আজ ফেলিক্সের ভয়ঙ্কর `আকাশ-ঝাঁপ`

খারাপ আবহাওয়ার জন্য বাতিল হওয়া `আকাশ ঝাঁপ` বৃহস্পতিবার সেরে ফেলার পথে ফেলিক্স বাউমগার্টনার। মৃত্যুর ভ্রূকুটি কে অগ্রাহ্য করে স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার থেকে ঝাঁপ দিতে চলেছেন ফেলিক্স। কথা ছিল বুধবারই গড়বেন সেই ভয়ঙ্কর রেকর্ড। কিন্তু বাদ সেধেছিল আবহাওয়া। এবার আবহাওয়ার সেই প্রতিবন্ধকতাকে দূরে সরিয়ে রেখে স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার থেকে ঝাঁপ দিয়ে এক অনবদ্য রেকর্ড গড়তে চলেছেন অস্ট্রিয়ান স্কাই ডাইভার ফেলিক্স বাউমগার্টনার।

Updated By: Oct 11, 2012, 10:31 AM IST

খারাপ আবহাওয়ার জন্য বাতিল হওয়া `আকাশ ঝাঁপ` বৃহস্পতিবার সেরে ফেলার পথে ফেলিক্স বাউমগার্টনার। মৃত্যুর ভ্রূকুটি কে অগ্রাহ্য করে স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার থেকে ঝাঁপ দিতে চলেছেন ফেলিক্স। কথা ছিল বুধবারই গড়বেন সেই ভয়ঙ্কর রেকর্ড। কিন্তু বাদ সেধেছিল আবহাওয়া। এবার আবহাওয়ার সেই প্রতিবন্ধকতাকে দূরে সরিয়ে রেখে স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার থেকে ঝাঁপ দিয়ে এক অনবদ্য রেকর্ড গড়তে চলেছেন অস্ট্রিয়ান স্কাই ডাইভার ফেলিক্স বাউমগার্টনার। ইতিমধ্যে প্রায় আড়াই হাজার বার প্লেন, হেলিকপ্টার, স্কাইস্ক্র্যাপার থেকে ঝাঁপ দিয়েছেন। কিন্তু, তাতে ভরেনি মন। সবসময়েই ওকে তাড়া করে বেড়াতো আরও বিপজ্জনক কোনও অ্যাডভেঞ্চারের নেশা। আর সেই নেশাই এবার বাউমগার্টনারকে সম্ভবত নিয়ে যাচ্ছে স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারে। ভূপৃষ্ঠ থেকে প্রায় সাঁইত্রিশ কিলোমিটার ওপরে বাউমগার্টনারকে পৌঁছে দেবে হিলায়ামের একটি বিশেষ ক্যাপসুল। আর তারপরই আসবে সেই মুহূর্ত।
স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারের তাপমাত্রা মাইনাস ৫৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। অক্সিজেন প্রায় নেই বললেই চলে। বায়ুমণ্ডলের চাপ ভূপৃষ্ঠের মাত্র দুই শতাংশ। হ্যাঁ, এমনই ভয়ঙ্কর প্রতিকুলতার মুখোমুখি হতে হবে ফেলিক্স বাউমগার্টনারকে। যার জেরে জ্ঞান হারাতে পারেন তিনি। অত্যন্ত কম বায়ুচাপে ফেলিক্সের রক্তের মধ্যে তৈরি হতে পারে বুদবুদ। থেমে যেতে পারে ফুসফুস। শব্দের গতিতে নেমে আসার সময় ফেলিক্সের দেহ সমান্তরালভাবে তিনশো ষাট ডিগ্রিতে ঘুরবে। যার ফলে তাঁর মস্তিষ্কে রক্ত জমাট বাঁধতে পারে। তবু, নিজের লক্ষ্যে অবিচল ফেলিক্স বাউমগার্টনার। ঝাঁপ দেওয়ার পর প্রায় তিরিশ সেকেন্ড তাঁর গতি থাকবে শব্দের গতি ঘণ্টায় এগারোশো দশ কিলোমিটারের চেয়েও বেশি। ক্রমশ বায়ুমণ্ডলের ঘনত্ব বাড়লে গতি কমবে। কিন্তু তারপরও প্রায় সাড়ে চার মিনিট ধরে চলবে ফ্রি ফল। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নামমাত্র বায়ুচাপে শব্দের গতিতে নেমে আসার সময় ফেলিক্সের দেহ সমান্তরাল ভাবে তিনশো ষাট ডিগ্রি ঘুরতে থাকবে। যার ফলে তাঁর মস্তিষ্কে রক্ত জমাট বাঁধতে পারে। সাময়িকভাবে অন্ধও হয়ে যেতে পারেন তিনি। আর সেই কারণেই তাঁর রক্ষাকবচ হচ্ছে এক বিশেষ পোশাক। এই পোশাকই বাউমগার্টনারকে রক্ষা করবে সম্ভাব্য প্রায় সবরকম বিপদ থেকে। ঝাঁপানোর পর মাটি ছুঁতে তাঁর সময় লাগবে প্রায় ১০ মিনিট। প্রথম ৫ মিনিট পর প্যারাসুট খুলবেন বাউমগার্টনার। কিন্তু, সেসময় কী অবস্থায় থাকবেন বাউমগার্টনার? জানা নেই কারোর। জ্ঞান হারিয়ে ফেলার আশঙ্কা থাকায় স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে যাতে সময়মতো আপনা থেকেই প্যারাশুট খুলে যায় থাকছে সে ব্যবস্থাও।
গত ৫ বছর ধরে বিপদসঙ্কুল এই আকাশ-ঝাঁপের প্রস্তুতি নিয়েছে এনার্জি ড্রিঙ্ক প্রস্তুতকারী সংস্থা রেড বুল। তাদের স্পনসরশিপে এই গোটা ঘটনার ওপর নজর রাখছে মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা। সরাসরি অংশ না নিলেও মহাকাশযান ও মহাকাশচারীদের পোশাককে আরও উন্নত করার  লক্ষ্যে এখন ফিয়ারলেস ফেলিক্সের দিকে নজর সংস্থার বিজ্ঞানীদের।  
 
