জি ২৪ ঘণ্টা ডিজিটাল ব্যুরো: গত ১৯ সেপ্টেম্বর সিঙ্গাপুরে আচমকা গায়ক-অভিনেতা জুবিন গর্গের (Zubeen Garg) মৃত্যুতে ভেঙে পড়েছেন অগণিত ভক্ত-অনুরাগী। মানসিকভাবে ভীষণ বিপর্যস্ত জুবিনের স্ত্রী, ফ্যাশন ডিজাইনার গরিমা সাইকিয়া গার্গও (Garima Saikia Garg)। জুবিনের মৃত্যুর পর বারংবার তাঁকে কান্নায় ভেঙে পড়তে দেখা যায়। এরই মধ্যে তাঁকে ঘিরে তৈরি হয়েছে অন্য প্রশ্ন।
Add Zee News as a Preferred Source
রীতি অনুযায়ী স্বামীর দীর্ঘ জীবন কামনায় হিন্দু নারীরা সিঁথিতে সিঁদুর পরেন। সাধারণত, স্বামী মারা গেলে হিন্দু নারীরা সিঁদুর পরা বন্ধ করে দেন। জুবিনের স্ত্রী গরিমার ক্ষেত্রেও একই চিত্র আশা করা হচ্ছিল। কিন্তু জুবিনের মৃত্যুর ২০ দিন পরও গরিমা নিয়মিত সিঁথিতে সিঁদুর পরে আছেন, যার ছবি ও ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছে। কেন এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন গরিমা?
আরও পড়ুন- Zubeen Garg's personal security officers arrested: জ়ুবিন-মৃত্যু মামলায় ক্রমেই বাড়ছে রহস্য! ভাইয়ের পর এবার পুলিসের জালে আরও ২ কাছের মানুষ...
গরিমার সিঁথির সিঁদুর দেখে অনেকেই নেতিবাচক মন্তব্য করতে শুরু করেন। এই পরিস্থিতিতে বিষয়টি পরিষ্কার করতে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হন জুবিনের ছায়াসঙ্গী গরিমা। বিতর্কের জবাবে গরিমা বলেন, "জানতে পারলাম, আমার সিঁথির সিঁদুর নিয়ে অনেক বিতর্ক হচ্ছে। প্রথমে ভেবেছিলাম, এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করব না। পরে মনে হলো, সবাইকে ব্যাপারটা বোঝানো দরকার।"
সিঁদুর পরার কারণ ব্যাখ্যা করে আবেগপ্রবণ গরিমা যে প্রতিজ্ঞা করেন, তা শুনলে স্তম্ভিত হতে হয়। তিনি বলেন, “আমি আমার মাথায় হাত রেখে প্রতিজ্ঞা করছি, আমি আমার কপালে সিঁদুর রাখব—যতক্ষণ না জুবিনের সঙ্গে আমার আবার দেখা হয়।”
গরিমার এই বক্তব্যের ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় এখন ভাইরাল। নেটিজেনরাও তাঁর অনুভূতিকে সম্মান জানিয়েছেন। এক নেটিজেন লেখেন, "আপনার এই সিদ্ধান্তকে সম্মান করি। জীবনের শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত তাঁকে (জুবিন) ভালোবাসুন।" অন্য এক ভক্ত লেখেন, "সত্যি আপনার অনুভূতিকে সম্মান করি। স্যালুট গরিমা।" আরেক ব্যক্তির মন্তব্য, "তাঁকে তাঁর মতো বাঁচতে দিন। তাঁর জীবন তাঁর পছন্দ।"
আরও পড়ুন- Sudip Mukherjee Marriage: পৃথার সঙ্গে সত্যিই বিচ্ছেদ? এবার বিয়ে নিয়ে বড় সিদ্ধান্ত 'চিরসখা' সুদীপের...
জুবিন-গরিমার প্রেমকাহিনি যেন একটি সিনেমার চিত্রনাট্য। অসমের গোলাঘাটের মেয়ে গরিমা মুম্বইতে ফ্যাশন ডিজাইনিং পড়ার সময় জুবিনের 'অনামিকা' ও 'মায়া' অ্যালবামের গান শুনে গভীরভাবে প্রভাবিত হন। মন খারাপের এক মুহূর্তে গায়ককে একটি প্রশংসা ও আবেগে ভরা চিঠি লেখেন এই তরুণী।
আশ্চর্যজনকভাবে, জুবিন সাধারণত অনুরাগীদের চিঠির উত্তর না দিলেও, সেই অচেনা অনুরাগী গরিমার চিঠির জবাব দেন। সেই একটি যোগাযোগই ধীরে ধীরে প্রেমের শুরু। একটি সাধারণ চিঠি যে দুটি মানুষের জীবন বদলে দিতে পারে, জুবিন-গরিমার গল্প তার জীবন্ত উদাহরণ।
প্রেম গাঢ় হওয়ার পর জুবিন গরিমাকে বিয়ের প্রস্তাব দেন। কিন্তু তাঁদের এই প্রেমের পথ সহজ ছিল না। গরিমার পরিবার, বিশেষ করে তাঁর বাবা, এই সম্পর্ক মেনে নেননি। অন্যদিকে, জুবিনের অস্থির ও খামখেয়ালি স্বভাবও গরিমাকে বিচলিত করত। চাপের মুখে একসময় গরিমা সম্পর্ক ভেঙে বেরিয়ে আসার সিদ্ধান্তও নেন। সেই সময় জুবিনের জীবনে নেমে আসে ঘোর অন্ধকার।
আরও পড়ুন- Premanand Maharaj: কানপুরের অনিরুদ্ধ পাণ্ডে যেভাবে হয়ে উঠলেন বৃন্দাবনের প্রেমানন্দ মহারাজ, যিনি বিরাট-অনুষ্কাদেরও আরাধ্য!
তবে প্রকৃত ভালোবাসা কখনোই হারিয়ে যায় না। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তাঁরা আবার কাছাকাছি আসেন। ২০০২ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি, বলিউডে জুবিনের বড় সাফল্যের আগেই তাঁরা বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। এরপর গরিমা শুধুই স্ত্রী নন, হয়ে ওঠেন জুবিনের জীবনের স্থিতিশীল এক আশ্রয়। তিনি একদিকে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন একজন সফল ফ্যাশন ডিজাইনার হিসেবে, অন্যদিকে ছায়াসঙ্গী হন জুবিনের সৃষ্টিশীল পথচলার। তাঁরা অসমের অন্যতম আদর্শ দম্পতি হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন।
(দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির টাটকা খবর, আপডেট এবং ভিডিয়ো পেতে ডাউনলোড-লাইক-ফলো-সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের App, Facebook, Whatsapp Channel, X (Twitter), Youtube, Instagram পেজ-চ্যানেল)ন