পার্থ প্রতিম চন্দ্র


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

সিডনি, ২০১৪, ২৫ নভেম্বর--একেবারে বিদ্যুত্‍ গতিতে বোলার দৌড়ে যাচ্ছে। সবুজ গালিচায় ভরা মাঠটা কত সুন্দর, কত প্রাণবন্ত।


হিউজেস- দূর থেকে দেখে বোলারের মুখটা এখান থেকে ঠিকমত দেখা যাচ্ছে না। চেনার দরকারও নেই এখন। হাওয়াটাও বেশ জোরে দিচ্ছে। হাফ সেঞ্চুরি হয়ে গিয়েছে, এখন চাপটা কিছুটা কম। তবে কম্পিটেশন খুব, সেঞ্চুরি না করলে কোনও উপায় নেই... এই তো এবার বোঝা যাচ্ছে অ্যাবোটকে ... ও তো আমার মতই দেশের জার্সি পরার জন্য দিনরাত এক করে পরিশ্রম করছে। দু জনের কত মিল...এখন মনে হচ্ছে আমরা যেন জীবনের লড়াই লড়ছি। আমার উইকেটটা পেলে ও জাতীয় দলে সুযোগ পাওয়ার দিকে এগিয়ে যাবে, আর আমি ওকে ঠিকমত সামলে দিলে আমরাও সুযোগের খাতায় নাম উঠেব।


সখের বাজার, ২০১৩, ২৪ নভেম্বর- সো সো করে ছুটে চলেছে দু চাকার গাড়িটা। সুন্দর সকালে পিচের রাস্তাটা দারুণ দেখাচ্ছে।


হিমাংশু-এই তো এই রাস্তাটা পেরোলেই বড় রাস্তা এসে পড়বে। সেখানে থেকে আধ ঘণ্টা খানেক চালালেই জীবনের একটা সিঁড়ির খোঁজ পাওয়া যাবে। ঠান্ডাটা বেশ জাঁকিয়ে পড়েছে। গলায় মাফলারটা আছে বলে ঠান্ডা হাওয়াটা জড়িয়ে না ধরে আদর করে চলে যাচ্ছে। এখন হিমাদ্রির কথা খুব মনে পড়ছে। ও একটা বাইকে এখন বেলগাছিয়া থেকে রওনা দিয়েছে নিশ্চয়। আজ আমি হিমাংশু কিংবা হিমাদ্রি, যে কোনও একজন জীবনের বিশাল সমুদ্রে নৌকায় ওঠার সুযোগ পাবে। হিমাদ্রি, বা আমি যার প্রেসেন্টেশন পছন্দ হবে সেই সুযোগ পাবে দিল্লির হেড অফিসে কাজ করার। যে প্রেসন্টেশনের লড়াইয়ে হেরে যাবে তাকে চাকরি ছাড়ার নোটিশ দিতে হবে। এখন খুব হাসি পাচ্ছে।



সিডনি, ২০১৪, ২৫ নভেম্বর- হিউজেস- সামনে এখন অনেক চ্যালেঞ্জ। এই ম্যাচটায় নিজের জাত চেনাতেই হবে। সময় নেই, আর সময় নেই। এই তো বলটা থাক ওসব ....এখন শুধু দেখা দরকার বলটা। হেলমেটটা একটু সরে গেলো মনে হল... এই তো বলটা আসছে, আসছে...



সখের বাজার, ২০১৩, ২৪ নভেম্বর- আরে সামনে কী একটা আসছে না। ফোনটা বাজল কী.. হিমাদ্রি নয়তো! হয়তো কিছুটা দরকার ওর...হেলমেটটা কানের কাছে চেপে আছে তবু রিংটোনটা শোনা যাচ্ছে পরিষ্কার...থাক ফোনটা...এখন সামনে লরিটা বেশ জোরে ধেয়ে আসছে.....



সিডনি, ২০১৪,২৫ নভেম্বর-হিউজেস- বলটা সপাটে আসছে...একটু ভয় লাগছে না, ক্লার্ক না খেললে আমি সুযোগ পেতে পারি..এই বেয়াদপ বলটা আমার স্বপ্নে ভাগ বসাতে আসছে...একে সামলাতে হবে...সামলাতে হবেই


সখের বাজার, ২০১৩, ২৪ নভেম্বর- হিমাংশু-লরিটা এভাবে উল্টোদিকে আসছে কেন! বাঁদিকে আর জায়গা নেই... ডানে চাপার উপায় নেই...সামনে শুধু বেয়াদপ লরিটা..হিমাদ্রিকে হারাতে হবে, হেড অফিসে গিয়ে চাকরিটা পাকাতে হবে..এই বেয়াদপ লরিটা আমার স্বপ্নে ভাগ বসাতে আসছে...একে সামলাতে হবে...সামলাতে হবেই
----------------------------
দুটো ঘটনা। হয়তো মৃত্যুর ঠিক আগে এমনই ঘটেছিল। সিডনির ঘটনাটা আপনারা সবাই জানেন। সখের বাজারেরটা জানেন না। ওই হতভাগ্য বাইক চালক আমার বন্ধু হিমাংশু। হেলমেট ছিল, তবু মাথার আঘাতটা নিতে পারেনি। হাসপাতালে মারা যায়। ঘটনার তারিখটা একদম সাজানো নয়। ওয়েবসাইটে দেখলাম হিউজেসের হেলমেটটা নাকি সস্তার আর পুরনো ছিল। জানেন, আমার বন্ধু হিমাংশুরও হেলমেটটা দশ বছর পুরনো ছিল। চোখে জল চলে আসছে আর লিখতে ভাল লাগছে না। শুধু এটাই বলব, হেলমেটের তলায় লুকিয়ে থাকা দুটো মৃত্যু আমায় লিখতে বাধ্য করাল।  হিমাংশু স্বর্গে তুই হিউজেসের সঙ্গে কথা বলে নিস ভাই। তুই তো ক্রিকেটটা খুব ভালবাসতিস। ওখানে আবার ঝগড়া করে বলিস না, হেলমেটটা পুরনো ছিল না হলে হয়তো...