স্বরূপ দত্ত


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

মানুষ মানুষেরই জন্য। জীবন জীবনেরই জন্য। যিনি গেয়েছিলেন, তিনি চলে গিয়েছেন পৃথিবী ছেড়ে। ভূপেন হাজারিকা। চলে যাবেন নাই বা কেন? মানুষ আজও মানুষের জন্যই আছে। তবে, মারার জন্য! কথাটা শুনতে খারাপ লাগলেও আপনাকে মানতে হবে যে, এটা ঠিকও। এই পৃথিবীতে ভালো মানুষ শুরুর দিন থেকেই ছিল। আজও আছে। পরেও থাকবে। এটা একটা দিক হলে উল্টোদিকটা হল, মানুষ খারাপও ছিল শুরুর সেই দিন থেকে। আজও আছে। পরে নিশ্চয়ই আরও খারাপ হবে। এই পর্যন্ত লাইনটা লিখেই কেমন যেন আতঙ্ক লাগলো মনে! আর কত খারাপ হবে! আজ তো ৯/১১! দু-দুটো প্লেন গিয়ে এক লহমায় মাটিতে মিশিয়ে দিয়েছিল ১১০ তলার দু'দুটো বাড়ি! মানুষই! সে ঘটনার তো মাত্র ১৫ বছর হল! আজ থেকে ৭০ বছর আগে এমন বোম ফেলা হয়েছিল হিরোশিমা-নাগাসাকিতে, তার খেসারত আজও দিতে হচ্ছে সেখানকার মানুষকে! তাহলে মানুষ তো মানুষের জীবন নেওয়ার জন্যই রয়েছে!


প্রশ্ন হল, কেন বললাম এমন কথা? কারণ, আমাদের চারপাশেই তো কিডনি পাচারচক্র ধরা পড়ে! আমরা অনেক সময় বলি যে, বাড়িতে একটা 'জন্তু জানোয়ার' পোষার পর তাকে খাইয়ে দাইয়ে, তাকে কেটে আবার নিজেরাই রান্না করে খায় কত মানুষ! তাতেই বুকটা ধড়াস করে ওঠে, ভাবলেই। আর সেখানে যে মানুষটার কিডনি নিয়ে পাচার করা হবে, তাঁকে দিব্যি বাড়িতে রেখে খাইয়ে পরিয়ে তাঁর অনুমতি ছাড়াই এক রাতে অজ্ঞানে খুবলে নেওয়া হয় তাঁর কিডনিটা! কখনও তাঁর চোখ দুটো। কখনও তাঁর শরীরের অন্যান্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গ! আমরা মানুষ! কীভাবে পারে কোনও মানুষ আর একটা মানুষকে টুকরো টুকরো করে কেটে ব্যাগে ঢুকিয়ে ফেলতে! এসব খবরগুলো প্রায়ই কানে আসে, চোখে পড়ে। এড়িয়ে যাই। মনে হয়, ওটা 'জানোয়ারদের' খবর। আমি মানুষ। আমি কেন ওসব খবর রাখব! ও খবর না জানলে কিস্যু পিছিয়ে পড়ব না।


কিন্তু দু-চারদিন একটা জিনিস দেখে আত্কেই উঠলাম খানিকটা। মানুষের জীবনের দাম আজকের দিনে এক ফোঁটাও নেই। কিন্তু মানুষ মরে গেলে তাঁর দাম লাখ টাকা! অথবা কোটি টাকা! মানুষ, কলা গাছ, নারকেল গাছ আর হাতি যেন মিলেমিশে সব একাকার! এগুলোর কোনওকিছুই ফেলা যায় না! সবকিছুই অমূল্য! শুধু জীনটাই নয়। আমেরিকাসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশেই শরীরের অনেক অঙ্গপ্রত্যঙ্গই আপনি আইনত বিক্রি করতে পারেন। সে তো আমাদের দেশেই কত লোক তাঁর কিডনি বিক্রি করে দেন।কিন্তু চমকালাম, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে মানুষের শরীরের নানা জিনিসের রেট চার্ট জানার পর থেকে। আপাতত আমেরিকান ডলারেই আমেরিকাতে মানব শরীরের কোন অঙ্গের দাম কেমন সেই সুস্বাদু 'মেনু লিস্টে' একটু নজর দিন।(ভারতীয় টাকায় ৬৬ দিয়ে গুণ করলেই পেয়ে যাবেন)।


