স্বরূপ দত্ত


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

কদিন ধরে 'নাম' নিয়ে চারিদিকে বড় হইচই হচ্ছে। উইলিয়াম শেকসপিয়র সেই কবে বলে গিয়েছিলেন, 'নামে কী এসে যায়!' এসে যায় বলে এসে যায়! ওই নাম থেকেই যে 'গুডউইল'। সেটা ভাঙিয়ে কত মানুষের, কত প্রতিষ্ঠানের যে কত কত লাভ হয় চিরকাল। আজ নাম নিয়ে একটা ভয়ঙ্কর চিন্তা মাথায় এসেছে। তাই লেখাটা লেখা। আপনি যদি পুরুষ হন, তাহলে দেখবেন আপনার প্রথম প্রেমের সেই মেয়েটিকে আজও ভুলতে পারেননি। না তো আপনি ভুলতে পারবেন কোনওদিন। তাঁর সৌন্দর্য, তাঁর ছেলেমানুষি, তাঁর ভালোবাসার প্রতিটা মুহূর্ত আজও যে টাটকা আপনার হৃদয়ে। আর তাঁর নামটা? যখন প্রেম করতেন বা তাঁকে ভালোবাসতেন, ওই নামটা কী ভালো ছিল না আপনার কাছে? তখন আপনার সেই প্রেমিকার নামটাই যেন এই পৃথিবীর সবথেকে সুন্দর নাম। বইয়ের পাতার মাধবীলতারা তো এভাবেই জীবন্ত হয়ে ধরা দেন প্রতিটি পুরুষের মনে।


সিনেমা এমন মাধ্যম, যেখান থেকে 'নাম' সত্যিই নাম করে ফেলে। জনপ্রিয় হয়। শাহরুখ খান যখন 'সেনিওরিটা' ডাকেন, মনে হয় আপনিই আপনার প্রেমিকাকে ডাকছেন। উত্তম কুমার যখন 'রমা' বলে বা 'রীনা' বলে ডাকতেন, তখনও তো কী ভালো লাগতো তাই না? সেদিনের দেবদাস অথবা পরে জয়-বীরু, কিংবা আরও পরে রাহুল, রাজ অথবা প্রেম কিংবা আকাশ, এই নামগুলো আমাদের মনে গেঁথে যায় চিরকাল। দেখবেন তারকাদের নাম ভালো না হলে (পছন্দ না হলে) সেই তারকার জনপ্রিয় হয়ে ওঠাও বেশ কঠিন হয়। খুব ভালো ফুটবলারের নাম নাড়ুগোপাল হতে পারে। কিন্তু 'স্টার' ফুটবলারের নাম কীভাবে নাড়ুগোপাল হবে? সিনেমার নায়িকারাই তো আমাদের স্বপ্নসুন্দরী। তাঁদের দেখেই তো আমাদের সুন্দরী নারীকে কাছে পাওয়ার চেষ্টার শুরু। বলিউড দিয়েছে কী সব সুন্দরী আর কী সব তাঁদের নাম! যুগের সঙ্গে একেবারে উপযুক্ত। নার্গিস থেকে মধুবালা কিংবা বৈজন্তিমালা থেকে মালা সিনহা কিংবা আশা পারেখ থেকে শায়রাবানু। পরে রেখা, জয়া, টিনা, শ্রীদেবী, মাধুরী, জুহি, পূজা, দিব্যা, কাজলরা। আর এখন তো ক্যাটরিনা, দীপিকা, কঙ্গনা, এই নামগুলো শুনলেই আপনার মনে যেন কেমন কেমন প্রেম গুলিয়ে ওঠে। তাই না?


শুরুর এতগুলো কথা বলতেই হল। বলিউডে আর এক অভিনেত্রী বা নায়িকার উদয় হল এবার। বলিউডের সিনেমা চিনে রফতানি করতে গেলে যে এটাই সহজ সমীকরণ। চিনের অভিনেত্রীকেই আমদানি করে আনো বলিউডের সিনেমায়। কবীর খান তাঁর পরের ফিল্ম বানাচ্ছেন সলমন খানকে নিয়ে। ফিল্মের নাম টিউবলাইট। আর সলমনের বিপরীতে এই ফিল্মে অভিনয় করবেন চিনের অভিনেত্রী 'জু জু'! আর এই নামটা শোনা থেকেই মনে মনে হাসছি। কিছুতেই থামছে না। ছেলেবেলা থেকে মা কত ভয় দেখিয়েছে, ওই যে জুজু আসছে! ব্যাস, এই জুজুর কথা শোনামাত্র মা যা বলতো, সব শুনতাম। খেয়ে নিতাম, চোখ বুজতাম, কান্না থামাতাম। আমার সব বাঁদরামির ওষুধ ছিল জুজু। এতটাই ভয় পেতাম জুজুকে। আমি নিশ্চিত, আপনাকেও ছেলেবেলায় কতবার যে জুজুর ভয় দেখানো হয়েছে! আর আপনিও যে বাচ্চাদের কতবার জুজুর ভয় দেখিয়েছেন! এসব ভেবেই কিছুতেই হাসি থামাতে পারছি না। সিনেমা দেখে এসে আমার থেকে একটু বয়সে বড় মানুষদের কী বলব? সলমন খান আর জুজুর সিনেমা দেখে এলাম! এই কথা শুনে সেই মানুষগুলোর কী হবে! জুজু কোনও নায়িকার নাম হতে পারে নাকি! জানি, জুজু মানে চিনা ভাষায় হয়তো ভালো কিছু। কিন্তু জুজু মানে তো আর আমাদের এখানে ভালো কিছু নয়। **** হয়তো চিনে খুব ভালো শব্দ। কিন্তু সেটা এখানে বলা যায় নাকি লেখা যায়? পথে হলো দেরীতে, সুচিত্রা সেনের মুখে সংলাপ ছিল (উত্তম কুমারকে বলছেন) - 'আমি প্রীতিকর জানতাম। কিন্তু ভীতিকর এটা জানতাম না!' জুজুর জন্য যে এই সংলাপটাই সেরা হত!


ভাষা কখনও শিল্পের অন্তরায় হতে পারে না। হয়নি। হবেও না। কিন্তু ভয় যে, সুন্দর থেকেও মানুষকে দূরে সরিয়ে দেয়। জুজু বেশ সুন্দরীও। দারুণ দেখতে তাঁকে কিন্তু ভাইজান সবকিছু পেরিয়ে এখন পর্দায় জুজুর সঙ্গে প্রেম করবেন ভেবেই হাসি পাচ্ছে। দেখি নামের এই বদল, আমাদের সিনেমা দেখার মনকে ঠিক কোন পথে নিয়ে যায়। শুধু কল্পনায় কয়েকটা লাইন ভেবেই মজা লাগছে।


কোনও ছেলে বলছে হয়তো--
১) আমি জুজুর ফ্যান।
২) জুজুর থেকে সুন্দরী হয় নাকি!
৩) জুজু আমার প্রেম। আমি জুজুকে ভালোবাসি।
৪) জুজুর জন্য আমি প্রাণ দিতে পারি।
৫) বাবা, আমি জুজুকে ছাড়া অন্য কাউকে বিয়ে করতে পারব না!



(সেই ছেলেবেলার ভয়ের জুজুর নিঃশব্দ হাসিটা শুনতে পেলেন?)


আরও পড়ুন ওই পাঁচটা গর্বের রিং আসলে 'শাক', যা দিয়ে ১০০ বছর মেয়েদের মানে 'মাছ' ঢেকে রাখা হয়েছে!