কাপ জিতুক আর্জেন্টিনাই- কেন! পাঁচটা কারণ

কাপ জিতুক আর্জেন্টিনাই- কেন! পাঁচটা কারণ

Updated By: Jul 13, 2014, 07:37 PM IST

আর্জেন্টিয়দের মনের কথা লিখছেন পার্থ প্রতিম চন্দ্র
-----------

আজ সেই দিন। চার বছর ধরে চাতক পাখির মত অপেক্ষা করে থাকার রাত। বিশ্বকাপের ফাইনালে মুখোমুখি আর্জেন্টিনা-জার্মানি। কে জিতবে আজকে। পৃথিবীর সবচেয়ে দামী প্রশ্ন এটাই। আসুন দেখেনি আর্জেন্টিনার বাসিন্দারা কেন বলছেন ব্রাজিল বিশ্বকাপ ২০১৪ আর্জেন্টিনারই জেতা উচিত--

১) মেসির জন্য--লিওনেল মেসি আমাদের দেশে এখন এমন একজন যে ছেলেটার মুখ দেখলে আমরা সব দুঃখ ভুলে যাই। বিশ্বাস করুন আমাদের দেশের এত কষ্ট, এত বেদনার মাঝেও ভাল থাকার একটা বড় কারণ হাসি আর মেসি। ওর আনন্দে সবচেয়ে বেশি খুশি হই ও নিজে নয় আমরা। ওর ব্যথা কখন যেন গোটা দেশের, গোটা জাতির ব্যথা হয়ে যায়। চ্যাম্পিয়ন্স লিগ, স্প্যানিশ লিগ সব জিতলেও বলা হয় মেসি সর্বকালের সেরা নয় কারণ ও বিশ্বকাপ জেতেনি। এই না পাওয়াটা আজ সম্পূর্ণ হবে, এটা শুধু আমাদের, আর্জেন্টিনা কিংবা মেসি ভক্তদরে নয় ফুটবলের জন্যও খুব দরকার। সারা বিশ্বকাপে ও যা খেলেছে তাতে কাপটা না পাওয়াটা অন্যায় হবে। মুলার, ক্লোসে, লামদের প্রতি কোন রাগ নেই, বরং শ্রদ্ধা রেখেই বলছি, তোমার অন্য কোনও বার, এবার কাপটা মেসির বরং হোক।

২) দেশের অর্থনীতি--আমাদের দেশের অর্থনৈতিক দূরাবস্থা নিয়ে গোটা বিশ্বে এত আলোচনা হয় ওসব নিয়ে আলাদা করে কিছু বলব না। আমাদের দেশে বেকার দিন দিন বাড়ছে, সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে হাহাকার, আর খিদের জ্বালা। আমাদের সরকার চেষ্টা করছে, আমরাও চেষ্টা করছি। বিশ্বাস করুন আজ বিশ্বকাপটা জিততে পারলে আমরা সব ভুলে যাব, আমাদের দেশের ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াইয়ে আমাদের চোয়াল আরও শক্ত হবে। সবচেয়ে বড় কথা এই বিশ্বকাপ আমাদের দেশকে বদলে দেবে। জার্মানি তো অনেক উন্নত, অর্থনৈতিক দিক থেকে সমৃদ্ধশালী দেশ। ওদের কাছে বিশ্বকাপ জেতাটা শুধু গর্বের, আনন্দ-উচ্ছ্বাস আর শোকেসে সাজিয়ে রাখার জন্য। আর আমাদের কাছে ওই কাপটা ভেসে ওঠার লড়াইয়ের অস্ত্র, বুকে জমে থাকা বেদনার ওষুধ,আমরাও পারি বলার যন্ত্র।

