Pankaj Dheer Death: ক্যানসার কেড়ে নিল কর্ণকে! ৭০ না পৌঁছতেই জীবনকে বিদায় জানালেন পঙ্কজ ধীর...
Pankaj Dheer Death News: সূত্রের খবর, দীর্ঘ দিন ধরেই ক্যানসারের সঙ্গে লড়াই করছিলেন পঙ্কজ। তবে ধীরে ধীরে সেরেও উঠেছিলেন। কিন্তু, মাসকয়েক আগে আবার তাঁর অবস্থার অবনতি হয়।
জি ২৪ ঘণ্টা ডিজিটাল ব্যুরো: ফের দুঃসংবাদ বিনোদন জগতে। প্রয়াত পর্দার মহাভারতের কর্ণ, জনপ্রিয় অভিনেতা পঙ্কজ ধীর (Pankaj Dheer)। ক্যানসার আক্রান্ত হয়ে ভুগছিলেন দীর্ঘদিন। বড় অস্ত্রোপচারও করা হয়েছিল অভিনেতার। তবে শেষ রক্ষা হল না। না ফেরার দেশের পাড়ি দিলেন পঙ্কজ। ১৫ সেপ্টেম্বর শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। তাঁর পুরনো বন্ধু ও সহকর্মী অমিত বহল এই খবর নিশ্চিত করেছেন। এই মৃত্যু খবর ছড়িয়ে পড়তেই শোকের ছায়া নেমে আসে বলিউডে। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৬৮ বছর। বিআর চোপড়ার মহাভারতের এই গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রের মাধ্যমে সকলের মন জয় করেছিলেন তিনি। হিন্দি সিনে দুনিয়ার পরিচিত মুখ পঙ্কজ ধীর। তবে তিনি সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলেছিলেন 'কর্ণ' চরিত্রে অভিনয় করে।
TRENDING NOW
সূত্রের খবর, দীর্ঘ দিন ধরেই ক্যানসারের সঙ্গে লড়াই করছিলেন পঙ্কজ। তবে ধীরে ধীরে সেরেও উঠেছিলেন। কিন্তু, মাসকয়েক আগে আবার তাঁর অবস্থার অবনতি হয়। গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন অভিনেতা। অস্ত্রোপচারও হয়েছিল তাঁর। ‘সিনে অ্যান্ড টিভি আর্টিস্টস্ অ্যাসোসিয়েশন’-এর তরফেও শোকপ্রকাশ করে জানানো হয়েছে তাঁর মৃত্যুর কথা। বুধবার, বিকেল সাড়ে ৪টেয় মুম্বইয়ে তাঁর শেষকৃত্য সম্পন্ন হবে।
পঙ্কজ ধীরের অন্যান্য উল্লেখযোগ্য কাজের মধ্যে রয়েছে 'চন্দ্রকান্তা', 'বাধো বহু', 'জি হরর শো' এবং 'কানুন'-এর মতো টেলিভিশন ধারাবাহিক, সেইসাথে 'সোলজার', 'আন্দাজ', 'বাদশাহ' এবং 'তুমকো না ভুল পায়েঙ্গে'-এর মতো চলচ্চিত্র।
শৈশব থেকেই ফিল্মজগতের মধ্যে বড় হয়ে ওঠা। অভিনয় নিয়েই কেরিয়ার গড়ে তোলার ইচ্ছা থাকলেও কেরিয়ার শুরুতে বার বার ব্যর্থতার সম্মুখীন হন। কিন্তু ভাগ্যের চাকা পরিবর্তনশীল। আশির দশকে জনপ্রিয় পৌরাণিক ধারাবাহিকে অভিনয় করে রাতারাতি জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন পঙ্কজ ধীর। এমনকি ভারতের দু’টি মন্দিরে তাঁর ছাঁচে গড়া মূর্তিও রয়েছে।
