অবসরেও মাস্টারস্ট্রোক, কুর্নিশ সচিনকে...

 সকালবেলা খবরটা পেলাম। একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসরের কথা ঘোষণা করেছেন সচিন তেন্ডুলকর। কিছুক্ষণ হঠাৎ যেন থমকে গিয়েছিল চারপাশ। মনে হল যা! ইডেনের ভারত-পাক ম্যাচের টিকিট যে কেটে ফেলেছি। ইডেনে যাব খেলা দেখতে, কিন্তু ব্যাট হাতে নামবেন না সচিন? ধুর, তাও আবার হয় না কি? কিন্তু তারপরেই যেন সম্বিত ফিরে পেলাম। গত কয়েক দিন ধরে এটাই তো চাইছিলাম। চিরকাল যিনি ম্যাকগ্রা, মুরলীধরন, শেন ওয়ার্নের উপর কর্তৃত্ব করেছেন। মন্টি পানেসরের বলে বারবার তাঁর পরাজিত হওয়া মেনে নিতে পারছিলাম না। যখন দেখছিলাম কোথায় যেন পথভ্রষ্ট সেই স্বপ্নের রিফলেক্স, স্ট্রেট ডাইভে বোলারের মাথার উপর দিয়ে উদ্ধত ছয়, গ্যালারি মাতাল করা স্কোয়ার ডাইভ, হুক তখন মনে হচ্ছিল এ সচিনকে তো আমরা দেখতে অভ্যস্ত নই।

