সব্যসাচী বাগচী  

 

দ্বিপাক্ষিক সিরিজ ও বড় প্রতিযোগিতায় গ্রুপ পর্বে 'বাঘ' হলেও, আইসিসি ইভেন্টের (ICC) নক আউট পর্বে ফের 'বিড়াল' ভারত। সেটা ফের প্রমাণ করল টিম ইন্ডিয়া (Team India)। চলতি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে (ICC T20 World Cup 2022) সেমিফাইনালেই থেমে গেল রোহিত শর্মার (Rohit Sharma) দলের দৌড়। চাপের মুখে বারবার খেই হারিয়ে ফেলছে ভারতীয় দল। এবারও সেই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটল। ইংল্যান্ডের (England) কাছে ১০ উইকেটে হেরে খালি হাতে দেশে ফিরবেন বিরাট কোহলি (Virat Kohli)-কেএল রাহুলরা (KL Rahul)। 

 

সব ধরনের আইসিসি প্রতিযোগিতায় শুধুই ব্যর্থতা। স্বভাবতই আলোচনা চলছে টিম ইন্ডিয়া নতুন 'চোকার্স' নয় তো! পরিসংখ্যান অবশ্য তেমনই ইঙ্গিত দিচ্ছে। ২০০৯, ২০১০, ২০১২, ২০১৪ ও ২০১৬ সালে খালি হাতে ফেরার পর, ২০২১-এর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ছিল সবচেয়ে খারাপ পারফরম্যান্স। প্রথম রাউন্ড থেকেই ছিটকে যায় ভারত। ৫০ ওভারের বিশ্বকাপেও যে সাফল্য নেই। ২০১৫ ও ২০১৯ সালে সেমি ফাইনাল থেকেই বিদায় নিয়েছিল ভারত। ২০১৭ সালে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ফাইনালে পাকিস্তানের কাছে ১৮০ রানে হেরে যাওয়ার যন্ত্রণা ভুলে যাওয়ার নয়। এমনকি আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালেও তো নিউজিল্যান্ডের কাছে গত বছর হেরে যেতে হয়েছে। 

 

তবে আইসিসি প্রতিযোগিতায় ভারতের 'চোক' করে যাওয়া নতুন ঘটনা নয়। ২০০৭ সালে প্রথম টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জয়ের পর ২০১১ সালের ঘরের মাঠে ৫০ ওভারের বিশ্বকাপ জিতেছিল ভারতীয় দল। এরপর এল ২০১৩ সাল। মহেন্দ্র সিং ধোনির নেতৃত্বে এই ইংল্যান্ডকে হারিয়েই দল চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জিতেছিল ভারত। কিন্তু এরপর থেকে শুধুই একরাশ শূন্যতা। এবার দেখে নেওয়া যাক কোন কোন কারণে কাপ যুদ্ধ থেকে হারিয়ে গেল তারকাখচিত ভারতীয় দল। 


 

পাওয়ার প্লে-তে আগ্রাসী মনোভাবের অভাব: পাওয়ার প্লে-তে রোহিত ও রাহুল একেবারে ব্যর্থ। কেএল রাহুল দুটি ও রোহিত একটি অর্ধ শতরান করেছেন। প্রতিযোগিতায় সব দলের মধ্যে প্রথম ছয় ওভারে ভারতের পারফরম্যান্স সবচেয়ে খারাপ। গত কয়েকটি আইসিসি প্রতিযোগিতায় নক আউটে রোহিতের ফর্ম ভালো নয়। ২০১৪ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনালে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে ২৯ রান করেছিলেন রোহিত। ২০১৫ সালের এক দিনের বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে করেছিলেন ৩৪ রান। ২০১৬ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে ৪৩ রান এসেছিল। ২০১৭ সালের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ফাইনালে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে শূন্যতে ফিরেছিলেন রোহিত। ২০১৯ সালের এক দিনের বিশ্বকাপের সেমিফাইনালেও রান পাননি রোহিত। নিউজ়িল্যান্ডের বিরুদ্ধে মাত্র ১ রানে আউট হয়েছিলেন তিনি। অন্য দিকে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে চুপ থেকেছে রাহুলের ব্যাটও। ২০১৯ সালের এক দিনের বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে নিউজ়িল্যান্ডের বিরুদ্ধে রান তাড়া করতে নেমে মাত্র ১ রানে আউট হয়েছিলেন তিনি। এবার সেমিফাইনালেও সেই ছবি দেখা গেল।

