বোলারদের খারাপ ফর্মে দু:চিন্তায় জ্যোতিষীর কাছে ধোনি! তারপর...

সকালবেলাটাই নাকি কী সারাদিন কেমন যাবে তার ইঙ্গিত দিয়ে দেয়। কথাটায় মনে হয় বিশ্বাস করেন মহেন্দ্র সিং ধোনি। তাই দক্ষিণ আফ্রিকায় বিরুদ্ধে প্রথম ওয়ানডেতে ১৪১ রানে হারের পর আরও কোনও ঝুঁকি না নিয়ে ধোনি চললেন এক জ্যোতিষীর কাছে। গতকাল ভারতীয় বোলাররা শেষ ৬ ওভারে দিয়েছে ১০০ রান।

Updated By: Dec 6, 2013, 07:38 PM IST

পার্থ প্রতিম চন্দ্র

সকালবেলাটাই নাকি কী সারাদিন কেমন যাবে তার ইঙ্গিত দিয়ে দেয়। কথাটায় মনে হয় বিশ্বাস করেন মহেন্দ্র সিং ধোনি। তাই দক্ষিণ আফ্রিকায় বিরুদ্ধে প্রথম ওয়ানডেতে ১৪১ রানে হারের পর আরও কোনও ঝুঁকি না নিয়ে ধোনি চললেন এক জ্যোতিষীর কাছে। গতকাল ভারতীয় বোলাররা শেষ ৬ ওভারে দিয়েছে ১০০ রান।

যতই হোক এখনও ওয়ানডে সিরিজের দুটো ম্যাচ বাকি, তারপর টেস্ট সিরিজ। যেভাবে প্রথম ম্যাচে নাস্তানাবুদ হতে হল তাতে আশঙ্কা বাড়ছে নেলসন ম্যান্ডেলার দেশ থেকে শূন্য হাতে ফিরতে হবে না তো! ভারতীয় দলকে সবচেয়ে বেশি ডুবিয়েছে বোলাররা। ভারতীয় বোলাররা এখন প্রতি ওয়ানডে ম্যাচে ৩০০-৩৫০ রান দেওয়াটা অভ্যাসে পরিণত করেছে।

তাই ধোনি তাঁর পুরো দলকে নিয়ে দ্বারস্থ হলেন জোহানেসবার্গের এক জ্যোতিষীর কাছে। সেই জ্যোতিষীর সঙ্গে কী কথা হল ধোনির শুনে নেব---

ধোনি একে একে জ্যোতিষীর চেম্বারে নিয়ে গেলেন দলের বোলারদের, জ্যোতিষ বলতে লাগলেন দক্ষিণ আফ্রিকায় কেমন কাটবে আগামি কটা দিন, কিই বা প্রতিকার খারাপ সময়ের।

ধোনির সঙ্গে প্রথমেই গেলেন মোহিত শর্মা- (জোহানেসবার্গে ১০ ওভার বল করে ৮১ রান দিয়েছেন)

ধোনি- এই যে গুরুজি, ওর নাম মোহিত শর্মা। আইপিএলে আমার দলের হয়ে দারুণ বল করেছে। তাছাড়া ওর বলের গতিতে একবার পরাস্ত হয়েছিলেন স্বয়ং সচিন তেন্ডুলকরও। তাই ওকে এই সফরে সাহস করে নিয়ে এলাম।

জ্যোতিষ-- ও সাহসটা মনে হয় বেশিই দেখিয়েছো। এমন পরিবেশে এত বড় একটা দলের বিরুদ্ধে অভিজ্ঞতা ছাড়া নিয়ে আসাটা সাহসের ব্যাপার। দক্ষিণ আফ্রিকা এমন এক দেশ যেখানে ক্রিকেট বড় নির্দয়, পিচ বড় নির্দয়। তাছাড়া আমাদের দেশে ডিভিলিয়ার্স, কালিসরা ওর মত অনভিজ্ঞ বোলারকে ফায়দা তুলে নেওয়ার কায়দাটা বর্ণপরিচয়ের মত জানে। ভয় পেলে ও শর্ট বল বেশি করছে, বলের জোর বাড়তে গিয়ে লেন্থ ভুল হচ্ছে। বাকি দুটো ওয়ানডেতে প্রথম তিন ওভারের মধ্যে উইকেট না পেলে ওই সবচেয়ে বেশি রান দেবে। পারলে ওকে বাকি দুটো ওয়ানডেতে ডাক আউটে রেখে দাও। ওর এখন শেখার সময়। তাছাড়া ও তো টেস্ট দলে নেই।

ধোনি (এবার নিয়ে এলেন ভুবনেশ্বর কুমারকে)- এই যে বোলিংয়ে আমার তুরুপের তাস। বয়স মাত্র ২৩, কিন্তু ওর বোলিংটা খুব ক্ষুরধার। তবে বৃহস্পতিবার প্রথম ওয়ানডে-তে ভুবি রান দিয়েছে ৯ ওভারে ৬৮, উইকেট একটাও পায়নি।