Updated By: Dec 23, 2012, 09:50 PM IST

রায়া দেবনাথ
সকালবেলা খবরটা পেলাম। একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসরের কথা ঘোষণা করেছেন সচিন তেন্ডুলকর। কিছুক্ষণ হঠাৎ যেন থমকে গিয়েছিল চারপাশ। মনে হল যা! ইডেনের ভারত-পাক ম্যাচের টিকিট যে কেটে ফেলেছি। ইডেনে যাব খেলা দেখতে, কিন্তু ব্যাট হাতে নামবেন না সচিন? ধুর, তাও আবার হয় না কি? কিন্তু তারপরেই যেন সম্বিত ফিরে পেলাম। গত কয়েক দিন ধরে এটাই তো চাইছিলাম। চিরকাল যিনি  ম্যাকগ্রা, মুরলীধরন, শেন ওয়ার্নের উপর কর্তৃত্ব করেছেন। মন্টি পানেসরের বলে বারবার তাঁর পরাজিত হওয়া মেনে নিতে পারছিলাম না। যখন দেখছিলাম কোথায় যেন পথভ্রষ্ট সেই স্বপ্নের রিফলেক্স, স্ট্রেট ডাইভে বোলারের মাথার উপর দিয়ে উদ্ধত ছয়, গ্যালারি মাতাল করা স্কোয়ার ডাইভ, হুক তখন মনে হচ্ছিল এ সচিনকে তো আমরা দেখতে অভ্যস্ত নই।
বারবার মাস্টার-ব্লাস্টার তাঁর নিন্দুকদের সব সমালোচনার জবাব দিয়েছেন তাঁর ব্যাট দিয়ে। কিন্তু সেই ব্যাটকেও বিগত বছরভর বড় অসহায় লেগেছে। সচিন যতবার ব্যর্থ হয়েছেন তাঁর সমালোচকদের সমালোচনা আরও তীক্ষ্ণ হয়েছে। সঞ্জয় মঞ্জরেকরের মত স্বঘোষিত সচিন বিরোধীরাতো ছিলেনই, কিন্তু এইবার সেই দলে নাম লিখিয়েছিলেন বহু সচিনপ্রেমী প্রাক্তনীরাও। সোশাল নেটওয়ার্কিং সাইট থেকে পাড়ার চায়ের দোকান উত্তাল হয়েছে তাঁর অবসর নিয়ে। আর আমরা যারা ক্রিকেট বলতে সচিন বুঝি, তারা এই সব সমালোচনায় ভিতরে ভিতরে রক্তাত হয়েছি। সচিন যতবার খেলতে নেমেছেন মনে মনে বলেছি দেখিয়ে দিন সচিন, আপনিই সেরা, বন্ধ করে দিন সব নিন্দুকদের মুখ। কিন্তু হতাশ হয়েছি প্রত্যেকবার। ক্ষতবিক্ষত হয়েছি। তারপর একদিন বিশ্বাস করতে শুরু করেছি বয়স ক্রিকেটের ভগবানের ফুটওয়ার্কেও থাবা বসাতে পারে। হ্যাঁ, চেয়েছি, ভীষণ ভাবে চেয়েছি, এই বার সরে যান সচিন। দেখিয়ে দিন সচিন তেন্ডুলকরের প্রস্থানটাও রাজকীয়। তিনি জানেন কোথায় দাঁড়ি টানতে হয়। তিনি জানেন খ্যাতির শিখরে থেকেও হেলায় রাজত্বটা ছেড়ে আসা যায়।'  লিটল মাস্টার সেই কাজটাই করে দেখালেন। সরে দাঁড়ালেন। সসম্মানে। একদিনের ক্রিকেট থেকে শুরু। এবার হয়ত পালা টেস্টের। জানি, সেখান থেকেও তিনি অবসর নেবেন। ঠিক সময়েই। তাই কুর্নিশ সচিন। আপনার খেলা বা পারফরম্যান্স নিয়ে মন্তব্য করার বাতুলতার অধিকার আমাদের নেই। কিন্তু আপনাকে কুর্নিশ এই সিদ্ধান্তের জন্য।
আমরা যারা আশির দশকের মধ্য ভাগে জন্মেছি, ভারতীয় হওয়ার সূত্রে অবধারিত ভাবে ক্রিকেটের প্রেমে পরেছি , তারা আরও সব কিছুর সঙ্গেই বেড়ে উঠেছি সচিনকে দেখে। তাঁকে দেখেই শিখেছি কোন শটটার কি নাম। শারজা থেকে অকল্যান্ড, ওয়াংখেড়ে থেকে ব্রিস্টল সচিনের একের পর এক কৃতিত্বেকে চাক্ষুষ করার সৌভাগ্যের ভাগীদার হয়েছি। দেখিছি কী ভাবে তিনি একের পর এক মাইলস্টোন অতিক্রম করেছেন। গড়ে তুলেছেন নতুন নতুন সব রেকর্ড। বিস্মিত হয়েছি, গর্বিত হয়েছি। দীর্ঘ ২৩ বছর ধরে যিনি বিশ্ব ক্রিকেটকে সমৃদ্ধ করেছেন, সাক্ষী থেকেছি কী ভাবে তাঁর প্রতিদ্বন্ধীরা পালটে গেছে, কিন্তু তাঁর আসন টলাতে পারেননি কেউই। নিজেকে ঠিক এতটাই উচ্চে নিয়ে গেছেন যেখান থেকে তিনি যদি আর একটি রানও না করেন তাহলেও তাঁর শ্রেষ্ঠত্ব নিয়ে প্রশ্ন তোলার ধৃষ্ঠতা নেই কারও। কিন্তু শুধু ক্রিকেট দিয়ে সচিনকে বিচার করা ভুল হবে বোধহয়। তিনি গোটা একটা প্রজন্মকে দেখিয়ে দিয়েছেন প্রতিভার সঙ্গে অপরিসীম অধ্যাবসায় এসে যুক্ত হলে মানুষের উত্থান ঠিক কোন চরম সীমায় পৌঁছাতে পারে। 
এটা ঠিকই একদিনের ২২গজে আমরা সচিনকে মিস করব। যতদিন একদিনের ক্রিকেট বেঁচে থাকবে ঠিক ততদিন তাঁকে বোধহয় মিস করবে গোটা ক্রিকেট বিশ্ব। কিন্তু সম্মান জানবো তাঁর সিদ্ধান্তকে। তার সঙ্গেই একটাই কথা, ধন্যবাদ সচিন, আমাদেরকে যা দিয়েছেন, যতটুকু দিয়েছেন, তার সবটুকুর জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। আর বছর শেষে যে মাস্টারস্ট্রোকে তিনি তাঁর নিন্দুকদের মুখে কুলুপ আঁটলেন, ধন্যবাদ তার জন্যও। এত বছর ধরে দেশকে জিতিয়েছেন তিনি, আজ অবসরের সঙ্গে জিতিয়ে দিয়ে গেলেন আমাদের, সেই তাদের যারা এখনও ক্রিকেট বলতে সচিনকেই বুঝি। ধন্যবাদ তার জন্যেও।   
       

.