‘হেরে যাওয়া’ স্টেশনে হারিয়ে যেতে কেমন লাগে?
দশকের পর দশক পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে স্পেনের এই রেল স্টেশনটি।
নাম ক্যানফ্রাঙ্ক ইন্টারন্যাশনাল রেলওয়ে স্টেশন। ফ্রান্স এবং স্পেনের মধ্যে বাণিজ্য আদানপ্রদানের উদ্দেশ্যে তৈরি করা হয় এই রেলস্টেশনটি।
বিলাসবহুল স্টেশনের এমন দুর্দশা কেন, তা জানলে অবাক হবেন।
স্পেনের পেরিনিস পাহাড়ের কোলে অবস্থিত এই স্টেশনটিকে বলা হয় ‘টাইটানিক অব দ্য মাউন্টেইনস’। এই স্টেশনে যাত্রী পরিষেবার জন্য সব বন্দোবস্তো রয়েছে। কিন্তু আজ তা অবহেলিত। সময়ের কালে জীর্ণ হয়ে পড়েছে সবকিছুই। তবে, প্রাসাদপ্রমাণ স্টেশনটির ঔজ্জ্বল্য এখনও অটুট।
১৯২৮ সালে তৈরি হয় এই স্টেশনটি। স্টেশনের প্রধান কার্যালয় ৭৯০ ফুট লম্বা। এই ভবনের ৩৬৫টি জানালা এবং ১৫৬টি দরজা রয়েছে।
স্পেনের তত্কালীন রাজা ত্রয়োদশ আলফানসো এবং ফ্রান্স প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রপতি গ্যাস্টন ডুমার্গের উপস্থিতিতে এই স্টেশন উদ্বোধন করা হয়। দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্ক উন্নতি করতে সেতু বন্ধনের কাজ করবে এই স্টেশন বলে মনে করা হয়েছিল।
কিন্তু বাস্তবে এই স্টেশন উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নিতে পারেনি। স্টেশনের মূল ভবনের মধ্যে ছিল বিলাস বহুল হোটেল, রেস্তোরাঁ, অফিসারদের থাকার সুব্যবস্থা।
রেল পরিকাঠামোয় কোনও খামতি ছিল না। তবুও এখানে যাত্রীর সংখ্যা দিনে ৫০-র বেশি হত না। পণ্য পরিবহণের ক্ষেত্রে বিশাল অসুবিধার সম্মুখীন হতে হয় দুই দেশকে।
ফ্রান্সের রেল লাইনের গেজ ছিল ১৪৩৫ মিলিমিটার। অন্যদিকে স্পেনের ছিল ১৬৭২ মিলিমিটার। ভিন্ন রেল লাইনের গেজ হওয়ায় একটা জায়গায় পণ্য নামানো এবং পুণরায় অন্য ট্রেনে পণ্য তোলা হত। যাত্রীদেরকেও ট্রেন পরিবর্তন করতে হত।
এছাড়া ১৯৩৬ সালে স্পেনে গৃহযুদ্ধ শুরু হওয়ায় এই রেল পথের মধ্যে চোরা চালান বেড়ে যায়। যার ফলে এই সময় ট্রেন চলাচল বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয় স্পেনের সরকার। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপে আর্থিক মন্দা শুরু হয়ে যায়। ফলে নতুন করে এই স্টেশনের কোনও সংস্করণ করা যায়নি।
বর্তমানে স্পেন সরকার উদ্যোগ নিতে চলেছে ক্যানফ্রাঙ্ক ইন্টারন্যাশনাল রেলওয়ে স্টেশনের সংস্করণের। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর এই স্টেশনটিকে পর্যটন ক্ষেত্র করার পরিকল্পনা চলছে।
এত কিছু তথ্য দেওয়ার পর যে কথাটা নিশ্চিন্তে বলা যায়, তা হল এই স্টেশনের ছবিগুলির মধ্যে এক অদ্ভূত একাকীত্ব লুকিয়ে রয়েছে। ছবিগুলির উপর কয়েক সেকেন্ড চোখ স্থির করে রেখে দেখুন, ‘টাইটানিক অব দ্য মাউন্টেইনস’ স্টেশনটির মতো আপনিও হারিয়ে গেছেন কখন।