নিজস্ব প্রতিবেদন: না দেখে, কোনও কিছু কল্পনা করে ছবি আঁকার কথা বলছি না। একেবারে চোখ বুজে, ঘুমের ঘোরে একের পর এক অনবদ্য ছবি এঁকে সারা দুনিয়াকে রীতিমতো তাক লাগিয়ে দিয়েছেন এই শিল্পী। ঘুমের ঘোরে হেঁটে চলে বেড়ানো, কথা বলা, চিত্কার করা ইত্যাদির কথা আমরা হয়তো অনেকেই শুনেছি। কিন্তু ঘুমের ঘোরে, অবচেতনে এ ভাবে ছবি আঁকার ঘটনা অবাক করেছে বিশ্বের তাবড় মনোবিজ্ঞানীদেরও! অদ্ভুত এই শিল্পীর নাম লী হ্যাডউইন।


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

৪৪ বছর বয়সী হ্যাডউইনের জন্য ইংল্যান্ডের ওয়েলসে। শোনা যায়, যখন তাঁর বয়স মাত্র চার বছর, একদিন হঠাৎ ঘুমের মধ্যেই রং হাতে দেয়ালে আঁকতে শুরু করেন হ্যাডউইন। প্রথমটা হ্যাডউইনের পরিবারের লোকজন বা তিনি নিজেও বিষয়টি কিছুতেই বুঝে উঠতে পারছিলেন না। ঘুমের মধ্যেও কি এ ভাবে ছবি আঁকা সম্ভব! বেশ কয়েক বছর পর হ্যাডউইনের ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে ছবি আঁকার ব্যপারটি অন্যান্য স্বাভাবিক ঘটনার মতোও মেনে নিয়েছিলেন তাঁর পরিজনরা। অভ্যস্থ হয়ে গিয়েছিলেন হ্যাডউইনও।



পরবর্তীকালে ধীরে ধীরে দেয়াল থেকে খাতায়, কাগজে আঁকতে শুরু করেন তিনি। হ্যাডউইন তখন কিশোর। একদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে তিনি দেখতে পান তাঁর পাশে একটি কাগজে হলিউড অভিনেত্রী মেরিলিন মনরোর ছবি আঁকা রয়েছে। চমৎকার স্কেচ, চারকোলের নিখুঁত স্ট্রোক! ছবিটি দেখেই মুগ্ধ হয়ে যান হ্যাডউইন। পরে বুঝতে পারেন ছবিটি ঘুমের মধ্যে তিনিই এঁকেছেন।


ইংল্যান্ড এবং ইংল্যান্ডের বাইরে একাধিকবার হ্যাডউইনকে নিয়ে নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়েছেন বিশ্বের তাবড় মনোবিজ্ঞানীরা। শেষমেশ তাঁরাও মেনে নিয়েছেন, হ্যাডউইনের বিষয়টি একেবারেই ‘আলাদা’। মনোবিজ্ঞানী এবং চিকিৎসকদের মতে, ছোটবেলার কোনও ঘটনা থেকে তৈরি হওয়া ভয় বা আঘাতের ফলে একরকম মানসিক জটিলতার সৃষ্টি হতে পারে। ইংল্যান্ডের ওয়েলসের কার্ডিফ ইউনিভার্সিটির (Cardiff University) অধ্যাপক পেনি লুইস জানান, ঘুমন্ত অবস্থায় মস্তিষ্কের যৌক্তিক অংশটি নিষ্ক্রিয় থাকলেও লিম্বিক সিস্টেম (মস্তিষ্কের যে অংশটি মানুষের আবেগ, প্রতিক্রিয়ায় বিষয়গুলিকে নিয়ন্ত্রণ করে) সক্রিয় থাকে। অধ্যাপক লুইসের মতে, ঘুমন্ত অবস্থায় হ্যাডউইনের মস্তিষ্কের লিম্বিক সিস্টেম অন্যদের তুলনায় অনেক বেশি সক্রিয় থাকে। আর এ জন্যই ঘুমন্ত অবস্থায়ও এমন অসাধারণ ছবি আঁকতে পারেন হ্যাডউইন। এডিনবার্গ স্লিপ ক্লিনিকে বিস্তর পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর চিকিৎসকরা হ্যাডউইনের বাবা-মাকে জানিয়ে দেন এ ভাবে ছবি আঁকার ফলে শরীরের তেমন কোনও ক্ষতি হচ্ছে না। ফলে নিশ্চিন্তে ছবি আঁকা চালিয়ে যেতে পারেন হ্যাডউইন।



আরও পড়ুন: বছরের বেশির ভাগ সময়েই কি স্নানে অরুচি? কারণ জানলে চমকে যাবেন!


চিকিৎসকরা অভয় দেওয়ার পর থেকে আর এ বিষয়ে চিন্তা করেননি হ্যাডউইন। এ পর্যন্ত ছ’শোরও বেশি ছবি এঁকেছেন তিনি। ইউরোপের বিভিন্ন দেশের একাধিক প্রদর্শনীতে চড়া দামে বিক্রিও হয়েছে তাঁর আঁকা ছবিগুলি। ফলে চাকরি ছেড়ে নিজের আঁকা ছবি থেকে হওয়া উপার্জনের উপরই নির্ভরশীল হন হ্যাডউইন। আর হবেন না-ই বা কেন! তাঁর আঁকা কোনও কোনও ছবি প্রায় তিন থেকে চার হাজার ইউরোয় (ভারতীয় মূদ্রায় প্রায় ৩-৪ লক্ষ টাকা) বিক্রি হয়।


বর্তমানে চিত্রশিল্পী হিসাবে যথেষ্ট নাম-ডাক হয়েছে হ্যাডউইনের। বর্তমান মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সংগ্রহেও রয়েছে হ্যাডউইনের আঁকা ছবি। ইউরোপের বৈদ্যুতিন সংবাদ মাধ্যমে ‘স্লিপওয়াকার সিক্রেটস অব দ্য নাইট’ নামে একটি তথ্যচিত্র প্রদর্শিত হয়েছে হ্যাডউইনকে নিয়ে। তবে এখনও লী হ্যাডউইনের এ ভাবে ছবি আঁকার বিষয়টি বিস্মীত করে বিশ্বের নামী চিকিত্সক ও মনোবিজ্ঞানীদের।