প্রদ্যুত্ দাস: প্রবল দুর্যোগে নিশ্চিহ্ন বাড়িঘর। জলঢাকার জলের তোড়ে ভেসে গিয়েছে গৃহস্থালির জিনিসপত্র। তবে অটুট ওঁদের ভালোবাসার বন্ধন। বন্যায় প্রাণ বাঁচাতে গামছা পরে কোনওমতে পড়শিদের কোলে চেপে ঘর ছেড়েছেন শতায়ু টাট্টু রায়। তাঁর পিছু পিছু একবুক জল ভেঙে বাঁধে এসে আশ্রয় নিয়েছেন স্ত্রী পুষ্পবালা। পরনে মলিন কাপড়। সম্বল বলতে এটুকুই। বাঁধের উপর বাঁশের মাচায় স্বামীকে আঁকড়ে ধরে দিন কাটাচ্ছেন তিনি।
Add Zee News as a Preferred Source
জলপাইগুড়ি জেলার ময়নাগুড়ির আমগুড়ি পঞ্চায়েতের বেতগাড়া খাটোরবাড়িতে বাঁধের উপর দেখা মিলল ওই বৃদ্ধ দম্পতির। প্রচণ্ড গরমে বাঁশের মাচার উপর শুয়ে হাফাচ্ছেন টাট্টু। পাশে বসে অশক্ত শরীরে ভাঙা হাতপাখা দিয়ে তাঁকে হাওয়া করছিলেন পুষ্পবালা। বললেন, ‘এই মানুষটাই আমার জীবনের সব। বাবাকে কুড়ি টাকা পণ দিয়ে সেই যে আমাকে বিয়ে করে নিয়ে এল, তারপর থেকে ওঁকে ছেড়ে এক রাতও অন্য কোথাও কাটাইনি। দুর্যোগে ছেড়ে যাব কীভাবে? ত্রাণ শিবিরে পলিথিনের ছাউনির নীচে দমবন্ধ করা গরম। তাই দিনের বেলা বাঁধের উপর খোলা জায়গায় বাঁশের মাচার উপরেই বুড়োকে সামলে রাখি। রাতটুকু পলিথিনের নীচে কাটাই।’
স্বামীর বয়স কত? পুষ্পবালার জবাব, একশো হবে। তবে ভোটার কার্ডে ৮০! স্ত্রীর কথা শুনে ফোকলা দাঁতে হাসেন টাট্টু। বলেন, ওর যখন ১৫ বছর বয়স, তখন বিয়ে করি আনি। সে কী আজকের কথা। ১৯৬৮ সালের বন্যাতেও ঘর ছাড়তে হয়েছিল।
আরও পড়ুন-চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারেন মিথুন, পেশাগত বিষয়ে ধৈর্য বাড়াবেন সিংহ...
আরও পড়ুন-এদেশে ছিলেন বেশ কয়েক বছর, ফেরার চেষ্টা করতেই পুলিসের হাত পাকড়াও ১৭ বাংলাদেশি
বৃদ্ধ দম্পতির তিন ছেলে। দীনেশ্বর রায়, ধনেশ্বর রায় ও জিতেন রায়। বিয়ে করে প্রত্যেকেরই আলাদা সংসার। বড় ছেলে দীনেশ্বরের কাছে থাকেন বৃদ্ধ-বৃদ্ধা। এতদিন টিনের ঘরেই জীবন কেটেছে। এবারই বাংলার বাড়ি প্রকল্পে ঘর মিলেছিল। এতদিনে মাথার উপর ছাদ হবে, এটা ভেবে হাসি ফুটেছিল টাট্টু ও পুষ্পবালার মুখে। কিন্তু বিপর্যয় তাঁদের মুখের সেই হাসি কেড়ে নিয়েছে। জলঢাকার স্রোত ভাসিয়ে নিয়ে গিয়েছে নির্মীয়মান ঘর। ফলে ঠাঁইহীন হয়ে পড়েছেন ওই বৃদ্ধ দম্পতি। ঘটনাচাক্ষুষ করে পাশে থাকার আশ্বাস ময়নাগুড়ি পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যান মনোজ রায়। মনোজ বাবু বলেন এত দুর্যোগ তারমধ্যেও এদের ভালোবাসার দৃশ্য মনকে নাড়া দেয়।
(দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির টাটকা খবর, আপডেট এবং ভিডিয়ো পেতে ডাউনলোড-লাইক-ফলো-সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের App, Facebook, Whatsapp Channel, X (Twitter), Youtube, Instagram পেজ-চ্যানেল)