স্বরূপ দত্ত


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

দীপা কর্মকার প্রায় গলায় পরে ফেলেও পারলেন না। সানিয়া মির্জা - রোহন বোপান্নাও তাই। তিনজনই ফিরলেন মাত্র এক ধাপ আগে। একটুর জন্য পদক পেলেন না কেউই। বেজিংয়ে এক ধাক্কায় এসেছিল তিনটি পদক। আর পরেরবার লন্ডন তো লন্ডন ড্রিমস হিসেবেই দেখা দিয়েছিল। একেবারে হাফ ডজন পদক জিতে ফিরেছিলেন ভারতীয় ক্রীড়াবিদরা। এবার রিও অলিম্পিকে এখনও পদকের খাতা খুলতে পারেনি ভারত। কিন্তু ১২৫ কোটির দেশ এখনও আশায় রয়েছে, কেউ না কেউ ঠিক জিতবেন পদক। যেকোনও দিন। যেকোনও সময়। যেকোনও মুহূর্তে। হোক তেমনই। এই আশাতেই রইলাম।


ভারতীয়রা এখনও পদক জেতেননি বলে যে অলিম্পিকে বাকি দেশের প্রতিযোগীরা এখনও পদক জিতছেন না, তা নয়। তাঁরা যে, যাঁর মতো ভালো পারফর্ম করছেন। আর জিতে নিয়ে যাচ্ছেন নিজের জন্য, দেশের জন্য গর্বের পদক। সেটা সোনাই হোক, রুপোই হোক অথবা ব্রোঞ্জ। অলিম্পিক পদক। তার আবার বিভেদ কি ধাতু দিয়ে করা সম্ভব? একটা জিনিস খেয়াল করে দেখেছেন? মাইকেল ফেল্পস থেকে উসেইন বোল্ট, কিংবা একটু অপরিচিত, সবাই কিন্তু পদক জেতার পর পোডিয়ামে দাঁড়িয়ে নিজের জেতা পদকটায় একটা 'কামড়' বসান। আর ওই অবস্থার ছবিগুলোই খবরের কাগজ কিংবা বিভিন্ন জায়গায় বেশি করে ছাপা হয়। কিন্তু কখনও মনে প্রশ্ন এসেছে কি, কেন অলিম্পিকে পদকজয়ীরা তাঁদের পদকে অমন কামড় বসান? এমন তো আর নয়, তাঁরা চারটে বছর ধরে মরণ কামড় দিয়ে প্র্যাকটিসে পড়ে থাকেন বলে না জেতেন পদকগুলো। তাই অমন। একেবারেই না।


অনেকে বলেন তার কারণ হল, সোনা বাকি ধাতুর থেকে বেশ খানিকটা নরম অর্থাত্ কোমল। তাই কামড় দিতে গিয়ে দাঁত বসিয়ে দিলে, সেই সোনার পদকে তো দাগ বসবেই। তাহলেই বোঝা যাবে, ওটা ঠিক কতটা সোনায় গড়া। ধ্যাত্ এ যুক্তি আজকের দিনে চলে নাকি! অলিম্পিকের ওই সোনার পদকটা কি ক'ভরি সোনার হিসেব রাখার জন্য নাকি! ওর দাম কি আর টাকায় হয়! তাহলে ঠিক কীসের জন্য এমনটা হয়? আর তা ছাড়া শুধু সোনা জেতা অলিম্পিয়ানরাই এমন করেন না। রুপো বা ব্রোঞ্জ জেতা ক্রীড়াবিদরাও একইরকম করে থাকেন। ব্রোঞ্জ তো আর এত নরম নয়, তাহলে? আর এখন পদকজয়ীরা জানেন তাঁদের সোনার পদক আসলে সোনার নয়। রুপো আর তামা মিশিয়েই তৈরি হয় সোনার পদক।


এর আসল উত্তর দিলেন ডেভিড ওয়ালেচিনস্কি। ডেভিড ইন্টারন্যাশনাল সোশ্যাইটি অফ অলিম্পিকের সভাপতি এবং ঐতিহাসিক। অলিম্পিকের অনেক কিছু নিয়েই তিনি চর্চা করছেন দীর্ঘদিন ধরে। তিনিই বলেছেন, 'এটা আসলে পদকজয়ীদের কোনও ধারণা নয়। এমনটা সম্ভবত কোনও ফোটোগ্রাফারই প্রথমবার করেছিলেন। পদকজয়ীর, পদক নিয়ে যদি একটা কামড় দেওয়ার ছবি পাওয়া যায়, তাহলে সেটা বিক্রি করতে সুবিধা হবে। তাই ফোটোগ্রাফারদের দিক থেকেই প্রথম এই দাবিটা আসে। তারপর মেনে নেন পদকজয়ীরা।' শোনা যায় সাঁতারে পদক জেতার পর এক পদকজয়ী ফোটোগ্রাফারদের জন্য পোজ দিচ্ছিলেন। সেখানে বেশ খানিকটা দূরে দাঁড়িয়েছিলেন এক ফোটোগ্রাফার। তিনিই বলেছিলেন, পদকটায় একটা কামড় দাও তো দেখি। ভালো ছবি হয় কিনা। শুরু সেই।


আরও বইপত্র ঘেঁটে জানা যায়, আসলে অলিম্পিকে এই স্টাইলটা এনেছেন সাঁতারুরাই প্রথম। তাঁরাই শুরু করেছিলেন পদকে কামড় দিয়ে ছবি তোলার। আর তারপর সেটাই রীতি হয়ে যায় অন্যান্য পদকজয়ীদের কাছেও। শুধু অলিম্পিকেই নয়, সব খেলার আসরেই এখন এটা চেনা রেওয়াজ। আছে মজার ঘটনাও। এই তো ২০১০ সালে জার্মানির ডেভিড মোয়েলার তাঁর জেতা রুপোর পদকে কামড় বসাতে গিয়ে নিজের দাঁতই ভেঙে ফেলেন! কাকতালীয়ভাবে মোয়েলারের মা একজন ডেন্টিস্ট! এখন অবশ্য পদকজয়ীরা কামড়ের পাশাপাশি তাঁদের জেতা পদককে চুম্বনও করছেন। চুম্বনই হোক অথবা কামড়, যেটাই করুন, আসল তো পদকজয়ীর ওই হাসিটাই। ওটার কি আর সোনা, রুরো, হীরে, প্ল্যাটিনাম নামের কিছু ধাতুর সঙ্গে তুলনা হয়! বিজয়ীর হাসিই যে সবথেকে বড় পদক।


আরও পড়ুন যে তেরঙ্গাকে পতপত করে উড়তে দেখে গর্বিত হন, জানেন ওটার নকশা করেছিলেন কে?