পাকিস্তানেই ছিলেন দাউদ, স্বীকারোক্তি শরিফের বিশেষ দূতের

পাকিস্তানেই ছিল দাউদ ইব্রাহিম। দুই দশকে  প্রথম একথা স্বীকার করল ইসলামাবাদ। এই স্বীকারোক্তি শোনা গেছে খোদ পাক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের বিশেষ দূত শাহরিয়ার খানের মুখ থেকে। যদিও তাঁর দাবি, এখন আর পাকিস্তানে নেই কুখ্যাত এই গ্যাংস্টার। পাক ভূখণ্ড থেকে তাঁকে বের করে দেওয়া হয়েছে।   লন্ডনে এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়েই বোমাটা ফাটালেন শাহরিয়ার খান।

Updated By: Aug 10, 2013, 09:23 AM IST

পাকিস্তানেই ছিল দাউদ ইব্রাহিম। দুই দশকে  প্রথম একথা স্বীকার করল ইসলামাবাদ। এই স্বীকারোক্তি শোনা গেছে খোদ পাক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের বিশেষ দূত শাহরিয়ার খানের মুখ থেকে। যদিও তাঁর দাবি, এখন আর পাকিস্তানে নেই কুখ্যাত এই গ্যাংস্টার। পাক ভূখণ্ড থেকে তাঁকে বের করে দেওয়া হয়েছে।   লন্ডনে এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়েই বোমাটা ফাটালেন শাহরিয়ার খান।
বললেন,``পাকিস্তানেই ছিল দাউদ। কিন্তু আমার বিশ্বাস ওকে পাকিস্তান থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে। যদি দাউদ এখনও পাকিস্তানে থাকত তাহলে ওকে খুঁজে বের করে গ্রেফতার করা হত। দাউদের মতো গ্যাংস্টারকে পাকিস্তানের মাটি থেকে কাজ চালাতে দিতে পারি না আমরা।``
বর্ষীয়ান পাক কূটনীতিকের মুখে এই স্বীকারোক্তি নিঃসন্দেহে চাঞ্চল্যকর। একইসঙ্গে তাত্‍পর্যপূর্ণও।
 
পাকিস্তানে নেই দাউদ। এখন তাহলে কোথায়? এই প্রশ্নেরও জবাব পাওয়া গেল শাহরিয়ার খানের কাছেই।
পাকিস্তানের প্রাক্তন বিদেশ সচিবের বক্তব্য, ``আমার ধারণা সংযুক্ত আরব আমিরশাহিতে আছে দাউদ। নওয়াজ শরিফ সরকার সবসময়ই অপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার পক্ষে। শুধু পাকিস্তান নয়, যারা অন্যান্য দেশেও হামলা চালাচ্ছে, তা ভারতই হোক বা আফগানিস্তান কিংবা অন্য কোনও দেশ, তারা রেহাই পাবে না। দেশের ভিতরে অপরাধীদের বাড়বাড়ন্ত হতে দিতে পারি না আমরা। তারা পাকিস্তানে পা রাখলে আমরা ব্যবস্থা নেব। আমার মনে হয় এই কারণেই দাউদ পাকিস্তান ছেড়ে চলে গেছে।``
পাকিস্তানে দাউদ ইব্রাহিমের উপস্থিতি নিয়ে বহুবছর ধরে সরব ভারত। বারবার তথ্যপ্রমাণ দেওয়া হলেও তা অস্বীকার করে এসেছে ইসলামাবাদ। তাহলে আচমকা কী এমন হল যে পাক প্রশাসনের এক শীর্ষআমলা সংবাদমাধ্যমের সামনে একথা মেনে নিলেন?
শাহরিয়র খানের কথায়, দাউদ ইব্রাহিম এখন আর পাকিস্তানে নেই। কিন্তু একসময় ছিলেন। অথচ যখন ছিলেন, তখন তা স্বীকার করেনি ইসলামাবাদ। বারবার তথ্য-প্রমাণ দিয়েছে ভারত। চাপ এসেছে আমেরিকার দিক থেকেও। কিন্তু পাকিস্তান অটল থেকেছে নিজের অবস্থানে। দু-দশকে এই প্রথম বদলে গেল সেই অবস্থান।
 
