশ্বিন কী একটা অর্ধশতরান করবে মনের ভিতর এমন ইচ্ছা থাকলেও ভরসা করা যাচ্ছেনা। কিন্তু ইডেনে শেষ তিন ব্যাটসম্যানকে নিয়েই তো ৯১ রানের একটা ইনিংস খেলেছিলেন। মানলাম সব সময় এক যায়না, কিন্তু আজকের বৈচিত্যপূর্ণ নাটকের পরিসম্পাতি যদি রানের লিড নিয়ে শেষ হয়, তবে দাবার ছকটা ধোনি অন্যরকমভাবেই ভাববেন।   
 

.