তাঁর হাতে ফলবে না আর কোনও আপেল

প্রযুক্তিবিশ্বে শেষ হয়ে গেল একটি অধ্যায়ের। চলে গেলেন অ্যাপলের প্রতিষ্ঠাতা স্টিভ জোবস।

Updated By: Oct 6, 2011, 10:50 AM IST

প্রযুক্তিবিশ্বে শেষ হয়ে গেল একটি অধ্যায়ের।
চলে গেলেন অ্যাপলের প্রতিষ্ঠাতা স্টিভ জোবস। সেটা অবশ্যম্ভাবীও ছিল। অপেক্ষা ছিল শুধু সময়ের। বুধবার সেই খবরটা এলও। তবু অগ্ন্যাশয়ের ক্যান্সারে জর্জরিত স্টিভ জোবসের মৃত্যু নাড়িয়ে দিয়ে গেল গোটা বিশ্বকে। 
আবেগ চেপে রাখতে পারেননি প্রেসিডেন্ট ওবামা। স্টিভ জোবসকে অন্যতম শ্রেষ্ঠ মার্কিন আবিষ্কর্তা আখ্যা গিয়ে তিনি তাঁর 
মৃত্যুকে এক দ্রষ্টার প্রয়াণ বলে শোকবার্তা ব্যক্ত করেছেন। ওবামার ভাষায়, অসামান্য সাহস নিয়ে জোবস দেখিয়েছিলেন, তিনিই এই দুনিয়া বদলাতে পারেন। আর অ্যাপলের প্রতিদ্বন্দ্বী মাইক্রোসফট কর্পোরেশনের যুগ্ম প্রতিষ্ঠাতা বিল গেটস স্মৃতিচারণায় বলেছেন, জোবসের সঙ্গে কাজ করতে পারার সুযোগ পাওয়াটা অসামান্য সৌভাগ্যের ব্যাপার। স্টিভের মতো এমন সুদূরপ্রসারী প্রভাব এই দুনিয়ায় প্রায় বিরল।
স্টিভের মৃত্যুতে শোকার্ত তাঁর দুনিয়াজোড়া অসংখ্য অনুরাগীও। হয়তো বলাটা একটু ভুল হল, তাঁর সৃষ্টির অনুরাগীরা। 
জন্ম সান ফ্রানসিসকোয়।
পরে পল এবং ক্লারা নামে এক মার্কিন দম্পত্তির দত্তক-সন্তান হিসেবে বেড়ে ওঠেন ক্যালিফোর্নিয়ার মাউন্টেন ভিউয়ে। হোমস্টিড হাইস্কুলে থাকাকালীনই পাওলো অল্টোয় এইচপি বা হিউলেট-প্যাকার্ড কোম্পানিতে কম্পিউটার-প্রযুক্তির ক্লাস করতে যেতেন। পরে সেখানে গ্রীষ্মকালীন কর্মী হিসাবে যোগ দেন। উনিশশো বাহাত্তরে স্কুলপর্ব শেষ করে ভর্তি হন ওরেগন, পোর্টল্যান্ডের রিড কলেজে। কিন্তু এক সেমস্টারের পরেই ছেড়ে দিলেন পড়াশোনা। সেই সময় দুবেলার খাবার যোগাড় করতে হিমশিম দশা জোবসের। পরে নিজেই বলেছেন, কলেজ না ছাড়লে হয়তো অ্যাপলকে আজকে দেখতে যেমন, সেটা কল্পনা করাই সম্ভব হত না। এরপর দুয়েকটি সংস্থায় কম্পিউটার, ভিডিও গেমস নিয়ে কাজকর্ম করেছেন। তারপর ভারতে আসেন এবং ফিরে যান বৌদ্ধধর্মে দীক্ষিত হয়ে। উনিশশো ছিয়াত্তরে প্রাক্তন সহকর্মী, দীর্ঘদিনের বন্ধু এবং হ্যাকার স্টিভ ওজনিয়াককে সঙ্গে নিয়ে তৈরি করলেন অ্যাপল। সেদিন তাঁর সঙ্গে ছিলেন রোনাল্ড ওয়্যান, এসি. মাইক মারক্কুলা জুনিয়রও। তারপর একে একে বিভিন্ন নামীদামি ব্যক্তিত্বদের বিভিন্ন সংস্থা থেকে নিয়ে