স্বরূপ দত্ত


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

গত কয়েকদিন ধরে যে পাঁচটা শব্দ সবথেকে বেশি শুনেছি, সেগুলো পরপর সাজালে হবে এরকম - ১) মা ।২) মাদার। ৩) সেন্ট। ৪) রোম। ৫) ভ্যাটিকান সিটি। সদ্য অফিশিয়ালি সেন্ট হলেন মাদার টেরেসা। মা থেকে সন্ত হওয়ার প্রায় ১৭ বছরের দীর্ঘ যাত্রাটা ঘটল চোখের সামনেই। মাদার টেরেসা সেন্ট হলেন। খুব ভালো। তাঁকে কোন মানুষ ভালোবাসতেন না? তাঁর নাম শুনলে কোন মানুষই বা শ্রদ্ধায় মাথা নোয়াতেন না? তাঁকে কোন মানুষই বা সবার উপরে রাখতেন না? কিন্তু এককভাবে কোনও মানুষের ভালোবাসা এবং শ্রদ্ধার থেকে যে অনেক বেশি সম্মানের কোনও প্রতিষ্ঠান তাঁকে সম্মান জানালে। তাই মায়ের সন্ত হওয়া খুবই উপভোগ করলাম। গর্বিত হলাম।


আজ তাই এক বাঙালি ঘরের মায়ের কথা বলতে ইচ্ছে করল। তবে, শুরুতেই একটা কথা বলে নিই। এই লেখাটা পড়ে আবার ভাবতে বসবেন না কিন্তু যে, মাদার টেরেসার সঙ্গে 'এই মায়ের' কোনও তুলনা টানার সাহস দেখাচ্ছি! মায়ের আবার তুলনা হয় নাকি? কিন্তু মাদার টেরেসা হলেন সেই মা, যিনি গোটা জগতের সন্তানকে আপন করে নিয়েছিলেন। মায়ের মমতা, স্নেহ পাওয়ার জন্য এই পৃথিবীর কোনও সন্তানকে তাঁর গর্ভে একটু একটু করে বড় হতে হয়নি। রাস্তায় পড়ে থাকা অনাথ শিশুদের চিরকালীন মা হয়ে উঠেছিলেন মাদার টেরেসা। তিনি নমস্য ছিলেন, আছেন এবং থাকবেন। পূজিতও হবেন।


আপনাকে এটাও মাথায় রাখতে হবে যে, সব মায়েরা যদি সমাজসেবায় চলে যান, তাহলেও সামাজিক ভারসাম্য বজায় থাকবে না। কারণ, নিজের গর্ভের সন্তানকেও ঠিকমতো মানুষ করতে হবে। সেটাও খুবই প্রয়োজন। দেশের সেবা, দশের সেবা করতে গিয়ে যেন, নিজের সন্তানের থেকে দূরে চলে যেতে না হয়। এই প্রসঙ্গে তো সদ্য প্রয়াত আর এক নমস্য মহাশ্বেতা দেবীর উদাহরণ দিব্যি দেওয়া যায়। মহাশ্বেতাও সমাজের মা হয়ে উঠেছিলেন। কিন্তু নিজের সন্তানের সঙ্গে তাঁর যে দূরত্ব ছিলই। তাই সামাজিক ভারসাম্য রক্ষার জন্য আমাদের দরকার দুই ধরনের মা-কেই। একদল মা হবেন মাদার টেরেসার মতো। মহাশ্বেতা দেবী, বাচেন্দ্রী পালদের মতো। যাঁদের নিজেদের গর্ভের সন্তান দরকার হয় না, 'মা' হয়ে ওঠার জন্য। আর একদল মা হবেন আমার, আপনার সবার মায়ের মতো। যাঁরা পরম মমতায় বড় করে আগলে রাখবেন আমাদের দুধে-ভাতে। যে মায়েদের আঁচলে মুখ গুঁজে বড় হয়ে আমরা গোটা জীবনটা বড় সহজে কাটিয়ে দিতে পারবো। যেমনটা চিরকাল আমরা হয়ে এসেছি।


আর এই প্রসঙ্গেই বলতে চাই এক মায়ের কথা। মনে হয় না, আপনি খুব একটা তাঁর নাম শুনেছেন বলে। ভদ্রমহিলার নাম কল্পনা ব্যানার্জি। একদম আটপৌড়ে বাঙালি ঘরের বউ। যিনি অভাবের সংসার থেকে শুরু করেছেন। রান্না করেছেন, বাসন মেজেছেন, ঘর গুছিয়েছেন, স্বামীর এনে দেওয়া টাকায় (সেটা যতই হোক), দিব্যি গোটা সংসারটা হাসিমুখে টেনে নিয়ে গিয়েছেন, যাচ্ছেন। আর সবকাজের আগে নিজের ছেলে-মেয়েকে মানুষ করেছেন। বরানগরের কল্পনা ব্যানার্জির মতো কোনও মা আমাদের বাংলায় আর কখনও দেখিনি!