আজকে বাউমগার্টনারকে স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারে পৌঁছে দেবে এক অত্যাধুনিক ক্যাপসুল। হিলিয়াম গ্যাসে ঠাসা সেই বেলুনাকৃতি ক্যাপসুল কি নিরাপদে নির্দিষ্ট উচ্চতায় পৌঁছে দিতে পারবে ফেলিক্স বাউমগার্টনারকে? রেড বুল স্ট্র্যাটোসের প্রজেক্ট ডিরেক্টর একশোভাগ প্রত্যয়ী। অথচ গত জুলাই মাসেই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল এই বেলুনাকৃতি ক্যাসুলটি। সেবার প্রায় তিরিশ কিলোমিটার উচ্চতা থেকে ঝাঁপ দিয়েছিলেন বাউমগার্টনার। কিন্তু তাতে কোনওভাবেই দমে যাননি রেড বুল স্ট্র্যাটোসের টিম। দ্রুত শুরু হয় মেরামতির কাজ। আর মাস দুয়েকের মধ্যেই নিজের বিশালাকায় চেহারা ফিরে পায় ক্যাপসুলটি। একহাজার তিনশো পনেরো কিলোগ্রাম ওজন। গত চব্বিশে সেপ্টেম্বরই কঠিন পরীক্ষা দিতে হয়েছএ এই ক্যাপসুলটিকে। স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারে গিয়ে যেসব প্রতিকূলতার মুখোমুখি হতে হবে, তার প্রতিটিতেই পাশ করে গিয়েছে চারস্তরের এই বেলুনটি।প্রেসার বৃত্ত, খাঁচা, খোলস এবং অবতরণ প্যাড। এই চারটি অংশ নিয়ে তৈরি হয়েছে ক্যাপসুলটি। প্রেসার বৃত্তের মধ্যে বসেই স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারে যাবেন বাউমগার্টনার। ফাইবার গ্লাসের কাঠামোয় ইপক্সি আর অগ্নিরোধক রং দিয়ে তৈরি প্রেসার বৃত্ত। এর দরজা জানালা সবই অ্যাক্রিলিকের। গোটা বৃত্তের পরিধি ছয় ফুট। এর ভিতরে রয়েছেবিভিন্ন যন্ত্রপাতি, ক্যামেরা আর একটি চেয়ার। প্রেসার বৃত্তকে ঘিরে রাখবে ক্যাপসুলের খাঁচা। ক্রোমিয়াম মলিবডেনাম দিয়ে তৈরি এই খাঁচাই ধরে রাখবে প্যারাসুটকে। আর ক্যাপসুলের বাইরের যে অংশটি দেখা যাবে সেটাই খোলস বা শেল। তাপমাত্রার আকাশপাতাল হেরফের থেকে বাউমগার্টনারকে রক্ষা করতে বিশেষভাবে তৈরি করা হয়েছে এই শেলটি। উচ্চতায় এগারো ফুট আর নীচের অংশের পরিধি আট ফুট। ক্যাপসুলের সবথেকে বড় অংশ হল অবতরণ প্যাড। একবারই ব্যবহার করা যায় এই প্যাডটি। দেড়শোবার পরীক্ষা করে তারপরই এই প্যাডটিকে জোড়া হয়েছে ক্যাপসুলের সঙ্গে।
 