আসেন নিজের সংস্থায়। এবং উনিশশো চুরাশির চব্বিশে জানুয়ারি শেয়ার হোল্ডারদের বার্ষিক বৈঠকে উত্‍‍সুক শ্রোতাদের সামনে জোবস উপস্থাপিত করলেন ম্যাকিনটস সফটওয়্যার। এরপর নিজেরই কোম্পানির সঙ্গে মনোমালিন্য হওয়ায় অ্যাপল থেকে পদত্যাগ করেন জোবস। পরে বলেছিলেন, কাজ হারানোর পর এই সময়ে তাঁর জীবনে যে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছিল, সেটাই তাঁর সবচেয়ে সৃষ্টিশীল পর্বের প্রেরণা। 
উনিশশো পঁচাশিতে মাত্র সত্তর লক্ষ ডলার নিয়ে তৈরি করেন নেক্সট কম্পিউটার। উনিশশো সাতানব্বইয়ে যা কিনে নেয় অ্যাপল এবং এখন MAC-এ যে অ্যাপল স্টোর, মোবাইল মি সার্ভিসেস এবং আইটিউন স্টোর রয়েছে, সে সবই নেক্সটের অবদান। শুধু তা-ই নয়, NEXTSTEP-ই বিবর্তিত হয়ে তৈরি হয় Mac OS X। এ ভাবেই অ্যাপলের প্রতিষ্ঠাতার প্রত্যাবর্তন ঘটল নিজের পুরনো সংস্থায়, শীর্ষকর্তার ভূমিকায়। দুহাজার এগারোয় কোম্পানির সিইও-র পদ থেকে ইস্তফা দিলেও বোর্ড অফ ডাইরেক্টর্সে চেয়ারম্যানের পদে আসীন ছিলেন তিনি। বছরে মাত্র এক ডলার বেতন নিতেন
কিন্তু হাতে ছিল কোম্পানির পঞ্চাশ লক্ষেরও বেশি এবং ডিজনির তেরো কোটি আশি লক্ষ শেয়ার। ফোর্বসের দুহাজার দশের হিসাব অনুযায়ী জোবসের সম্পদের পরিমাণ ছিল প্রায় সাড়ে আটশো কোটি ডলার। সারা জীবনে ন্যাশনাল মেডাল অফ টেকনোলজি, জেফারসন অ্যাওয়ার্ড ফর পাবলিক সার্ভিস, ক্যালিফোর্নিয়া হল অফ ফেমের মতো বহু সম্মানে ভূষিত হয়েছেন জোবস।
তাঁর অভাব শুধু প্রযুক্তিবিশ্বে নয়, খোদ অ্যাপলের অন্দরেও অনুভূত হচ্ছে এরই মধ্যে। তাঁর প্রয়াণের সামান্য আগে অ্যাপল নিয়ে এল আই ফোন 4S। চোদ্দোই অক্টোবর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে আত্মপ্রকাশ করার কথা তার। কিন্তু তার আগে বেশ ভালরকম সমালোচনার মুখে সিইও টিম কুকের এই প্রথম প্রোডাক্ট। আই ফোন 4S-এর প্রকাশ নিয়ে টিম কুককে বেশ
উচ্ছ্বসিত শোনালেও সাধারণ মানুষ কিন্তু তাঁর এই উদ্যোগকে ভাল ভাবে নেননি। অভিযোগকারীদের বক্তব্যে পাকাপোক্ত যুক্তি থাক আর না-ই থাক, একটা কথা কিন্তু স্পষ্ট। টিম কুকের জায়গায় যদি স্টিভ জোবস থাকতেন, তা হলে হয়তো এই প্রতিক্রিয়াই অন্যরকম হতে পারত। কারণ, অনেকেই জানিয়েছেন, 4S-এর লঞ্চে তাঁরা আশা করেছিলেন, টিম কুকের পাশে হাজির থাকবেন জোবসও।
তাঁদের প্রিয় স্টিভ জোবস। তাঁর হাতে ফলবে না আর কোনও আপেল।

.