১) চোখের মণির দাম (এক জোড়া) - ১৫০০ ডলার
২) মাথার খুলি (দাঁত সহ) - ১২০০ ডলার
৩) কাঁধের হাড় - ৫০০ ডলার
৪) ধমনী - ১৫০০ ডলার
৫) হৃত্পিণ্ড - ১ লক্ষ ২০ হাজার ডলার
৬) যকৃত্ - ১ লক্ষ ৫০ হাজার ডলার
৭) হাত (একটা) - ৪০০ ডলার
৮) পাকস্থলী - ৫০০ ডলার
৯) কিডনি (১ টা) - ২ লক্ষ ৬০ হাজার ডলার
১০) রক্ত (প্রতি এক বোতল) - ১২০ থেকে ১৫০ ডলার
১১) চামড়া - প্রতি বর্গফুট ২৭০০ ডলার



*** মন - (শীঘ্রই বিক্রি হবে ফ্রি-তে/এটা তালিকায় আমি ঢোকালাম)


না, এগুলো খোলা বাজারে এই দামে আপনি বিক্রি করতে পারবেন না। আবার এটাও ঠিক যে, এই জিনিসগুলো এই সমাজে বিক্রিও হয়! অর্থাত্, কাজটা করা নিষেধ। কিন্তু যাঁরা নিষেধ করেন, তাঁরাও জানেন, এগুলো লোকে করে! এবার বুঝুন, নিষেধ করা লোকগুলো কতটা 'অপদার্থ'! অমন কথা বলে লাভ কী যা কেউ শুনবে না? একটা কথা বললে লোকে সেটা শুনবেই। আর দুই, একবার না শুনলে তাঁকে কোনও কথাই বলা নেই। এই যে, মানুষের শরীরের এই অঙ্গগুলো বিক্রি হয়, সেগুলোর যে কোনও লাভ নেই এমনটা মোটেই নয়। নিশ্চয়ই এর ভালো দিক রয়েছে। একজন মানুষ অন্ধ। সে যদি অন্য মানুষের চোখ দিয়ে এই পৃথিবীটাকে দেখতে পায়, মন্দ কী! এ তো পাপ নয়, পূণ্য! আমাদের শহরেই তো এমনটা হল কিছুদিন আগে। কিন্তু আমাদের মানুষের খেল তো এটাই। ভালো জিনিসকে খারাপ নদীপথে বইয়ে দিতে আমাদের থেকে আর কেউ কখনও পারে না বলেই তো আমরা 'অমর' নই! মানুষ বিরাট বড়! সবথেকে বড়! সবথেকে বুদ্ধিমান! কত কত ভালো কথা বলার। কিন্তু সেই মানুষের তাহলে আজও কেন দুর্ঘটনা ঘটে! বড় এসেছে মানুষ। ঘটনাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না, এসেছে বড় পূণ্য অর্জন করতে! উপসংহার সেই একই। হাতে রইলো পেন্সিল।


সবই তো বিক্রি হল, হচ্ছে। ভালো। এই পৃথিবীর সভ্যতা আর সমাজ তো তাঁর নিজের নিয়মেই এগিয়ে চলে। সে চলুক। ভাবতে বড় অবাক লাগে যে, কোনওদিন হয়তো এই তালিকায় ওই শব্দটাও জুড়ে যাবে। 'মন'! ব্যস তাহলেই ষোলকলা পূর্ণ! আর হ্যাঁ, মন যদি তালিকায় ঢুকেও যায় কোনওদিন। নিশ্চিত থাকবেন, ওটা ফ্রি-তেই দেওয়া হবে কোনও একটা অঙ্গের সঙ্গে জুড়ে। মানুষের কাছে আর মনের দাম কবে ছিল!


আরও পড়ুন আমরা মানুষ হলে, তিনি কী? আর তিনি মানুষ হলে আমরা কী?