স্বরূপ দত্ত


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

কথা কম কাজ বেশি, এই প্রবাদটাই তো শুনে বড় হয়েছেন। হয়তো সারা জীবন মেনে চলেছেন। কিংবা অনেক চেষ্টা করেও মেনে চলতে পারেননি ঠিকভাবে। কিন্তু যখনই যাকে সুযোগ পেয়েছেন, টুক করে জ্ঞানটা তাঁকে দিয়েই দিয়েছেন যে, কথা কম কাজ বেশি। আজ দেশজুড়ে চলছে সাধারণ ধর্মঘট। যাঁরা ধর্মঘটের বিরোধীতা করছেন, তাঁদের বক্তব্য এটাই যে - বনধ কম কাজ বেশি, মিছিল কম কাজ বেশি, কথা কম কাজ বেশি।


কিন্তু এ পৃথিবীর কোনও কিছুই একপক্ষের মতে চলে না। শুনতে হবে দু'পক্ষেরই কথা। কথা বলতে মানুষ এত পছন্দ করে যে, কথা কম ব্যাপারটাই মানুষ বলতে তো পারে। কিন্তু নিতেই পারে না। কি তাই তো? কথা কম তখনই মানবো, যখন কথা কম বলব, কিন্তু টাকা বেশি রোজগার করব। কিন্তু এমন আবার হয় নাকি যে, কথা কম বললেই রোজগার বাড়বে! বিশেষ করে কয়েকটি নির্দিষ্ট পেশাতে তো আপনাকে বেশি কথা বলতেই হবে। আপনি মার্কেটিংয়ের সঙ্গে যুক্ত। কথা কম বললে আপনার বাড়িতে রান্না হবে তো? আপনি হয়তো শিক্ষক মানুষ। ছাত্রের সামনে কথা না বলে গ্যাঁট হয়ে বসে থাকলে ছাত্রের অভিভাবক আপনাকে টাকা দেবেন আদৌ? আপনি হয়তো কল সেন্টারে চাকরি করেন। ফোন তো তোলেন, কিন্তু কথাই বলেন না! আপনার কোম্পানি আপনাকে রাখবে পরের মাসে?


এরকমই অনেক অনেক পেশা আছে, যেখানে কথা শুধু বলতে হয় না। অনেক বেশি বলতে হয়। যত বেশি কথা বলবেন, তত বেশি টাকা রোজগার করবেন। ইদানিং আমাদের মধ্যে একটা প্রবণতা আছে, লোকের টাকা রোজগারটা ভাগ করে দেখা। উদাহরণ দিলেই বুঝতে পারবেন। ধরুন (কথার কথা) ওয়ার্ন আইপিএলে ১০ টা ম্যাচ খেলে ১ কোটি টাকা পাচ্ছেন। অমনি হিসেব করে বলা হবে যে, ওয়ার্ন তাহলে প্রতি ম্যাচ থেকে আয় করছেন ১০ লক্ষ টাকা। আবার তাঁর বলের সংখ্যাও ভাগ করে বলা হবে যে, ওয়ার্ন একটা বল করলে রোজগার করবেন ১ লক্ষ টাকা করে! এগুলো শুনতে আমাদের খুব ভালো লাগে।


আজ আরও একটা উদাহরণ দিতে চাই। জেমস ক্যামেরনের টার্মিনেটর টু দেখেছেন তো? ওই সিনেমাটার ২৫ বছর পূর্তি চলছে। সুপার-ডুপার-বাম্পার হিট সিনেমা। আর্নল্ড সোয়ারজেনেগারের সেরা সময়ের সিনেমা। একটু বেশি চলবে তো বটেই। গত আগস্ট মাসেই ভারতে ২৫ বছর আগে রিলিজ করেছিল সিনেমাটা। এই সিনেমাতে অভিনয় করে আর্নল্ড সোয়ারজেনেগার কত পারিশ্রমিক নিয়েছিলেন জানেন? ১৫ মিলিয়ন ডলার। অর্থাত্, ১০১ কোটি টাকা মতো। মাত্র আড়াই ঘণ্টার একটা সিনেমায় অভিনয় করে মানুষটার রোজগার ছিল এটা! সেটাও আজ থেকে প্রায় ২৭ বছর আগে! যদি এটাতে ঘাবড়ে যান, তাহলে বলি মজার তথ্য আরও আছে।


এই সিনেমাটায় নায়ক তো সোয়ারজেনেগার। তাঁকে দেখতেও লেগেছিল বড় ভালো। অ্যাকশনে ভরপুর সিনেমা। কিন্তু আন্দাজ করতে পারেন সোয়ারজেনেগার এই সিনেমায় মোট কটা ডায়লগ বলেছিলেন? আরও পরিষ্কার করে জিজ্ঞাসা করলে বলতে হয় যে, আর্নল্ড এই সিনেমায় মোট কত শব্দ উচ্চারণ করেছিলেন? উত্তরটা শুনেই নিন। ৭০০ শব্দ। হ্যাঁ, মাত্র ৭০০ শব্দ উচ্চারণ করার জন্য আর্নল্ড সোয়ারজেনেগার টার্মিনেটর টু থেকে রোজগার করেছিলেন ১০১ কোটি টাকা! এমন নয় ওটা কোনও পর্ন যে, কথা বলার দাম নেই, শরীর দেখালেই চলবে। কমার্শিয়াল ফিল্মের হিরো নাকি ৭০০ শব্দ উচ্চারণ করে বাড়ি নিয়ে গেলেন ১০১ কোটি টাকা! কমার্শিয়াল ফিল্মে এমন উদাহরণ আর একটা খুঁজে পাওয়া দায়, যদি না সেই ফিল্মের নায়কের চরিত্র বোবার হয়।


এটাই বোধ হয় কথা কম, রোজগার বেশির সেরা উদাহরণ! সোয়ারজেনেগার চার্লি চ্যাপলিন নন যে, নির্বাক ছবিতে অভিনয় করেছেন। এই যুগের বানিজ্যিক সিনেমায় অভিনয় করে কোনও হিরো ৭০০ শব্দ মানে, কম-বেশি ৭০টা বাক্য উচ্চারণ করলেন গোটা সিনেমায় আর রোজগার করলেন ১০১ কোটি টাকা! আজ বনধের দিনে বাড়িতে বসে বসে ভাবতে থাকুন, এরকমভাবে বেশি টাকা আপনিও কীভাবে রোজগার করতে পারেন। আপনাকে আর্নল্ডের মতো ১০১ কোটি টাকা রোজগার করতে হবে না। তুলনায় অল্পই করুন। কিন্তু সেই রোজগারটা যদি আপনি কম কথা বলে করে ফেলেন, দেখবেন দারুণ লাগবে। আর আপনার মনে পড়ে যাবে টার্মিনেটর টু-এর কথা। জাজমেন্ট ডে। ২৫ বছর পরে এসেও আপনাকে হয়তো একটা সিদ্ধান্ত নিতে মানসিকভাবে প্রভাবিত করল।


আরও পড়ুন নষ্টতে কষ্ট পেয়েও চিনাদের উপর মানহানির মামলা করল না পাখি!