পঙ্কজের বাবা সিএল ধীর ছিলেন তৎকালীন বলিপাড়ার নামকরা পরিচালক। ‘জব জব ফুল খিলে’র মতো ছবি পরিচালনা করেছিলেন সিএল ধীর। হিন্দি ছবিতে কাজ করবেন বলে পূর্ব আফ্রিকা থেকে মুম্বইয়ে যান তিনি। চিত্রনাট্য লেখার কাজ থেকে শুরু করে পরিচালনার প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন তিনি। ছোটবেলা থেকেই বাবার সঙ্গে ফিল্মের সেটে যেতেন পঙ্কজ। এ ভাবেই অভিনয়ের প্রতি আগ্রহ জন্মায় তাঁর।
ছোট থেকে অভিনেতা হওয়ার স্বপ্ন দেখলেও আর্থিক অভাবের কারণে সহ-পরিচালনার কাজ শুরু করেন পঙ্কজ। পঙ্কজের বাবা ‘এক চাদর ময়লি সি’ ছবির পরিচালনা করছিলেন। ছবির শুটিং প্রায় শেষ হয়ে গিয়েছিল। আর ছয়-সাত দিন কাজ করলেই শুটিং শেষ হয়ে যেত। কিন্তু কোনও এক অজানা কারণে ছবির কাজ বন্ধ হয়ে যায়। এই ছবির জন্য প্রচুর খরচ করে ফেলেছিলেন সিএল ধীর। লোকসানের ধাক্কা সামলাতে পারেননি পঙ্কজের বাবা।
সংসার সামলাতে আর অভিনয় নয়, সহ-পরিচালনার মাধ্যমে নিজের কেরিয়ার শুরু করেন পঙ্কজ। ১৯৭০ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘পরওয়ানা’ ছবিতে সহ-পরিচালনার মাধ্যমে কাজ শুরু করেন তিনি। সত্তরের দশকে একাধিক হিন্দি ছবিতে সহ-পরিচালনা করতে দেখা যায় তাঁকে। সহ-পরিচালনার কাজ করলেও ফিল্ম সেটে উপস্থিত থেকে অভিনয়ের খুঁটিনাটির দিকে নজর রাখতেন পঙ্কজ।
‘পুনম’, ‘সুখা’ এবং ‘মেরা সুহাগ’ নামের হিন্দি ছবিতে স্বল্পদৈর্ঘ্যের চরিত্রে অভিনয় করতে দেখা যায় পঙ্কজকে। দক্ষিণী অভিনেতা কমল হাসনের প্রাক্তন স্ত্রী সারিকার নজরে পড়েন পঙ্কজ। সারিকা তাঁর ছবি ‘তিতলিয়া’তে মুখ্যচরিত্রে অভিনয়ের জন্য পঙ্কজকে প্রস্তাব দেন। দ্বিতীয় অভিনেতা হিসাবে পঙ্কজকে অভিনয় করতে দেখা যাবে বলে আশ্বাসও দেন সারিকা। রাজ বব্বরও সেই ছবিতে অভিনয় করবেন বলে জানা যায়। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত সেই ছবির কাজ শুরু করতে পারেননি সারিকা।
তাঁর ছেলে নিকিতিন ধীরও একজন অভিনেতা, যিনি 'চেন্নাই এক্সপ্রেস', 'জোধা আকবর' এবং 'সূর্যবংশী'-এর মতো চলচ্চিত্রের জন্য পরিচিত। তাঁর পুত্রবধূ হলেন অভিনেত্রী কৃতিকা সেঙ্গার, যিনি 'এক বীর স্ত্রী কি কাহানি – ঝাঁসি কি রানি' ধারাবাহিকের জন্য বিখ্যাত।
টেলিভিশনে তাঁর শেষ কাজ ছিল (২০২৪ সালে প্রচারিত) 'ধ্রুব তারা – সময় সাদি সে পারে'। এছাড়াও, তাঁকে ২০১৯ সালের ওয়েব সিরিজ 'পয়জন'-এও দেখা গিয়েছিল।