 



 

জসপ্রীত বুমরার অভাব মিটল না: জসপ্রীত বুমরার চোট ছিল ভারতের কাছে বড় ধাক্কা। মহম্মদ শামি, ভুবনেশ্বর কুমারের সঙ্গে তরুণ অর্শদীপ সিংকে জুড়ে দেওয়া হয়েছিল। গ্রুপ পর্বে তিন পেসার দাপট দেখালেও, সেমি ফাইনালের কঠিন লড়াইয়ে তিন জোরে বোলারকে পিষে দিয়ে চলে গেলেন অ্যালেক্স হেলস ও জস বাটলার। 


 

বিরাট কোহলি ও সূর্যের উপর অতি নির্ভরতা: বিরাট ৬ ম্যাচে ২৯৬ রান করে শীর্ষে। সেখানে সূর্য ৬ ম্যাচে ২৩৯ রান করে সর্বোচ্চ স্কোরারদের তালিকার তিন নম্বরে আছেন। দুই তারকা লিগ পর্বে ওপেনারদের ব্যর্থতা ঢেকেছিলেন। আদিল রসিদ, ক্রিস জর্ডন, স্যাম কারেনদের বিরুদ্ধে মাথা তুলে দাঁড়াতে পারল না ভারতের ব্যাটিং। বিরাট এই ম্যাচেও করলেন ৪০ বলে ৫০ রান। শেষদিকে হার্দিক পান্ডিয়া ৩৩ বলে ৬৩ রান। তবে সূর্য মোক্ষম ম্যাচে উত্তাপ ছড়াতে ব্যর্থ হলেন। ফলে পিছিয়ে গেল টিম ইন্ডিয়া।  

 

'বয়স্ক' মহাতারকার সমাহার: রোহিতের বয়স এখন ৩৫। বিরাট ৩৪ বছরে পা দিয়েছেন। ৩২ বছরের সূর্য এই মুহূর্তে টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে পারফর্ম করলেও, ফিটনেস বজায় রেখে কতদিন খেলে যেতে পারবেন সেটাই দেখার। 'ফিনিশার' হিসেবে দলে ঢোকা দীনেশ কার্তিক এই দলের সবচেয়ে সিনিয়র। তাঁর বয়স ৩৭। মহম্মদ শামি ও ভুবনেশ্বর কুমার, দুজনেই ৩২ পার করেছেন। এদের মধ্যে একমাত্র বিরাটের ফিটনেস নিয়ে কারও প্রশ্ন তোলার সাহস নেই। বাকিরা কতদিন তাঁদের টি-টোয়েন্টি কেরিয়ার টানেবেন সেটা নিয়ে কিন্তু প্রশ্ন রয়েই যাচ্ছে। 

 

অদ্ভুত কারণে বাদ যজুবেন্দ্র চাহাল: ভারতীয় দল পুরো প্রতিযোগিতায় সবাইকে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখে নিলেও, মাঠে নামার সুযোগই পেলেন যজুবেন্দ্র চাহাল। রোহিত ও হেড কোচ রাহুল দ্রাবিড় একনাগাড়ে রবিচন্দ্রন অশ্বিন ও অক্ষর প্যাটেলকে খেলিয়ে গেলেও, কোনও এক অজ্ঞাত কারণে 'ব্রাত্য' রয়ে গেলেন দলের একমাত্র 'রিস্ট স্পিনার'। আইপিএল-এ সাফল্য পাওয়া চাহালকে ভারতীয় টিম ম্যানেজমেন্ট ব্যবহারই করল না!