বিশেষ বস্তু দিয়ে তৈরি চারস্তরের এই স্পেসস্যুটের মধ্য থাকবে অক্সিজেন সিলিন্ডারও। একদম ভিতরের স্তরে থাকবে গ্যাস মেমব্রেন, যা বায়ুচাপের সঙ্গে ফেলিক্সের শরীরের চাপের ভারসাম্য রক্ষা করা ছাড়াও বাইরের উষ্ণতা ও ঠাণ্ডা প্রতিরোধ করতেও সহায়ক হবে। আঙুল, কনুই, কবজি নাড়ানোর বিষয়গুলির দিকেও বিশেষভাবে নজর দেওয়া হয়েছে। বেলুন থেকে ঝাঁপ দেওয়ার পর থেকে মাটিতে পৌঁছনোর পর্যন্ত স্পেসস্যুট  ও হেলমেটটিই একমাত্র ভরসা  ফেলিক্সের। সবকিছু ঠিকমতো চললে ঝাঁপ দেওয়ার পনেরো-কুড়ি মিনিটের মধ্যে মাটিতে নেমে আসার কথা ফেলিক্স বাউমগার্টনারের। অত্যাধুনিক এই স্পেসস্যুটটি মাইনাস নব্বই ডিগ্রি ফারেনহাইট থেকে একশো ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত তাপমাত্রা সহ্য করতে পারবে। তথ্য অনুযায়ী বাষট্টি হাজার ফুট উচ্চতায় মানবদেহের রক্ত বা অন্য তরল গ্যাসে পরিণত হতে পারে। যা থেকে অচেতন হওয়া এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। সেই আশঙ্কার কথা মাথায় রেখেই স্পেসস্যুটটির মধ্যে বায়ুমণ্ডলের চাপের ভারসাম্য রক্ষার যাবতীয় ব্যবস্থা থাকছে। গর টেক্স ও নমেক্স জাতীয় পদার্থ ব্যবহার করা হয়েছে স্পেসস্যুটের বাইরের স্তরটি নির্মীত হয়েছে। যাতে বাইরের প্রচণ্ড গরম বা ঠান্ডা থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। স্পেসস্যুটের ভিতরে ঠান্ডা ও গরম বাতাস ঢোকার ব্যবস্থা থাকছে। বেলুন থেকে লাফ দেওয়ার পরই প্রচণ্ড ঠান্ডায় ফেলিক্সের জন্য এই পোশাক দেবে গরম হাওয়া। আবার বাইরের প্রচণ্ড গরমের সময় ফেলিক্সকে ঠান্ডা রাখার জন্য ঢুকবে শীতল বাতাস।
 ঝাঁপ দেওয়ার প্রায় কুড়ি মিনিট পর ভূপৃষ্ঠে অবতরণ করবেন বাউমগার্টনার। সবকিছু ঠিক থাকলে মেক্সিকোর মরুভূমিতে নামবেন ফেলিক্স বাউমগার্টনার।  
 

 
 
 

.