সংবিধান কাকে কতটা ক্ষমতা দিয়েছে? দড়ি টানাটানিতে শাসন-বিচার বিভাগ

রবিশঙ্কর প্রসাদের অভিযোগ, মাঝেমাঝেই ক্ষমতার ভারসাম্যে বিঘ্ন ঘটছে, বিচার বিভাগ বহু ক্ষেত্রেই নিজের সীমা লঙ্ঘন করে প্রশাসনের কার্যক্ষেত্রে অনধিকার প্রবেশ করছে। বিচার বিভাগের হস্তক্ষেপ সংক্রান্ত আইনমন্ত্রীর অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে শীর্ষ আদালতের প্রধান বিচারপতির সটান প্রত্যুত্তর, শাসনকার্য এতটাই জটিল বিষয় যে তার সীমানা নির্দিষ্ট করা অত্যন্ত কঠিন।

Updated By: Nov 27, 2017, 12:30 PM IST
সংবিধান কাকে কতটা ক্ষমতা দিয়েছে? দড়ি টানাটানিতে শাসন-বিচার বিভাগ

নিজস্ব প্রতিবেদন: সংবিধান কাকে কতটা ক্ষমতা দিয়েছে, ৬৮ তম সংবিধান দিবসে এই প্রশ্নেই ভিন্ন মত হল দেশের বিচার এবং শাসন বিভাগ।

প্রধানমন্ত্রী মোদী রবিবার তাঁর মন কি বাত অনুষ্ঠানে বলেন, গণতন্ত্রের তিন স্তম্ভ অর্থাত্ বিচার বিভাগ, শাসন বিভাগ এবং আইন বিভাগের নিজস্ব সীমা সম্পর্কে সচেতন হওয়া প্রয়োজন।

প্রধানমন্ত্রীর কথার রেশ ধরেই সুর সপ্তমে তোলেন দেশের আইনমন্ত্রী। এ দিন রবিশঙ্কর প্রসাদের অভিযোগ, মাঝেমাঝেই ক্ষমতার ভারসাম্যে বিঘ্ন ঘটছে, বিচার বিভাগ বহু ক্ষেত্রেই নিজের সীমা লঙ্ঘন করে প্রশাসনের কার্যক্ষেত্রে অনধিকার প্রবেশ করছে। পাল্টা আসরে নামেন ভারতের প্রধান বিচারপতি দীপক কুমার মিশ্রও। বিচার বিভাগের হস্তক্ষেপ সংক্রান্ত আইনমন্ত্রীর অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে শীর্ষ আদালতের প্রধান বিচারপতির সটান প্রত্যুত্তর, শাসনকার্য এতটাই জটিল বিষয় যে তার সীমানা নির্দিষ্ট করা অত্যন্ত কঠিন। সুপ্রিম কোর্ট মনে করে এই স্তম্ভ সাংবিধানিক সার্বভৌমত্বের অধীন এবং আইনের শাসনের প্রতি দায়বদ্ধ।

গণতন্ত্রের দুই স্তম্ভের অধিকার এবং অনধিকার সংক্রান্ত এই তাত্ত্বিক বিতর্কে এদিন যেসব যুক্তি এবং পাল্টা যুক্তি উঠে এল, সেগুলি এক ঝলকে-

প্রধান বিচারপতি-

**নাগরিকের মৌলিক অধিকারকে সর্বোচ্চ সুরক্ষিত রাখতে হবে। এ বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই যে কোনও অধিকারই অবাধ নয়। তবে অধিকারের পায়ে বেড়ি পরানো হলে আইনের ঘেরাটোপে দাঁড়িয়ে সেই বেড়ির যথার্থতা গভীরভাবে পর্যালোচনা করতে হবে। তা না হলে, মূল আদর্শ ও উদ্দেশ্যই বিনষ্ট হবে।

** দেশে একটি ধর্মই সকল নাগরিকের মেনে চলা উচিত, তা হল সাংবিধানিক ধর্ম।

**আইনের শাসন মূলত সুশাসনকেই সুনিশ্চিত করে। আর এই নীতি সংবিধানে উল্লেখিত বিভিন্ন আদর্শের মাধ্যমে শাসন বিভাগ ও বিচার বিভাগের জন্য স্বাধীনতা দেয়। এই সাংবিধানিক সার্বভৌমত্বকে আমাদের সকলের বিনীত ও দায়বদ্ধভাবে গ্রহণ করা উচিত।

আইনমন্ত্রী-

**বিচার বিভাগ প্রায়শই অন্যান্য বিভাগের রাস্তায় ঢুকে পড়ে।

**জনস্বার্থ মামলা কখনই শাসনকার্য পরিচালনার বিকল্প হয়ে উঠতে পারে না। সাধারণ মানুষের দ্বারা নির্বাচিত প্রতিনিধিদের শাসনকার্য পরিচালনার অধিকার রয়েছে। সংবিধান প্রণেতারা বিশ্বাস করতেন যে,  শাসনকার্য পরিচালনার দায়িত্ব থাকবে তাঁদের হাতে যারা মানুষের ভোটে নির্বাচিত।

রাষ্ট্রপতি-

**গণতন্ত্রের তিন শাখা- বিচার বিভাগ, আইন বিভাগ এবং শাসন বিভাগের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করা বেশ কঠিন। তবু, এদের প্রত্যেকেরই ক্ষমতার বণ্টন সম্পর্কে সচেতন হতে হবে এবং নিজেদের মধ্যে ভ্রাতৃত্ববোধ বজায় রাখতে হবে। এ বিষয়ে এতটাই গুরুত্ব দেওয়া দরকার যাতে না জেনেও কেউ কখনও কারও এলাকায় ঢুকে না পড়ে।

প্রধানমন্ত্রী-

**বিচার বিভাগ, আইন বিভাগ এবং শাসন বিভাগ আদতে গণতন্ত্র নামক পরিবারের তিন সদস্য। পরিবারকে আরও সুদৃঢ় করতে তিনটি বিভাগকেই এক সঙ্গে কাজ করতে হবে। আরও পড়ুন- ‘সংবিধানকে মান্যতা দিক প্রশাসন, নাগরিক’, বার্তা প্রধানমন্ত্রীর

অ্যাটর্নি জেনারেল-

**জনস্বার্থ মামলার অপব্যবহার হচ্ছে। কোন ধরনের জনস্বার্থ মামলা আদালত গ্রহণ করবে সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট নির্দেশিকা থাকা দরকার। উদাহরণ স্বরূপ বলা যেতে পারে টু জি মামলার কথা। এই মামলায় আদালতের নির্দেশে দেশের অর্থনীতি এবং বৈদেশিক বিনিয়োগ ধাক্কা খায়। এ ধরনের বিষয়ে নির্দেশ দেওয়ার আগে আদালতের উচিত সরকারের সঙ্গে কথা বলা।

.