রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বকেই রাষ্ট্রপতি পদে চায় বামেরা

আসন্ন রাষ্ট্রপতি নির্বাচন নিয়ে শুক্রবার দিল্লিতে বৈঠকে বসল চার বামদল। সিপিআইএম এবং সিপিআইয়ের পার্টি কংগ্রেসের পর এটাই কেন্দ্রীয় স্তরে চার বাম দলের প্রথম বৈঠক। কোনও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বকেই রাষ্ট্রপতি পদে চায় বামেরা। রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হোন সহমতের ভিত্তিতে। এমনটাই দাবি তাদের। রাষ্ট্রপতি নির্বাচন নিয়ে বৈঠকে এই সিদ্ধান্তই নিয়েছে চার বাম দল।

Updated By: May 4, 2012, 01:06 PM IST

আসন্ন রাষ্ট্রপতি নির্বাচন নিয়ে শুক্রবার দিল্লিতে বৈঠকে বসল চার বামদল। সিপিআইএম এবং সিপিআইয়ের পার্টি কংগ্রেসের পর এটাই কেন্দ্রীয় স্তরে চার বাম দলের প্রথম বৈঠক। কোনও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বকেই রাষ্ট্রপতি পদে চায় বামেরা। রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হোন সহমতের ভিত্তিতে। এমনটাই দাবি তাদের। রাষ্ট্রপতি নির্বাচন নিয়ে বৈঠকে এই সিদ্ধান্তই নিয়েছে চার বাম দল। এবিষয়ে অকংগ্রেসি, অবিজেপি, ধর্মনিরপেক্ষ দলগুলির সঙ্গেও কথা বলবে তারা। বৈঠক শুরুর আগে সমাজবাদী পার্টির নেতা মুলায়ম সিং যাদবের সঙ্গে দেখা করেন সিপিআইএমের সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ কারাট এবং দলের পলিটব্যুরো সদস্য সীতারাম ইয়েচুরি। তার আগে সংসদে দিয়ে এনসিপি নেতা শরদ পাওয়ারের সঙ্গেও দেখা করেন সীতারাম ইয়েচুরি। বৈঠক শেষে সহমতের ভিত্তিতে প্রার্থী নির্বাচিত করতে চায় বলে জানায় বামেরা। এপ্রসঙ্গে অকংগ্রেসি, অবিজেপি দলগুলির সঙ্গেও কথা বলবে তারা। তবে রাষ্ট্রপতি পদে বামেরা কোনও নাম উত্থাপন করেনি। শুক্রবারের বৈঠকে সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়। সংসদে খাদ্য নিরাপত্তা বিল পেশের দাবিতে আন্দোলনে নামবে বলে সিদ্ধান্ত হয় এদিনের বৈঠকে।
অন্যদিকে ইউপিএ জোটের দ্বিতীয় বৃহত্তম শরিক তৃণমূল কংগ্রেসের সামেন রাষ্ট্রপতি ভোটে নির্ণায়ক ভূমিকা পালনের অভাবিত সুযোগ এনে দিয়েছে `ইলেকটোরাল কলেজ`-এর জটিল সমীকরণ। পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতায় আসার পর থেকে একাধিক ইস্যুতে কেন্দ্রের সঙ্গে সংঘাত বেধেছে তৃণমূল কংগ্রেসের। পেনশন বিল থেকে খুচরো ব্যবসায় বিদেশি বিনিয়োগ, লোকপাল বিল থেকে এনসিটিসি। শরিক তৃণমূলের আপত্তির জেরে একাধিকবার অস্বস্তিতে পড়তে হয়েছে কংগ্রেসকে। এরই মধ্যে রাজ্যের জন্য বিশেষ আর্থিক প্যাকেজ এবং সুদ মকুবের দাবিতে সোচ্চার হয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। একদিকে দলের অবস্থান মতো একাধিক ইস্যুতে তৃণমূলের আপত্তি। অন্যদিকে রাজ্যের দাবি মতো আর্থিক প্যাকেজ নিয়ে কেন্দ্রের টালবাহানা। এই প্রেক্ষাপটে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন দরকষাকষির বাড়তি সুযোগ এনে দিয়েছে তৃণমূলের সামনে। কারণ, মনোনীত প্রার্থীকে রাষ্ট্রপতি পদে জিতিয়ে আনতে হলে তৃণমূলের উপরে অনেকটাই নির্ভর করতে হবে কংগ্রেসকে।
লোকপাল বিল বা এনসিটিসি নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত পিছিয়ে দেওয়া গেলেও জুলাইয়ের আগেই রাষ্ট্রপতি নির্বাচন নিয়ে সিদ্ধান্তের জায়গায় আসতে হবে কংগ্রেসকে। এই সিদ্ধান্ত ঝুলিয়ে রাখা সম্ভব নয়। সেই দিক থেকেই সংখ্যার সমীকরণ এবার দর কষাকষির ক্ষেত্রে শক্ত জমির উপর দাঁড় করিয়ে দিয়েছে তৃণমূলকে। তথ্য ও পরিসংখ্যান বলছে, রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের `ইলেকটোরাল কলেজের` মোট ভোট ১০,৯৮,৮৮২। এর মধ্যে কংগ্রেসের নিজস্ব ভোট ৩,৩০,৪৮৫। অর্থাত্‍ মোট ভোটের ৩০ শতাংশ রয়েছে কেন্দ্রের প্রধান শাসক দলের কাছে। সামগ্রিকভাবে ইউপিএ জোটের হাতে রয়েছে ৪১ শতাংশ ভোট। কিন্তু রাইসিনা হিলে পছন্দের প্রার্থীকে পাঠানোর জন্য অন্তত ৫১ শতাংশ ভোট সংগ্রহ করতে হবে সোনিয়া-মনমোহনদের।

