পার্থ চৌধুরী: মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্যধারার জনপ্রিয়তম বিষয়হল: বিদ্যাসুন্দরের প্রেমকাহিনি। এক সাধারণ যুবক সুন্দর আর রাজকন্যা বিদ্যার অপার প্রেমের সৌন্দর্য কয়েক শতাব্দী পার হয়েও মোহিত করে রেখেছে। শাশ্বত প্রেমের অতুলনীয় জয়গাথা এই কাব্য নানা কবি নানা রূপে রচনা করেছেন। এর মধ্যে একটি ভার্সনে বর্ধমানের উপকণ্ঠের তেজগঞ্জ (Tejganj) বিদ্যাসুন্দর (Bidyasundar Kali) কালীবাড়ি জড়িয়ে রয়েছে। রাজ পরিবারের নিযুক্ত পুরোহিত পরিবার বহু কষ্টে এই স্মৃতিটুকু বাঁচিয়ে রেখেছে। শুনে নেওয়া যাক বর্ধমানে লোকজীবনে মথিত বিদ্যাসুন্দরের উপাখ্যান (love story of princess Bidya and priest sundar)।
Add Zee News as a Preferred Source
আরও পড়ুন: Dhanteras 2025: ধনতেরসে দুই বিরল যোগ! পিছনে ফিরে তাকাতে হবে না ৩ রাশিকে, মাথায় মুষলধারে টাকার বৃষ্টি...
বিদ্যাসুন্দর কালীপুজো
বর্ধমানের বিদ্যাসুন্দর কালীপুজোর পিছনে জড়িয়ে রয়েছে সুন্দরের প্রেমের গল্প। রাজার কন্যা বিদ্যা ও মন্দিরের পূজারি সুন্দরের ভালবাসার জেরে বন্ধ হয়েছিল মন্দিরের নরবলি প্রথা। বর্ধমানের তখন মহারাজার আমল। বর্ধমানের উপকন্ঠের বেশিরভাগ এলাকা ছিল ঘন জঙ্গলে ভর্তি। বিশেষ করে দামোদর তীরবর্তী তেজগঞ্জ এলাকায় ছিল গভীর জঙ্গল। সেখানেই কালী মন্দিরে পুজো অর্চনা হত নির্জনে। ওই কালীমন্দিরে কেউ তেমন যেতেন না। এটি মশানকালী নামেই পরিচিত ছিল। রাজবিদ্রোহীদের নাকি এখানে এনেই চরম শাস্তি দেওয়া হত।

নরবলি
কথিত আছে, যাঁরা অন্যায় অত্যাচার করত, তাঁদের এই মন্দিরে দেবীর সামনে হাঁড়িকাঠে নরবলি দেওয়া হত। তাই এই কালী দক্ষিণ মশানকালী নামে পরিচিত ছিল। ফলে দিনের বেলাতেও ওই এলাকা দিয়ে যাতায়াত করার কেউ খুব একটা সাহস করত না।
মালার মধ্যে দিয়ে প্রেম
রাজার এক কন্যা ছিল, নাম বিদ্যা ৷ আর পূজারি ছিলেন সুন্দর নামে এক যুবক। সুন্দরের আর্থিক অবস্থা মোটেই ভাল ছিল না। ঠাকুরের ফুল দিতে আসত মালিনী মাসি। সে প্রতি ঠাকুর বাড়িতে ফুলের মালা দিত। যথারীতি একদিন মালিনী মাসি মন্দিরে ফুলের মালা নিয়ে এসেছেন। সেই মালা দেখে পূজারি সুন্দর খুব আকৃষ্ট হন। তিনি মালিনী মাসিকে জিজ্ঞাসা করেন, এত সুন্দর ফুলের মালা কে গেঁথেছে? যে মালা গেঁথেছে তাকে দেখার জন্য ছটফট করতে থাকে সুন্দর। মালিনী মাসি তাকে বলে, রাজকুমারী বিদ্যা মালা গেঁথেছেন। কিন্তু তাঁকে দেখা সম্ভব নয়।
আরও পড়ুন: Heavy Rains Flood: ভয়াল বৃষ্টিবন্যাধস! কাদাস্রোতে ঢেকেছে সেতু-সড়ক, ভেঙেছে ১০০০০০ ঘরবাড়ি, বিপুল মৃত্যু...ভয়াবহ পরিস্থিতি...
বিদ্যা-সুন্দরকে কালীর সামনে বলি
কিন্তু পরবর্তীকালে বিদ্যার সঙ্গে সুন্দরের পরিচয় হয়। তাঁদের মধ্যে প্রণয়ের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এমনকী তাঁরা নাকি মন্দিরের পাশ থেকে রাজবাড়ি পর্যন্ত একটা সুড়ঙ্গ খুঁড়ে ফেলেন। সুড়ঙ্গের ভিতর দিয়ে বিদ্যা ও সুন্দর একে-অপরের সঙ্গে দেখা সাক্ষাৎ করতে যেতেন। একদিন চরের মাধ্যমে তেজচাঁদ বিদ্যা ও সুন্দরের প্রণয়ের ব্যাপারে জেনে ফেলেন। খবরটা কানে যেতেই রাজা প্রচণ্ড রেগে যান। তিনি বিদ্যা এবং সুন্দরকে কালীর সামনে বলি দেওয়ার আদেশ দেন ৷ রাজার হুকুম মতো তাঁদের বলি দিতে নিয়ে যাওয়া হয় কালী মন্দিরে। হাঁড়িকাঠে বিদ্যা ও সুন্দর দু'জনকে ঢোকানোর আগে তারা মা কালীকে প্রার্থনা করেন। এরপর খড়গ হাতে বলি দেওয়ার সময় কাপালিক জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। বিদ্যা আর সুন্দর মন্দির থেকে উধাও হয়ে যান।

ঐতিহ্য
এখনও প্রাচীন রীতিনীতি মেনেই এই কালী মন্দিরে পুজো হয় বলে জানান সেবাইত আভা বটব্যাল। রাজবংশ থেকেই এই পুরোহিত পরিবারকে নিযুক্ত করা হয়েছিল। পুজোয় জাঁকজমক এখন আর আগের মতো নেই। এই গল্পের টানে তবু কিছু মানুষ এখানে আসেন। মা এখানে পাষাণ মূর্তি। নিত্যদিন পুজো হয়। সন্ধ্যা আরতি হয়। সেবায়েত পরিবারের 'মাসিমা' আভা বটব্যাল বর্তমানে অসুস্থ। গতবছর কালীপুজো থেকেই তাঁর শরীর খারাপ। তবু এই পরিবারটি কোনোক্রমে আগলে রেখেছে ভুলতে বসা কাহিনির সুন্দর মন্দিরটিকে।
(দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির টাটকা খবর, আপডেট এবং ভিডিয়ো পেতে ডাউনলোড-লাইক-ফলো-সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের App, Facebook, Whatsapp Channel, X (Twitter), Youtube, Instagram পেজ-চ্যানেল)