রামপুরহাটে বিস্ফোরণ: তৃণমূলের গোষ্ঠীকোন্দল, তাই বুঝেই দেরিতে পুলিস

বীরভূমের রামপুরহাটে বিস্ফোরণস্থল ঘুরে দেখতে আজ রামপুরহাট যাচ্ছেন রাজ্য পুলিসের ডিজি নপরাজিত মুখোপাধ্যায়। সঙ্গে যাচ্ছেন রাজ্য পুলিসের আরও কয়েকজন উচ্চপদস্থ আধিকারিক। মঙ্গলবার সন্ধে নাগাদ রামপুরহাটের একটি গ্রামের পরিত্যক্ত বাড়িতে বোমা তৈরির সময় বিস্ফোরণে প্রাণ হারায় ছয় দুষ্কৃতী। দুর্ঘটনায় জখম হয়ে আরও কয়েকজন ভর্তি রামপুরহাট মহকূমা হাসপাতালে। রাতেই বিস্ফোরণস্থল পরিদর্শনে যান বীরভূমের পুলিস সুপার হৃষিকেশ মীনা। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, তৃণমূলের গোষ্ঠীকোন্দলের জেরে রবিবার থেকে উত্তপ্ত ছিল ওই গ্রাম। চলছিল বোমাবাজি। গ্রামবাসীদের বক্তব্য, তৃণমূলের এই গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের ঘটনায় বহিরাগতরা গ্রামে ঢুকে বোমা তৈরি করছিল। ঘটনার পর থেকে এলাকা এখনও থমথমে। মোতায়েন রয়েছে ‍র্‍যফ। রাস্তায় রাস্তায় টহল দিচ্ছে পুলিস। নিহতের সংখ্যা বাড়ার আশঙ্কা করছে পুলিস। তাদের দাবি, দুর্ঘটনার পর হয়ত কয়েকটি দেহ পাশের খালে ভাসিয়ে দেওয়া হয়েছে। মৃতের সংখ্যা নিয়ে এখনও নিশ্চিত হওয়া যাওয়া যাচ্ছে না। কারণ পুলিস পৌঁছনোর আগে কিছু দেহ সরিয়ে ফেলার অভিযোগ উঠেছে। হতাহতেরা সকলেই সদ্য তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দিয়েছিল। গোটা ঘটনায় তৃণমূলের গোষ্ঠী কোন্দল সামনে চলে এসেছে।
মঙ্গলবারের রাত। রামপুরহাটে ঢোকার মুখে একটি খালের ধারে নির্জন জায়গায় হঠাতই বিস্ফোরণের তীব্র শব্দ। তারপরই ভেসে আসে গোঙানি আর চিত্কার। ঘটনাস্থল থেকে থানার দূরত্ব বেশি নয়। অভিযোগ, তা সত্ত্বেও তিন ঘণ্টা পরে বিস্ফোরণস্থলে পৌঁছয় পুলিস। এলাকায় পৌঁছে তারা দেখে, কিছু দেহ সরিয়ে ফেলার চেষ্টা চলছে। একজনকে তাড়া করতেই সে দুটি দেহ ফেলে রেখে অন্ধকারে পালিয়ে যায়। ঘটনাস্থল থেকে আরও একটি দেহ উদ্ধার করা হয়। পুলিসের অনুমান, নির্জন ওই এলাকায় প্রায় তিরিশজন দুষ্কৃতী বোমা বাঁধছিল। খালের জলে কিছু দেহ ভাসিয়ে দেওয়ার আশঙ্কা করছে পুলিস। বিস্ফোরণে আহতদের উদ্ধার করে স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে নূর আলম এবং টনি শেখ নামে দুজনের মৃত্যু হয়। বর্ধমানের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে চন্দন শেখ নামে আরও একজনের মৃত্যু হয়। গভীর রাতে বীরভূমের পুলিস সুপার ঘটনাস্থলে যান। উত্তেজনা থাকায় মোতায়েন করা হয় র্‌যাফ।  ঘটনার সঙ্গে জড়িয়ে গিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেসের নাম। সেই সঙ্গে জেলা তৃণমূল নেতৃত্বে দলীয় কোন্দলের বিষয়টিও সামনে চলে এসেছে।
 
গত রবিবার বিকেলে রামপুরহাটের রেলমঞ্চে তৃণমূল যুবার একটি সভা হয়। বীরভূম জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের বিরোধী গোষ্ঠী ওই সভার আয়োজন করে। সভায় ছিলেন মন্ত্রী নূরে আলম চৌধুরী এবং রামপুরহাট, সিউড়ি ও নানুরের তিন তৃণমূল বিধায়ক। যে গ্রামে মঙ্গলবার রাতে বিস্ফোরণ ঘটে, ওই গ্রামেরই কয়েকজন যুবক রবিবারের সভায় তৃণমূলে যোগ দেয়। রবিবার সন্ধেয় তারা গ্রামে ফেরার পরই বোমাবাজি শুরু হয়। অভিযোগ, মঙ্গলবার খালের পাশে যেখানে বিস্ফোরণ ঘটে, সেখানে তৃণমূলে যোগ দেওয়া যুবকরা যেমন ছিল, তেমনই বোমা বাঁধায় পারদর্শী বহিরাগত দুষ্কৃতীরাও ছিল।
 
বীরভূম জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব এই ঘটনায় দলীর সভাপতির বিরোধী গোষ্ঠীর ঘাড়েই দায় চাপিয়েছে। তৃণমূল যুবার সভায় কার নির্দেশে ওই যুবকদের আনা হয়েছিল, তা নিয়ে দলের অন্দরমহলে চাপানউতোর শুরু হয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে পুলিসের ভূমিকা নিয়েও। কারণ, যে গ্রামে রবিবার থেকে লাগাতার বোমাবাজি চলছিল, তার কাছেই এসডিপিও-র বাংলো। অভিযোগ, তবু দুষ্কৃতী তাণ্ডব নিয়ে নিষ্ক্রিয় ছিল পুলিস । মঙ্গলবার রাতেও পুলিস ঘটনার অনেক পরে বিস্ফোরণস্থলে যায়। এই দেরিতে যাওয়া নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
 

English Title: 
WB DG visiting rampurhat blast ground
Home Title: 

রামপুরহাটে বিস্ফোরণ: তৃণমূলের গোষ্ঠীকোন্দল, তাই বুঝেই দেরিতে পুলিস

No
7802
Is Blog?: 
No
Section: