নিজস্ব প্রতিবেদন: প্রশান্ত কিশোরের সঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের গাঁটছড়া ঘিরে সরগরম রাজ্য রাজনীতি। জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহেই বাংলায় চলে আসছে প্রশান্তের দলবল। তখন থেকে শুরু হয়ে যাবে ২০২১ সালে তৃণমূলকে জেতানোর রণকৌশল রচনার প্রস্তুতি। 


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

কে প্রশান্ত কিশোর?       


জনস্বাস্থ্য নিয়ে পড়াশোনা প্রশান্তের। ৭ বছর কাজ করেছেন রাষ্ট্রসঙ্ঘে। দেশে ফিরে তৈরি করেন তাঁর রাজনৈতিক প্রচার সংস্থা, সিটিজেন ফর অ্যাকাউন্টেবল গভর্নেন্স, সংক্ষেপে CAG। প্রথমেই বড় চুক্তি। প্রতিষ্ঠান বিরোধিতা সামলে, ভাবমূর্তি মেরামতি করে মোদীকে গুজরাটে জেতাতে হবে। প্রশান্ত কিশোর ঘুঁটি সাজালেন। রান ফর ইউনিটি ও মন্থন কর্মসূচির মাধ্যমে গুজরাটে জনসংযোগ শুরু করেন নরেন্দ্র মোদী। তৃতীয়বার বিশাল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে গুজরাটে ক্ষমতায় ফেরেন। প্রতিবারের মতোই হিরে চিনতে ভুল হয়নি নরেন্দ্র দামোদরদাস মোদীর।



গুজরাটে জেতার পরই প্রশান্ত কিশোরকে নতুন দায়িত্ব দিলেন নরেন্দ্র মোদী। জাতীয় নেতা হিসেবে তাঁকে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। প্রশান্ত কিশোর নিয়ে এলেন থ্রিডি প্রচার। ২০১৪ সালে তা মোদীর কার্পেট বম্বিং প্রচারের অন্যতম হাতিয়ার হয়ে উঠেছিল। দেশের ভোটপ্রচারেও যোগ করেছিল নয়া মাত্রা। মণিশঙ্কর আইয়ারের চাওয়ালা কটাক্ষকেই হাতিয়ার করে চায়ে পে চর্চা শুরু করলেন মোদী। পিছনে মাথা সেই প্রশান্ত কিশোর। 



বিশাল জয় পেয়ে দিল্লির মসনদে বসেন মোদী। CAG ভেঙে প্রশান্ত কিশোর তৈরি করলেন ইন্ডিয়ান পলিটিক্যাল অ্যাকশন কমিটি, সংক্ষেপে I-PAC। কিন্তু, তাঁর সংস্থাকে সরকারের অংশ করতে রাজি হল না বিজেপি। অতএব বিচ্ছেদ। 


পরের বছর নীতীশ কুমারের সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধেন প্রশান্ত। লালু-নীতিশের জোটে আঠার কাজ করলেন প্রশান্ত কিশোর। নীতিশের জন্য তৈরি করলেন আলাদা রণনীতি। নীতীশের সুশাসনকেই সামনে রেখে সাইকেল প্রচার করালেন প্রশান্ত কিশোর। 'বিহারি বনাম বাহারি' স্লোগান তৈরি করে বিহারে থামিয়ে দিলেন মোদী ঝড়।


.


ক্ষমতায় ফিরে প্রশান্ত কিশোরকে দফতরহীন মন্ত্রী বানালেন নীতীশ। কিন্তু, একবছরের মধ্যেই আবার বিচ্ছেদ। এবার কংগ্রেসের শিবিরে প্রশান্ত। প্রশান্ত কিশোরের কৌশলেই পঞ্জাবে ক্ষমতায় ফিরল কংগ্রেস।কিন্তু, ২০১৭ সালে উত্তরপ্রদেশ থেকে কার্যত মুছে গেল রাহুল গান্ধীর দল। যদিও উত্তরপ্রদেশে ব্যর্থতার জন্য প্রশান্ত কিশোরকে দোষ দেন না রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তাঁর একাধিক পরামর্শ রাহুল গান্ধী মানেননি। তার মধ্যে অন্যতম প্রিয়াঙ্কা গান্ধীকে মুখ্যমন্ত্রীর পদপ্রার্থী করে ভোটে লড়াই করার প্রস্তাব দিয়েছিলেন প্রশান্ত। এরপর কংগ্রেসের সঙ্গত্যাগ। 



কয়েক মাসের অজ্ঞাতবাস পর প্রশান্ত কিশোর ফিরলেন জেডিইউ-এর সহ-সভাপতি পদে। প্রশান্তের উদ্যোগে যে জোট, তাঁর সামনেই ভেঙে গেল। নীতীশ যেভাবে জোট ভাঙলেন তা পছন্দ হয়নি প্রশান্তের। প্রকাশ্যে সেকথা বলে বিতর্কও বাড়িয়েছেন। নীতীশের দলের একাধিক নেতাও প্রশান্তের অতি সক্রিয়তায় ক্ষুব্ধ হন। লালু-নীতীশের ভাঙা সম্পর্ক ফের জোড়া লাগাতে গিয়ে গোলমাল পাকিয়েছেন প্রশান্ত কিশোর। লালু শিবির মনে করছে তিনি নীতীশের গুপ্তচর। প্রকাশ্যে প্রশান্ত কিশোরকে মিথ্যুক বলেছেন রাবরি দেবী। আবার নীতীশ কুমারও তাঁকে বিশ্বাস করছেন না। বিশ্বাস করে না কংগ্রেস ও বিজেপিও। একাধিক দলের গোপনীয় তথ্য তাঁর পকেটে। 



হারিয়ে যেতে বসে আবার প্রবলভাবে প্রশান্ত ফিরলেন জগন্মোহনকে অন্ধ্রপ্রদেশে জিতিয়ে। সে রাজ্যে ১৭৫টি বিধানসভার মধ্যে ১৫০টি আসনই জিতেছে ওয়াইএসআর কংগ্রেস। জগনের নির্বাচনী রণনীতিকার ছিলেন প্রশান্ত কিশোর।



এবার নতুন দায়িত্বে প্রশান্ত। বাংলায় তৃণমূলকে ফেরাতে ২০২১ সালে। বিজেপির উত্থান, ধর্মীয় মেরুকরণ, বাম ভোটে হ্রাস, সর্বোপরি ১০ বছরের সরকারের প্রতিষ্ঠান বিরোধিতার হাওয়া- মাউন্ট এভারেস্টসম চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে চলেছেন প্রশান্ত। কতটা পারলেন, তার উত্তর দেবে ২০২১ সালের ইভিএম।         


আরও পড়ুন- Exclusive: বিজেপিকে রুখতে বাংলায় কীভাবে কাজ করবেন প্রশান্ত? কী সেই রণনীতি?