আর ঠিক এখানেই উঠে আসছে `সংখ্যা` অর্জনের অপরিহার্যতার প্রশ্ন। ইলেকটোরাল কলেজে সমাজবাদী পার্টির হাতে থাকা ভোট-মূল্য ৬৬,৬৮৮। তৃণমূল কংগ্রেসের রয়েছে ৪৫,৯২৫ ভোট (প্রায় ৪ শতাংশ ভোট)। মায়াবতীর নেতৃত্বাধীন বহুজন সমাজ পার্টি (বিএসপি)-র হাতে থাকা ভোটের সংখ্যা ৪৭,৮৯০ ভোট। অন্যদিকে প্রধান বিরোধী দল বিজেপির রয়েছে ২,২৫,৩০১ ভোট। অঙ্কের হিসেবে পরিষ্কার, তৃণমূলকে বাদ দিলে সপা, বসপা, আরজেডি-র মতো সমর্থনকারী দলগুলিকে নিয়েও ৬১ শতাংশের ম্যাজিক ফিগার-এ পৌঁছতে পারবে না কংগ্রেস।
ভোটের এই অঙ্কই দেখিয়ে দিয়েছে, ইউপিএ যদি এসপি, বিএসপির সাহায্য ছাড়াই মনোনীত প্রার্থীকে জিতিয়ে আনতে চায়, তাহলে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে তৃণমূল। ফলে রাজ্যের জন্য সুদ মকুব ও আর্থিক প্যাকেজের দাবি নিয়ে সওয়ালের ক্ষেত্রে তৃণমূলের আস্তিনে তুরুপের তাস হতে পারে রাষ্ট্রপতি পদে কংগ্রেসের প্রার্থীকে সমর্থনের প্রশ্নটি। যদি সেটা হয় তাহলে রাজনৈতিক মহলের অনুমান, রাজ্যকে আর্থিক সাহায্যের বিষয়টি আর অর্থনীতির নিরিখে বিবেচনা করা হবে না। তা পুরোপুরি হয়ে দাঁড়াবে রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের বিষয়। সেক্ষেত্রে রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতা থেকেই আর্থিক প্যাকেজের প্রশ্নে সিদ্ধান্ত নিতে হবে কংগ্রেসকে। রাষ্ট্রপতি নির্বাচন সেই রাজনৈতিক সমীকরণের সামনেই দাঁড় করিয়ে দিয়েছে তৃণমূলকে।

.