সিদ্দারামাইয়া সরকারের কন্নড় ভাবাবেগের রাজনীতি : এক ভিন্ন রাজনৈতিক বাস্তবতার ইঙ্গিত

Updated By: Jul 31, 2017, 05:51 PM IST
সিদ্দারামাইয়া সরকারের কন্নড় ভাবাবেগের রাজনীতি : এক ভিন্ন রাজনৈতিক বাস্তবতার ইঙ্গিত

নির্ণয় ভট্টাচার্য্য
পৃথক পতাকার দাবি এবং হিন্দি হঠাও আহ্বান আগেই জানিয়েছে কর্ণাটকের সিদ্দারামাইয়া সরকার। দক্ষিণের এই কংগ্রেস শাসিত সরকারের মুখ্যমন্ত্রী এবার উচ্চকণ্ঠে জানালেন, 'কন্নড় ভাবাবেগে আঘাত করা হলে তা কখনই সহ্য করা হবে না'। শুধু এটুকু বলেই থামেনি সিদ্দারামাইয়া সরকার, সেই সঙ্গে 'ইউ টিউবে' আপলোড করা হয়েছে একটি ১৩ মিনিট ৪২ সেকেন্ডের ভিডিয়ো যা সমৃদ্ধ কন্নড় সংস্কৃতির কথা তুলে ধরেছে। আর এই জোড়া ফলাতেই কন্নড় ভাবাবেগের প্রচারকে এক ভিন্ন মাত্রায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

 

কিন্তু, হঠাত্ কেন এমন চোখে পড়ার মতো করে কন্নড় ভাবাবেগে বিশেষভাবে জোর দিচ্ছে কর্ণাটকের কংগ্রেস সরকার? এই প্রশ্নের সহজ উত্তর হিসাবে আগামী বছর কর্ণাটকের বিধানসভা ভোটকে পাখির চোখ করে সিদ্দারামাইয়ার জাতিসত্ত্বার আবেগ উসকে দেওয়ার তত্ত্ব সামনে আনা যেতেই পারে। সেই হিসাব আপাতভাবে নির্ভুলও। কিন্তু এই আপাত হিসাবের পিছনে রয়েছে গভীরতর এক রাজনৈতিক বাস্তবতার ইঙ্গিত। আর তা হল 'জাতীয়তাবাদ' বনাম 'প্রাদেশিক ও জাতিসত্তার ভাবাবেগ'।

২০১৪ সালে লোকসভায় বেনজির সংখ্যা গরিষ্ঠতা পেয়ে কেন্দ্রে সরকার গড়ার পর থেকে বিজেপির বিজয় কেতন সদা উড়ন্ত। আর এই মুহূর্তে দেশের ২৯টি রাজ্যের মধ্যে ১৮টিতেই ক্ষমতায় বিজেপি বা তাদের সহযোগীরা। 'গেরুয়া জাতীয়তাবাদে'র সফল প্রচারেই যে এই ফসল বিজেপি ঘরে তুলেছে তা পরিষ্কার। অন্যদিকে, ঐতিহাসিকভাবে দেশের প্রথম জাতীয়তাবাদী দল কংগ্রেসের বর্তমানে লোকসভায় সাংসদ সংখ্যা ৪৫। সংখ্যার দিক থেকে যা নিতান্তই আঞ্চলিক রাজনৈতিক দলের আসন সংখ্যার সঙ্গে তুলনীয়। পাশাপাশি, অঙ্গরাজ্যগুলিতেও কংগ্রেসের ক্ষয়িষ্ণুতা সুস্পষ্ট। এই মুহূর্তে যে ক'টি রাজ্যে এখনও শিব রাত্রের সলতের মতো উড়ছে কংগ্রেসের পতাকা তার মধ্য অন্যতম কর্ণাটক। ফলে, সেরাজ্যের সরকারের বিশেষভাবে প্রচার করা পদক্ষেপ কেবলই দলের প্রদেশ শাখার সিদ্ধান্ত বলে ধরে নেওয়ার কোনও কাণ নেই। বরং দক্ষিণের এই রাজ্যের উপর সদাসতর্ক দৃষ্টি রাখছে হাই-কম্যান্ড। তাই কর্ণাটকের ঘটনাবলী কার্যত অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে জাতীয় দলের প্রাদেশিক জাতিসত্ত্বাকে উঁচিয়ে ধরার প্রয়াস বলেই প্রতীয়মান হয়ে উঠছে। ফলে, 'গেরুয়া জাতীয়তাবাদের' গুঁতো খেয়ে সাবেক 'জাতীয়তাবাদী' দলের এমন 'পৃথক প্রাদেশিক পতাকার' বাহক হয়ে ওঠা নিঃসন্দেহে এক অন্য রাজনৈতিক বাস্তবতার ইঙ্গিত দিচ্ছে।

.