Harimadhav Mukhopadhyay: নিভল মঞ্চের আলো, চলে গেলেন 'উত্তরের অজিতেশ'...
Harimadhav Mukhopadhyay: প্রয়াত হলেন বালুরঘাটের অন্যতম নাট্য ব্যক্তিত্ব হরিমাধব মুখোপাধ্যায়, তাঁকে শ্রদ্ধা জানাতে আপামর সাধারণ মানুষ রাস্তায় নামে এবং তাঁকে শেষ শ্রদ্ধা জানায় জেলা প্রেস ক্লাবের পর পক্ষ থেকেও...

শ্রীকান্ত ঠাকুর: প্রয়াত হলেন বালুরঘাটের অন্যতম নাট্য ব্যক্তিত্ব হরিমাধব মুখোপাধ্যায়, যাঁকে 'উত্তরবঙ্গের অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায়' হিসাবে শ্রদ্ধা করেছে বালুরঘাটের সাধারন মানুষ থেকে নাট্য কর্মী সকলেই। হরিমাধব মুখোপাধ্যায় শুধুমাত্র একজন বিশিষ্ট নাট্যব্যক্তিত্ব নয় তিনি একাধারে নট, নাট্যকার, নাট্যনির্দেশক, সংগঠক ও পেশায় ছিলেন বালুরঘাট কলেজের বাণিজ্য বিভাগের অধ্যাপক। পরে নাটকের সঙ্গে যখন অঙ্গাঅঙ্গী ভাবে যুক্ত হয়ে যান তখন তার নিজের প্রচেষ্টায় বালুরঘাটে 'ত্রিতীর্থ' নাট্যদলের প্রতিষ্ঠা করেন যেখান থেকে তার দক্ষিণ দিনাজপুরে নাটকের পরিচিতি গড়ে তোলা। দীর্ঘদিন নাট্যকের সঙ্গে যুক্ত থাকা এবং সারা রাজ্যের বিভিন্ন মঞ্চে এমনকি বাইরের রাজ্যেও বিভিন্ন মঞ্চে তিনি নাটক অভিনয় করেছেন এবং তাঁর রচিত নাটক নির্দেশনা দিয়ে মঞ্চস্থ করেছেন তাঁর এই অবদানের জন্য পশ্চিমবঙ্গ নাট্য অ্যাকাডেমির শ্রেষ্ঠ অভিনেতা ও শ্রেষ্ঠ প্রযোজকের পুরস্কার পেয়েছেন, ২০০৭-এ তিনি নাট্য পরিচালক হিসাবে সংগীত নাটক অকাদেমি পুরস্কার পান।
Zee ২৪ ঘণ্টার সব খবরের আপডেটে চোখ রাখুন। ফলো করুন Google News
১৯৪১-এর ৩ এপ্রিল বালুরঘাটে হরিমাধব মুখোপাধ্যায়ের জন্ম বালুরঘাটে কিন্তু তাঁর আদি বাড়ি ছিল বর্তমান বাংলাদেশে। পিতা নীলকান্ত মুখোপাধ্যায়। ১৯৫৬-তে বালুরঘাটে তৈরি করেন 'তরুণতীর্থ' নাট্যদল। স্কুলের পাঠ শেষ করে কলেজে পড়তে কলকাতায় গিয়েছিলেন বাণিজ্য বিভাগের ছাত্র ছিলেন তিনি। সেসময় কলকাতায় বিভিন্ন মঞ্চে বিশিষ্ট অভিনেতাদের অভিনীত নাটক দেখতে থাকেন তিনি যেখান থেকে তার নাটকের প্রতি আলাদা আগ্রহ জন্ম নেয়। নাট্য পরিচালক জগমোহন মজুমদার, অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমুখের কাছ থেকে থিয়েটারের দক্ষতা অর্জন করেন। এ সবের মধ্যেই তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাণিজ্য বিভাগে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি সম্পূর্ণ করেন। নাটকের টানে বালুরঘাটে ফিরে আসেন। ১৯৬৭-তে বালুরঘাট কলেজের অধ্যাপক হিসেবে নিযুক্ত হন। অধ্যাপনার পাশাপাশি পেশাদার ও অপেশাদার নাট্যমঞ্চের নানা ভূমিকায় বারবার অভিনয় করেছেন। তাঁর হাত ধরে ১৯৬৯-এ বালুরঘাটে প্রতিষ্ঠা করেন 'ত্রিতীর্থ' নাট্যদল। বিভিন্ন সময়ে 'তিন বিজ্ঞানী', 'জল', 'গ্যালিলিও', 'দেবাংশী' সহ ২০০৮ পর্যন্ত ৫৮ টি নাটক তাঁর প্রযোজনা ও নির্দেশনায় মঞ্চস্থ হয়। বালুরঘাটের নাট্য আন্দোলনের প্রধান মুখ হরিমাধববাবু সব মিলিয়ে প্রায় ৬০টি নাটক লিখেছেন। ২০১৭ সালে রাজবংশী ভাষায় অনূদিত 'রক্তকরবী' নাটকে শেষবারের মতো অভিনয় করেন। ২০১৮-তে 'বন্দুক' নাটকে তাঁর শেষ নির্দেশনা।
১৯৭৭-এ বিজন ভট্টাচার্যর 'দেবীগর্জন' নাটক প্রযোজনা ও পরিচালনার জন্য হরিমাধববাবু পান দিশারি পুরস্কার। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের তথ্য ও সংস্কৃতি বিভাগের তরফে তাঁর 'দেবাংশী' নাটককে শ্রেষ্ঠ প্রযোজনার পুরস্কারে সম্মানিত করা হয়। নাট্যনির্দেশনার জন্য ২০০৭-এ পান সংগীত নাটক আকাদেমি পুরস্কার।
২০১৯-এ রায়গঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে সাম্মানিক ডিলিট উপাধিতে ভূষিত করে। বেশ কিছুদিন অসুস্থ থাকার পর ১৭ মার্চ ২০২৫ কলকাতার একটি বেসরকারি নার্সিংহোমে পরলোক গমন করেছেন। তিনি মঙ্গলবার তার মৃতদেহ বালুরঘাটে নিয়ে আসা হলে আপামর সাধারণ মানুষ তাকে শ্রেষ্ঠ শ্রদ্ধা জানাতে রাস্তায় নামে। তার মৃতদেহ নিয়ে আসা হয় তারই হাতে তৈরি ত্রিতীর্থ নাট্যমঞ্চের সামনে সেখানেই তার গুণগ্রাহী ও সহকর্মীরা তাকে শ্রদ্ধা জানায়। শেষ শ্রদ্ধা জানানো হয় জেলা প্রেস ক্লাবের পর পক্ষ থেকেও।
(দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির টাটকা খবর, আপডেট এবং ভিডিয়ো পেতে ডাউনলোড-লাইক-ফলো-সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের App, Facebook, Whatsapp Channel, X (Twitter), Youtube, Instagram পেজ-চ্যানেল)