বীরভূম: লড়াই যেখানে শুধু রাজনীতির নয়, লড়াইটা ইগোরও

কোনও বিরাম নেই। আগুন জ্বলছে বীরভূমে। সাত্তোর, পাড়ুই, মাকড়া, চৌমণ্ডলপুর-মানুষ এক ডাকে চেনে। বীরভূমের খবর মানেই এখন যেন   মুখ থুবরে পড়ে থাকা রক্তমাখা ছবি। অসহনীয় এই দৃশ্যের সঙ্গে রাজনৈতিক নেতাদের জেহাদের ডাকে বুক কাঁপে নতুন কোনও অঘটনের আশঙ্কায়। দেখে সবাই-বোঝে সবাই-অথচ দেখার কেউ নেই। কারণ লড়াইটা শুধু রাজনীতির নয়। লড়াইটা ইগোর, লড়াইটা বখরার।

Updated By: May 26, 2015, 10:40 PM IST
বীরভূম: লড়াই যেখানে শুধু রাজনীতির নয়, লড়াইটা ইগোরও

ওয়েব ডেস্ক: কোনও বিরাম নেই। আগুন জ্বলছে বীরভূমে। সাত্তোর, পাড়ুই, মাকড়া, চৌমণ্ডলপুর-মানুষ এক ডাকে চেনে। বীরভূমের খবর মানেই এখন যেন   মুখ থুবরে পড়ে থাকা রক্তমাখা ছবি। অসহনীয় এই দৃশ্যের সঙ্গে রাজনৈতিক নেতাদের জেহাদের ডাকে বুক কাঁপে নতুন কোনও অঘটনের আশঙ্কায়। দেখে সবাই-বোঝে সবাই-অথচ দেখার কেউ নেই। কারণ লড়াইটা শুধু রাজনীতির নয়। লড়াইটা ইগোর, লড়াইটা বখরার।

নানুরের সূচপুর গণহত্যার পর যে আগুন জ্বলে বীরভূমে, ২০১৫ দোর্দণ্ডপ্রতাপ তৃণমূলী শাসনেও তূষের আগুনের মত ধিকধিক করে জ্বলছে সেই আগুন। সূচপুর গণহত্যা, দীর্ঘ এক দশক কাটিয়ে যাবজ্জীবনের সাজা হয় বাম নেতা নিত্যগোপাল চ্যাটার্জীর। কিন্তু নানুর শান্ত হয়না। বাম দূর্গ নানুরে মাথা তুলে দাড়ায় তৃণমূল নেতা সোনা চৌধুরী। ২০০৯, ১৪ ফেব্রুয়ারি খুন হন তিনি। নানুরের হাল ধরেন কাজল শেখ। নতুন নেতা-নতুন বাহিনী-নতুন সম্ভাবনা। বাম-তৃণমূল দফায় দফায় সংঘর্ষ। ২০১০, খুন হন স্থানীয় সিপিআইএম নেতা আনন্দ দাস।  নানুর সম্পূর্ণ দখলে আসে তৃণমূলের। দখলে আসে আজয় নদীর বালি। প্রতিদিন কমপক্ষে কুড়ি হাজার টাকা "নেতা ট্যাক্স'।  স্থানীয় বাসিন্দারা বোঝেন  নানুর কাজলের হাতে। বালি মাফিয়াদের কাছে সে খবর যায় আরও আগে। কিন্তু তৃণমূল জেলা নেতৃত্ব তৃণমূলের স্তরের সত্যকে স্বীকার করেনা। অনুব্রতের দাপটে  দলীয় ক্ষেত্রে ব্রাত্য কাজল শেখ। আর তা থেকেই সংঘাতের শুরু। লড়াই কাজল ও অনুব্রত অনুগামীদের মধ্যে। প্রতিদিনের লড়াই-এ বিব্রত পুলিস। পুলিসের শ্যাম রাখি না কূল রাখি দশায় প্রাণ যাচ্ছে সাধারণ তৃণমূল সমর্থকদের।

নানুরের মতই রক্তক্ষয়ী সংগ্রাম বোলপুর, পাড়ুই, ইলমবাজার থানা এলাকাতেও। কিন্তু এখানে তৃণমূলের গোষ্ঠীকোন্দল নয়। এখানে বর্তমান সংঘর্ষ বিজেপি-তৃণমূলের।  ২০১৩ সাগর ঘোষ খুনের পর হঠাত্‍ করে তৃণমূল অধ্যুষিত সাত্তোর, মাখড়া, হাঁসরা, চৌমণ্ডলপুর, যাদবপুর, শিমুলিয়া, সর্পলেহন--সর্বত্র পদ্ম গন্ধ। যে সদাই শেখ, শেখ সামাদের হাত ধরে  ঘাসফুল উড়েছিল বোলপুর, পাড়ুই-এ। এখন সেখানে ঘরছাড়া তৃণমূল নেতারা। সামাদ শেখদের দাবি ক্ষমতা পেয়ে তৃণমূল নেতারা মানুষকে আর মানুষ মনে করেনি। তাই বাম ছেড়ে তৃণমূলের  হয়ে যারা  মাস্কেট তুলেছিল, এখন তারাই বন্দুকের নল ঘুরিয়েছে তৃণমূলের দিকে। প্রতিদিন লড়াই। প্রতিদিন মৃত্যু।  বোলপুর, পাড়ুই  আর মাথা নত করে না তৃণমূলের ক্ষমতার কাছে। আর এখানেই লুকিয়ে রয়েছে  দাঙ্গার বীজ। সামাদ শেখরা এখন অনুব্রতদের বুঝিয়ে দিতে চায়। আর সেই বোঝা বুঝতে বর্ধমানের আউশগ্রাম, মঙ্গলকোট থেকে আমদানি হচ্ছে সশস্ত্র বাহিনী। বোমার জলদি সপ্লাইয়ের জন্য অজয়ের চরে তৈরি হয়েছে বোমা কারখানা। ইলমবাজার থেকে নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে পাড়ুইয়ের ভবিষ্যতা। ইলমবাজার থেকে আনয়াসে চলে যাওয়ায় ঝাড়খণ্ডে ও বর্ধমানে। আর এই ইলমবাজারেই তৃণমূলের বড় অংশ চলে গেছে বিজেপিতে, যারা পাড়ুই  এলাকার রাজনীতি নিয়ন্ত্রণে ওতোপোতে ভাবে জড়িত।  

.