আপনার মনে হতে পারে, কী এমন করেছেন এই কল্পনা ব্যানার্জি? সেটাই তো বলছি - কল্পনা ব্যান্যার্জির দুই সন্তান। একজনের নাম দোলা ব্যানার্জি আর একজনের নাম রাহুল ব্যানার্জি। এবার বুঝতে পারলেন তো? হ্যাঁ, দুজনেই তিরন্দাজ। শুধু তিরন্দাজ বললে হয়? লাইনটা এরকম করে বলা ভালো। 'দুজনেই ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়ন আর্চার'! হ্যাঁ, গোটা বাংলাটা আপনি যাতে করে পারেন একবার ঘুরে আসুন। সেটা গাড়িতে চেপে অথবা পায়ে হেঁটে, তারপর এসে দেখান এই বাংলার আর কোনও মাকে। যাঁর দুটি সন্তান। আর দুজনেই বিশ্বচ্যাম্পিয়ন! যেকোনও কিছুতে। তাঁকে শুধু তিরন্দাজ হতে হবে না। শুধু বাংলায় নয়, গোটা ভারতটা ঘুরে আসুন। রেজাল্ট ওই একই পাবেন। এই পৃথিবীর সবার মা-ই সবথেকে ভালো মা। এটা জানি এবং মানি। আমার মা আমার কাছে এই পৃথিবীর সেরা মা। আপনার কাছে আপনার মা-ও তাই। তা বলে এটাও তো ঠিক যে, কল্পনা ব্যানার্জি যে কাজটা করছেন, সেটা কতটা ব্যতিক্রমী? কী বলবেন তাঁকে রত্নগর্ভা? ধুর, ও তো আমরা প্রায় এখন সবাইকেই বলে ফেলি। আজ রাতে ঘুমোনোর আগে একবার কল্পনা করবেন কল্পনা ব্যানার্জিকে। বুঝতে পারবেন এই 'মা' ঠিক করেছেনটা কী! বাঙালির গর্বের মায়ের তালিকা করলে, কল্পনা ব্যানার্জিকে কখনও ভুলে যাবেন না যেন। বরং, এই লেখাটা আপনি যে পড়ছেন, যদি আপনি নারী হন, তাহলে অবশ্যই কল্পনা ব্যানার্জিকেই কল্পনা করবেন এবার থেকে। কীভাবে কোনও মা আমাদের নাগালের মধ্যে থেকে দুই সন্তানকে তৈরি করতে পারলেন বিশ্বচ্যাম্পিয়ন। আর আপনি পুরুষ হলে, নিজের স্ত্রীকে কল্পনা ব্যানার্জির উদাহরণ দেবেন কখনও। দেখবেন, আপনাদের সন্তানও জীবনে অনেক সাফল্য পাবে। আমাদের বাঙালিদের গর্বিত করবেন। আর মা-বাবা হিসেবে সেদিনের গর্বের অনুভূতি যাতে আপনি পেতে পারেন, সেই শুভেচ্ছা আর প্রার্থনা করলাম। আর হ্যাঁ, কল্পনা ব্যানার্জির ছবিটা আজ দেখে মনে গেঁথে নিন।



(এই লেখাটার মানে এই নয় যে, বিদ্যাসাগরের মায়ের থেকেও কল্পনা ব্যানার্জি বড় এমন কিছু বলতে চাইলাম।শুরুতেই বলেছি, মায়ের কোনও তুলনা হয় না। সেই সাহসও দেখালাম না। কিন্তু সমাজে যেমন মাদার টেরেসার প্রয়োজন আছে, তেমনই আছে কল্পনা ব্যানার্জিরও। আপনাকেই ঠিক করতে হবে, আপনি কোন মা হতে চাইছেন জীবনে। বরং, আমিও আজ আমার মাকে গিয়ে বলব- মা গো তুমি তো সেরাই। কিন্তু জানোতো মা, আছেন আর এক মা। বলে কল্পনা ব্যানর্জির গল্প শোনাবো। বিষয়টা যেহেতু মা, তাই অনুগ্রহ করে বিতর্ক করবেন না।)