ওয়েব ডেস্ক: উরি-কাণ্ডের পর নিয়ন্ত্রণ রেখা পেরিয়ে পাকিস্তানকে জবাব দেওয়ার দাবি উঠেছে। ওয়ার রুমে বৈঠক করেছেন প্রধানমন্ত্রী। পাকিস্তানের আকাশে উড়ছে বোমারু বিমান। দুদেশ ফের যুদ্ধে জড়িয়ে পড়বে কিনা এখনই তা বলার সময় আসেনি। তবে, এটা বলাই যায়, স্বাধীনতার পর রণাঙ্গনে যতবার দেখা হয়েছে ততবারই ভারতীয় সেনার কাছে হেরেছে পাক সেনা।


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

প্রতিবেশিদের দৌলতে স্বাধীনতার পর থেকেই ভারতীয় সেনাকে বারবার যুদ্ধে নামতে হয়েছে। হার-জিতের চেয়েও বড় কথা, রণাঙ্গনের সেই ইতিহাস উপ-মহাদেশ তথা বিশ্বে ভারতকে দিয়েছে নতুন পরিচিতি।


আরও পড়ুন- সেনার 'সার্জিক্যাল অ্যাটাক' আসলে কী?


ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ, ১৯৪৭ 


স্বাধীনতার বয়স তখন মাত্র দু-মাস। জম্মু-কাশ্মীরে ঢুকে পড়ল পাক মিলিশিয়া। কিছুদিন লড়াইয়ের পর অবস্থা কঠিন বুঝে রাজা হরি সিং ভারতের শরণাপন্ন হলেন। সই হল চুক্তি। এরপরই সম্মুখ সমরে নেমে পড়ে ভারতীয় এবং পাক সেনা। পরে রাষ্ট্রসঙ্ঘের হস্তক্ষেপে ঘোষিত হয় যুদ্ধবিরতি। যুদ্ধবিরতির সময় সুবিধাজনক অবস্থায় ছিল ভারতীয় সেনা। ১৯৪৯-এ রাষ্ট্রসঙ্ঘের যুদ্ধবিরতি রেখা, ১৯৭২-এ সিমলা চুক্তির পর
নিয়ন্ত্রণ রেখায় পরিণত হয়। কাশ্মীরের এক-তৃতীয়াংশ ভূখণ্ড চলে যায়
পাকিস্তানের কব্জায়। 


ভারত-চিন যুদ্ধ, ১৯৬২


সীমান্ত নিয়ে বিবাদ তো ছিলই। তার ওপর দলাই লামাকে আশ্রয় প্রদান।  উনিশশো বাষট্টিতে ভারত আক্রমণ করে চিন। লাদাখ, অরুণাচলে ঢুকে পড়ে লাল ফৌজ। পরে চিন যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করে সেনা সরিয়ে নিলেও এই যুদ্ধের হতাশাজনক পরিণতির জন্য নেহরুর ফরোয়ার্ড পলিসিকে দায়ী
করেন অনেক।  


বাষট্টির যুদ্ধে ধাক্কা খায় ভারতীয় সেনা। এক মাসের লড়াইয়ে আকসাই চিনের দখল নেয় লাল ফৌজ।  


ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ, ১৯৬৫ 


তখন ঠাণ্ডা যুদ্ধের আমল। কাশ্মীরে অনুপ্রবেশের চেষ্টায় অপারেশন জিব্রাল্টারের পরিকল্পনা করে পাক সেনা। জবাবে পশ্চিম পাকিস্তানে হানা দেয় ভারতীয় বাহিনী। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এটাই ছিল সবচেয়ে বড় লড়াই। ভারতীয় ট্যাঙ্ক, গোলন্দাজ বাহিনীর আক্রমণে নাস্তানাবুদ হয় পাক সেনা। 
সোভিয়েত ইউনিয়ন এবং আমেরিকার হস্তক্ষেপে ঘোষিত হয় যুদ্ধ বিরতি। তাসখন্দ চুক্তি সই করে ভারত-পাকিস্তান। যুদ্ধ বিরতির সময় পাক সেনার চেয়ে অনেক সুবিধাজনক জায়গায় ছিল ভারতীয় সেনা। 


ভারত-চিন যুদ্ধ, ১৯৬৭


সিকিমের নাথু লা এবং চো লা-য় ঢুকে পড়ে চিনা সেনা। ভারতীয় সেনার প্রত্যাঘাতে দশ দিনের মধ্যেই পলায়ন। সিকিম থেকে পিছু হঠে চিনা সেনা। পরে সিকিম ভারতের অন্তর্ভুক্ত হয়। সিকিমকে ভারতের অঙ্গরাজ্য বলে মেনে নেয় চিন। 


ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ, ১৯৭১


উপ-মহাদেশের ইতিহাসে অন্যতম বড় ঘটনা। পাকিস্তানকে ভেঙে দু-টুকরো করে দেন ইন্দিরা গান্ধী। স্বাধীনতাকামী পূর্ব পাকিস্তানের সাধারণ
মানুষের ওপর পাক সেনার মদতে নারকীয় অত্যাচার চালায় রাজাকার, আল-বদর বাহিনী। সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে ঢুকতে শুরু করে উদ্বাস্তু
মিছিল। পাক সেনার সঙ্গে লড়াইয়ে মুক্তি বাহিনীর দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন ইন্দিরা গান্ধী।  উত্তর ভারতে পাক সেনা বোমাবর্ষণ শুরু করলে ভারতীয় সেনা সরাসরি যুদ্ধে নেমে পড়ে। মাত্র তেরো দিনের লড়াইয়ে আত্মসমর্পণে বাধ্য হয় পাক সেনা। মুছে যায় পূর্ব পাকিস্তান। জন্ম নেয় স্বাধীন বাংলাদেশ। 


আরও পড়ুন- পাক অধিকৃত কাশ্মীরের জঙ্গিঘাঁটিতে সার্জিক্যাল অ্যাটাক ভারতের


কার্গিল যুদ্ধ, ১৯৯৯


জম্মু-কাশ্মীরের কার্গিলে নিয়ন্ত্রণ রেখা পেরিয়ে অনুপ্রবেশকারীদের সঙ্গেই ভারতীয় ভূখণ্ডে ঢুকে পড়ে পাক সেনা। পরমাণু শক্তিধর দুই দেশ এই প্রথম জড়িয়ে পড়ে সীমিত যুদ্ধে। শুরু হয় অপারেশন বিজয়। ভারতীয় সেনার পরাক্রমে আবার নিয়ন্ত্রণ রেখায় ফিরে যেতে বাধ্য হয় পাক সেনা। বিদেশি হানাদারদের হাত থেকে দখল-মুক্ত হয় কার্গিল। 


অতীত ইতিহাস বলছে, সম্মুখ-সমরে বরাবরই পাকিস্তানকে টেক্কা দিয়েছে ভারত। এখনও, সামরিক শক্তিতে পশ্চিমের প্রতিবেশীর তুলনায় শতযোজন এগিয়ে ভারতীয় সেনা।