স্বরূপ দত্ত


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

যা দেখা যাচ্ছে, ঠিক কি সেটাই? এমনটা নয় তো যে, যেটা দেখা যাচ্ছে, সেটা গোটাটাই ভুল। আর সেই ভুল ভিতের উপর স্বপ্নের ইমারত গড়ছেন আপনি? আসলে আমাদের জীবনে আকছার এমনটাই ঘটে থাকে। এমন নয় যে, ব্যাপারটা শুধু আজেকর দিনেই। পৃথিবীর শুরু থেকেই হয়ে আসছে এমনটা। আসলে মানুষ সব (বেশিরভাগটাই) ভুলই জানতো। অথবা, ধারণা করে নিত। কিন্তু যত দিন যায়, মানুষ তাঁর ভুল বুঝতে পারে। তারপর সেই ভুলটাকে ভুলে গিয়ে নতুন করে ঠিকের পথে এগিয়ে চলে।


আমাদের বাবা-মা, গুরুজনরা আমাদের প্রতিনিয়ত শেখান যে, চকচক করলেই সোনা হয় না। বেশ ভালো উদাহরণ। একটুখানি মগজে ঢুকিয়ে নিতে পারলে অন্তত চকচকে জিনিসে ঠকবেন না। আপনার মাথায় ঠিক কাজ করবে প্রবাদটা যে, চকচক করলেই সোনা হয় না। তাই আপনি 'একগুঁয়ে' না হলে নিশ্চয়ই আর একবার ওই চকচকে জিনিসটাকে পরখ করে নেবেন। কিন্তু এই পৃথিবীর সব জিনিসই তো আর চকচকে হবে না। তাই সেক্ষেত্রে আপনি কীভাবে বুঝবেন যে, যেটা দেখা যাচ্ছে, সেটা ঠিক নয়?


এক্ষেত্রেও রয়েছে একটা উদাহরণ। যদি এই লেখাটা পড়ার পর আপনি মগজে ঢুকিয়ে নিতে পারেন, তাহলে আপনি আর শুধু দেখা দিয়ে নিজের সিদ্ধান্ত তৈরি করবেন না। লোকে তো বলে 'নিজে চোখে দেখেছি'। কে বলে, নিজে চোখে ভুল দেখা যায় না! আসলে এই পৃথিবীর সবথেকে পুরনো শিক্ষা তো দর্শন। মানে সেই দেখা। আসলে আপনি কীভাবে দেখছেন, কীভাবে দেখবেন তার উপরই নির্ভর করবে সবকিছু। শুধু মাথায় রাখবেন আপনার নিজের চোখে দেখা জিনিসগুলোই এই পৃথিবীর চিরসত্য নয়। আসলে আমার-আপনার সব দেখার উপায় নেই, যোগ্যতা নেই, সামর্থ নেই অথবা ইচ্ছেও নেই। তাই এবার থেকে শুধু এক দেখাতেই কোনও জিনিস সম্পর্কে কঠিন সিদ্ধান্ত নিয়ে নেবেন না।


এই গোটা বিষয়টা চিরকাল যাতে আপনার মাথায় থাকে, সেইজন্য একটা উদাহরণ দিলাম। যদি আপনি একবার এটা মগজে ঢুকিয়ে নিতে পারেন, দেখবেন আপনার জীবনে ঠকার সংখ্যা অনেক কমে গিয়েছে। উদাহরণটা রামধনু নিয়ে। রামধনুই বাছার কারণ, এটা যে নতুন করে শুরুর প্রতীক। যাক, যা গেছে তা যাক, বলে বৃষ্টি সব ধুয়ে দিয়ে যাক। আর তারপর নতুন করে স্বপ্ন দেখা শুরু করুন। সাত রঙের রামধনু উঠুক আপনার দুচোখে, মনে, জীবনে। আর গল্পটা এখানেই। যেটাকে চিরকাল রামধনু বলে জেনে এলেন, সেটা তো আদৌ রামধনু নয়!


রামের ধনুক থেকেই তো রামধনু। অথবা bow মানেও যে ধনুক। আকাশে সাতরঙা রামের ধনুকের মতো দেখা যায় বলেই তো রামধুন। আছে বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যাও। সেটা এরকম যে, - বৃষ্টির কণা বা জলীয় বাষ্প-মিশ্রিত বাতাসের মধ্য দিয়ে সূর্যের আলো যাওয়ার সময় আলোর প্রতিসরণের কারণে বর্ণালীর সৃষ্টি হয়। এই বর্ণালীতে আলো সাতটি রঙে ভাগ হয়ে যায়। এই সাতটি রঙ হচ্ছে বেগুনী (violet), নীল (blue), আকাশি (indigo), সবুজ (green), হলুদ (yellow), কমলা (orange) ও লাল (red)।


কিন্তু আসলে যে রামধনু এমন নয়ই। তার আকৃতি তো ধনুকের মতো নয়। আসলে রামধনু তো গোল। একেবারে বৃত্তাকার। নিচের ছবিতেই দেখে বুঝে নিন। এই রামধনুর ছবিটা আকাশে প্লেন থেকে তোলা। আসল রামধনুর আকার হয় এমন গোল, বৃত্তাকার। কিন্তু আমরা যেহেতু মাটিতে বা ভূপৃষ্ঠে থাকি, তাই আমরা ওই বৃত্তাকার রামধনুর দেখতে পাই আর্ধেকটা। আর সেটা দেখেই যুগের পর যুগ ধরে আমরা সেটাকে ধনুরাকৃতি বলে চালিয়ে দিলাম বা গেলাম! অথচ, জিনিসটা একেবারে অন্যরকম! জীবনটাও ওরকম। দেখলেন, জানলেন, বুঝলেন, ব্যাখ্যা করলেন একরকম। আর আসলে সবকিছুই ছিল অন্যরকম। আপনি থেকে গেলেন আপনার ঠিক নিয়ে। তাতে প্রকৃতি, যুক্তি কিংবা বিজ্ঞানের ভারী বয়েই গেল!



কী তাহলে মনে থাকবে তো এবার থেকে? দর্শন বদলান। রামধনু মুখে যদিও বা বলেন, মনের ছবিতে ওটাকে ধনুকের মতো না দেখে গোলাকার বা বৃত্তাকারই দেখুন। তাহলেই পৃথিবীটা সত্যির পথে, যুক্তির পথে, বিজ্ঞানের পথে এবং সবশেষে ঠিক পথে - পথচলা শুরু করবে। সেই পথের পথিক না হয়ে কেন নিজে খামোখা নিজে চোখে দেখেছি বলে গোটা জীবনটা নষ্ট করে ফেলবেন! এরপর তাই কখনও রামধনু আকাশে উঠতে দেখলে, আপনার দুচোখে যতই ধনুকরঙা দেখুন, কল্পনার চোখে কিন্তু গোলাকার সাতরঙাই দেখবেন। অনেক রামধনু উঠুক আপনার জীবনে। রঙে ভরে উঠুক আপনার জীবন এই প্রার্থাই রইল।


আরও পড়ুন তারাদের গাড়ি