৩) দীর্ঘ অপেক্ষা--১৯৯০ ইতালি,৯৪ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র,৯৮ ফ্রান্স,২০০২ দ.কোরিয়া-জাপান, ২০০৬ জার্মানি,২০১০ দ.আফ্রিকা। একে একে ছটা বিশ্বকাপে আমরা কাপ জিততে পারেনি। অথচ ওই ছটা বিশ্বকাপেই আমরা কাপ জেতার ব্যাপারে ফেভারিট ছিলাম। ওই ছটা বিশ্বকাপের মধ্যে অনন্ত চারটেতে তো খাতায় কলমে বাকি সবার চেয়ে আমরা এগিয়ে ছিলাম। কিন্তু কখনও কোচের ভুল স্ট্র্যাটেজি, কখনও ফুটবলারদের অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস, আর বেশিরভাগ সময়ই আমাদের খারাপ ভাগ্য কাপ জিততে দেয়নি। বিশ্বাস করুন এই ২৮টা বছর আমাদের বুকে শুধু হতাশা আর হাহাকার জমে আছে। আমরা ফুটবলের দেশে, ফুটবল আমাদের ধর্ম-জাতি। অথচ আমরা ২৮ বছর কাপ জিতিনি, এটা মানায় না। ফুটবলের হিসাবেও বড় বেমানান। তাই এবার আমরাই...

৪) মারাদোনার আবেগ-- ফুটবলার হিসাবে পেলে বড় না মারাদোনা, সেই কচকচানিতে যাব না। আমি আর্জেন্টিনার লোক, তাই বলব মারাদোনা বড়। কিন্তু আজ ওসব থাক। আজ অন্যরকম একটা দিন। ১৯৯৪ সালে বিশ্বকাপে নাইজেরিয়া ম্যাচের পর যখন মারাদোনা কাঁদতে কাঁদতে মাঠ ছাড়েন তখন গোটা দেশ কেঁদেছিল। আর ২০১০ বিশ্বকাপে কোয়ার্টার ফাইনালে জর্মানির কাছে হারের পর কোচ মারাদোনার কাঁদো কাঁদো মুখ দেশকে লড়াইয়ের প্রেরণা দিয়েছিল। আমাদের দেশের ফুটবল সংস্থার প্রেসিডেন্ট জুলিও গ্রোনদোনার সঙ্গে মারাদোনার সম্পর্কটা আদায়-কাঁচকলায়। মারাদোনা মাঠে থাকলে নাকি আর্জেন্টিনা হারে, এমন কথা রটিয়ে দিয়েছেন গ্রোনদোনা। কিন্তু বিশ্বাস করুন ৯৪ বিশ্বকাপে কাঁদতে কাঁদতে মাঠ ছাড়ার পর যতগুলো বিশ্বকাপ হয়েছে প্রতিটার পর মারাদোনা কেঁদেছে। কখনও সেটা ক্যামেরায় ধরা পড়েছে, কখনও পড়েনি। আজ সেই দিন যেদিন মারাদোনা কাঁদবেন খুশিতে, এটাও একটা বড় কারণ আজ আমাদের কাপ জেতার।

৫) হয় এবার, নয়...-- আমাদের ফুটবল পরিকাঠামো ইউরোপের দেশের মত নয়। ব্রাজিলে এসেও দেখলাম ওদের পরিকাঠামো দারুণ উন্নত। আমাদের দেশে ফুটবলার প্রচুর, প্রতিভাও অনেক। কিন্তু এগুলো থাকলেই তো হবে না, প্রতিভা কাজে লাগাতে লাগে উন্নত পরিকাঠামো। আমাদের দেশের যা অর্থনৈতিক হাল তাতে আমরা ক্রমশ পিছিয়ে পড়ছি। তা ছাড়া ঘরোয়া ফুটবলের হাল দেখে বলছি আগামী তিনটে বিশ্বকাপে আমাদের আশা খুবই কম। জার্মানির ফুটবল পরিকাঠামো স্বর্গের বাগানের মত বললেও কম বলা হবে। একেবারে সিস্টেমেটিক, ছকে বাঁধা। বায়ার্ন মিউনিখ ক্লাবের সাফল্য তো সবারই জানা। ক্লোসে অবসর নিলেও ওর মত পাঁচটা ফুটবলার তৈরি করে নেওয়ার পরিকাঠামো, সিস্টেম জার্মানির আছে। আমাদের নেই। তাই এবার আমরা কাপটা নিয়ে যাই, জার্মানরা না হয় অন্য কোনও বার জিতুক।
তাছাড়া আমরা তো এবারের বিশ্বকাপে দারুণ খেলেছি। খেয়াল করেছেন কী, আমরা কিন্তু নক আউট পর্বে একটাও গোল খায়নি। জার্মানরা কিন্তু আলজেরিয়ার কাছে গোল খেয়ে চাপে পড়ে গিয়েছিল।

.