মুম্বই বিস্ফোরণ বদলে দিয়েছিল দাউদ ইব্রাহিমের ঠিকানা। ভারত থেকে সোজা পাকিস্তান।
করাচির অভিজাত ক্লিফটন রোডে রাজার হালে রাখা হয় মুম্বই বিস্ফোরণের মাস্টারমাইন্ডকে। যার প্রমাণ আইবি-র রিপোর্ট। ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা জানিয়েছিল,
করাচিতে দাউদ এবং তার ভাই অনিস চব্বিশ ঘণ্টাই আইএসআই-এর কড়া নিরাপত্তাবেষ্টনীতে থাকত। নিরাপত্তার দায়িত্ব ছিল প্যারামিলিটারি বাহিনীর হাতে। দাউদের কনভয়ে ছ থেকে আটটি বুলেটপ্রুফ ল্যাণ্ড ক্রুসার থাকতই। ক্লিফটনে দাউদের বাংলোর চারধারে ছিল ব্যারিকেড। থাকত পুলিস পিকেট। সাধারণের জন্য নিষিদ্ধ ছিল ক্লিফটনের দাউদ-নিবাস।
 
শোনা যায়, দাউদকে আইএসআইয়ের কাছাকাছি আনার পিছনে হাত ছিল টাইগার মেমনের। করাচিতে দাউদের থাকা-খাওয়ার বন্দোবস্তও করে দেয় তার এই বিশ্বাসী সহযোগী।
এরপর আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি ডি-কোম্পানির সর্বেসর্বাকে। করাচিতে বসেই মাদক ব্যবসা থেকে অস্ত্র-কারবার, হাওয়ালায় কোটি কোটি টাকার লেনদেন, বেআইনি প্রায় সব কাজই নির্বিঘ্নে চালিয়ে গিয়েছেন ডি-কম্পানির প্রধান। পাশাপাশি দাউদ ইব্রাহিম হয়ে ওঠে সন্ত্রাসের মুখ।  
২০০২-এ ভারতে সংসদ-হামলাই হোক, কিংবা দুহাজার আটের মুম্বই হামলা, সবের পিছনে দাউদের হাত থাকার প্রমাণ মিলেছে। ভারতীয় ভুখণ্ডে একের পর এক নাশকতার ছক-প্রস্তুতি সমস্তটাই হয়েছে সীমান্তপারের নিরাপদ আশ্রয়ে বসে।
গোয়ন্দা তথ্য, কূটনৈতিক চাপ, এত কিছু সত্ত্বেও পাক ভুখণ্ডে দাউদের অস্তিত্বের কথা কিন্তু গত দুদশকে একবারও স্বীকর করেনি ইসলামাবাদ। নয়াদিল্লির দেওয়া তথ্য-প্রমাণ বারবার অগ্রাহ্য করেছে পাকিস্তান। দুহাজার দুইয়ে পাকিস্তানকে যে কুড়ি জন মোস্ট ওয়ান্টেড সন্ত্রাসবাদীর তালিকা ধরিয়ে দেয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, তার একনম্বরে ছিল দাউদ ইব্রাহিমের নাম।
সেইসময় আমেরিকার চাপেও দমেনি ইসলামাবাদ। পাক ক্রিকেটার জাভেদ মিয়াদাদের ছেলের সঙ্গে দাউদ-কন্যার রাজসিক বিবাহ-পর্ব পাকিস্তানে দাউদের উপস্থিতি প্রমাণ করেছে। কিন্তু তখনও মুখে কুলুপ এটেছিল পাক প্রশাসন। ক্ষমতা বদল হলেও, কখনই বদলায়নি দাউদ-ইস্যুতে তাদের অবস্থান। দুদশক পর শেষ পর্যন্ত দাউদ ইস্যুতে মুখ খুলল পাকিস্তান। নওয়াজ শরিফ সরকারের তরফে গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ, তাতে সন্দেহ নেই। যদিও এই উদ্যোগ নিতে পাকিস্তানের দুদশক সময় কেন লেগে গেল, তা নিয়ে প্রশ্ন কিন্তু থেকেই যাচ্ছে। 
পুঞ্চে পাক সেনার হাতে পাঁচ ভারতীয় জওয়ানের হত্যাকাণ্ডের জেরে এমুহুর্তে দুদেশের সম্পর্ক বেশ উত্তপ্ত। বৃহস্পতিবার সৌদি আরব সফর শেষ করে দেশে ফিরেই পাক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ তড়িঘড়ি এনিয়ে জরুরি বৈঠক করেন। তার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে শরিফেরই বিশেষ দূত শাহরিয়ার খানের মুখে দাউদ-স্বীকারোক্তি কী ক্ষতে প্রলেপ লাগানোর চেষ্টা? পাকিস্তান সন্ত্রাসবাদের মদতদাতা নয়, এটাই কি প্রমাণ করার চেষ্টায় পাক প্রশাসন? নাকি গোটাটাই আসলে পুঞ্চকাণ্ড থেকে নজর ঘুরিয়ে দেওয়া কৌশল?
 

.