বি. আর. চোপড়া প্রযোজিত এবং তাঁর পুত্র রবি চোপড়া পরিচালিত 'মহাভারত' (১৯৮৮-১৯৯০) ভারতীয় টেলিভিশনের ইতিহাসে এক অবিস্মরণীয় সৃষ্টি। প্রাচীন সংস্কৃত মহাকাব্যকে সাধারণ মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে এই ধারাবাহিক এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিল। দুরদর্শন চ্যানেলে সম্প্রচারিত এই ৯৪ পর্বের মেগা সিরিয়ালটি এমন জনপ্রিয়তা লাভ করেছিল যা আজও দৃষ্টান্ত হয়ে আছে। এই চরিত্রের জন্য প্রযোজক বি.আর. চোপড়া ২০,০০০-এরও বেশিজনের অডিশন নিয়েছিলেন। অভিনেতা পঙ্কজ ধীর প্রথমে অর্জুনের ভূমিকায় নির্বাচিত হলেও গোঁফ কাটতে না চাওয়ায় তাঁকে কর্ণের ভূমিকায় নেওয়া হয়।
এই ধারাবাহিকের মূল আকর্ষণ ছিল এর মনোমুগ্ধকর চিত্রনাট্য, যা লিখেছিলেন বিখ্যাত কবি ও লেখক রাহি মাসুম রজা। তাঁর সাবলীল ভাষা ও গভীর উপলব্ধি মহাকাব্যের মূল ভাবকে অক্ষুণ্ণ রেখেছিল। প্রতিটি পর্ব শুরু হতো এক অমোঘ সংলাপে— "ম্যায় সময় হুঁ" (আমি কাল), যেখানে কণ্ঠ দিয়েছিলেন হরিশ ভিমানী। এটি যেন দর্শকদের সময়ের এক সাক্ষী হিসেবে মহাভারতের জটিল আখ্যানের গভীরে নিয়ে যেত।
ধারাবাহিকে পাণ্ডব, কৌরব, শ্রীকৃষ্ণ, ভীষ্ম, দ্রৌপদী— প্রতিটি চরিত্রই যেন জীবন্ত হয়ে উঠেছিল। রূপা গঙ্গোপাধ্যায় (দ্রৌপদী), নীতীশ ভরদ্বাজ (কৃষ্ণ), মুকেশ খান্না (ভীষ্ম) এবং ফিরোজ খান (অর্জুন) এর মতো শিল্পীরা তাঁদের অভিনয়ের মাধ্যমে চরিত্রগুলিকে অমর করে তুলেছিলেন। বিশেষ করে দ্রৌপদীর 'বস্ত্রহরণ'-এর মতো দৃশ্যগুলি অত্যন্ত সংবেদনশীলতার সঙ্গে চিত্রায়িত হয়েছিল এবং তা দর্শকের মনে গভীর প্রভাব ফেলেছিল।
'মহাভারত' কেবল একটি বিনোদনমূলক অনুষ্ঠান ছিল না, এটি ধর্ম, কর্ম এবং নৈতিকতার এক প্রগাঢ় বার্তা বহন করে। পারিবারিক দ্বন্দ্ব, ন্যায়-অন্যায়, ধর্মযুদ্ধ এবং শ্রীকৃষ্ণের গীতার উপদেশ— সব মিলিয়ে এটি ছিল ভারতীয় সংস্কৃতির এক বিশ্বকোষ। এর বিপুল সাফল্য আজও এটিকে টেলিভিশনের জন্য নির্মিত অন্যতম সফল ধারাবাহিক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে রেখেছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এর আবেদন এতটুকুও কমেনি।
(দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির টাটকা খবর, আপডেট এবং ভিডিয়ো পেতে ডাউনলোড-লাইক-ফলো-সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের App, Facebook, Whatsapp Channel, X (Twitter), Youtube, Instagram পেজ-চ্যানেল)
Nabanita Sarkar
সাংবাদিকতায় স্নাতকোত্তর। সংবাদ মাধ্যমের পাশাপাশি রাজনৈতিক পরামর্শদাতাদাতা হিসেবে কাজের অভিজ্ঞতা। আইন-আদালত থেকে বিনোদন, দেশ থেকে দুনিয়ার হরেক খবরে শেখার চেষ্টা অবিরাম...
...Read More