জ্যোতিষ--হুঁ, বুঝলাম। তোমায় বলে রাখি ও যদি এই সফরে ফ্লপ হয় তোমরাও ফ্লপ হবে। জাহিরের সঙ্গে ওকে নেটে আরও সময় কাটাতে বল। ডেথ বোলিংয়ে ও এত নাভার্স হয়ে পড়ছে কেন! ওর সঙ্গে আলাদা করে কথা বল। ওর সমস্যাটা হল ও অনেক কিছু একসঙ্গে চেষ্টা করছে, প্রথম তিন ওভারের মধ্যে উইকেট না পেলে ও দিশেহারা হয়ে পড়ে। তুমি ওর পরিসংখ্যানটা দেখো তো, ও কি ইনিংসের প্রথম কুড়ি বলে উইকেট না পেলে সেই ওয়ানডে-তে খুব মার খায়! আমি তো ওর ইতিহাস জানি না, যদি সত্যি হয় তাহলে বলব বাকি দুটো ওয়ানডে-তে ওর ওভারে আরও আক্রণাত্মক হও।

ধোনি এবার নিয়ে এলেন মহম্মদ সামিকে-এই যে ওর নাম সামি। খুব পরিশ্রমী, আর ভাল ছেলে। আর সবার সেভাবে চোখে পড়ে না। কিন্তু ও ওর কাজটা নীরবে দারুণভাবে করে যায়। কাল ও পরপর দুটো উইকেট তুলে এনে আমাদের ম্যাচে ফিরিয়ে এনেছিল, শেষ অবধি ও তিনটে উইকেট পায়।

জ্যোতিষ--চিন্তা কর না, এই ছেলেটা তোমায় ডোবাবে না। বাকিদের সাহায্য পেলে ও ম্যাচ উইনিং বোলার হবে।

ধোনি এবার নিয়ে এলেন রবিচন্দ্রন অশ্বিনকে-আমাদের দেশে অশ্বিন সবার আগে ১০০ উইকেটে মালিক হয়েছে। সেই অশ্বিনকে নিয়ে আমাদের অনেক আশা স্পিনের মোহজালে ও দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটসম্যানদের বেধে রাখবে। কিন্তু প্রথম ওয়ানডে-তে ও হতাশ করেছে। ১০ ওভারে কোনও উইকেট না দিয়ে খরচ করেছে ৫৮ রান।

জ্যোতিষ-- ১০০টা উইকেটের মধ্যে কটা বিদেশের মাটিতে সেটা কিন্তু বলনি। এটা ঠিক যে স্পিন বোলিং তোমাদের সেরা অস্ত্র। আমাদের দেশের ব্যাটসম্যানরাও স্পিনে দারুণ একটা স্বচ্ছন্দ নয়। তবে কী জানো আইপিএলের দয়ায় এখন আর আমরা স্পিনকে এত ভয়ও পাই না। ডিভিলিয়ার্স জলভাতের মত সহজে খেলে দিতে পারে বড়বড় স্পিনারদের। তবুও বলব স্পিনের জালে দক্ষিণ আফ্রিকাকে বেধে ফেলা যায়। ওকে বলটা আরও হাওয়ায় রাখতে বল, টার্ন আর বাউন্স আদায় করতে বল। আমার গণনা বলছে রবিবার ডারবানেও হতাশ করবে না। ডারবানে দ্বিতীয় টেস্টেও ও বাল বল করবে। তবে ম্যাচ উইনিং স্পেলটা করতে পারবে কি না সেটা আমার গণনায় এখনও ধরা পড়ছে না।

ধোনি এবার নিয়ে এলেন রবীন্দ্র জাদেজাকে- জাদেজা হচ্ছে এখন ক্রিকেট বিশ্বের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার। বল হাতে ও জাদু দেখিয়েছে। তবে প্রথম ওয়ানডে তে ব্যর্থ। ৮ ওভারে কোনও উইকেট না দিয়ে খরচ করেছে ৫৮ রান। ব্যাট হাতেও ব্যর্থ

জ্যোতিষ-- হা হা... এই একটা জায়গায় আমার হাসি পেলো। আসলে কী জানো অলরাউন্ডার কথাটা বড় ভারি। অনেকেই বল- ব্যাট দুটোই করতে পারে বলে অলরাউন্ডার হয়। কেউ কেউ আবার বল-ব্যাট কোনওটাই ভাল না করে দুটোই করতে পারে বলে অলরাউন্ডার হয়। খুবই কম ক্রিকেটারই বল-ব্যাট দুটোই দারুণ করতে পারে বলে অলরাউন্ডার হয়। আমার গণনা বলছে ও প্রথম ধরনের অলরাউন্ডার। বল-ব্যাট দুটোই করতে পারে। কিন্তু কী জানো এই রকম উইকেটে না বল, না ব্যাট কোনওটাই দারুণ না জানলে সফল হওয়ার সম্ভাবনা কম। ওর অতীতটা দারুণ তবে কেন জানো মনে হচ্ছে এই সফরে ওর শনির দসা আছে। এটাও জানি এখনই ওর ওপর আস্থা হারানোর মত পরিসংখ্যান কারও হাতে নেই।

ধোনি- তাহলে সব মিলিয়ে কি বুঝছেন!
জ্যোতিষ--মনে হয় কপাল খারাপ। তবে তোমার হাতের লিখন খুব পরিষ্কার। কপাল আর হাত দুটো আলাদা কথা বলছে। তাই আমি বরং চুপ করলাম।

(সব ঘটনাই কাল্পনিক)

.