লকডাউনের পর সবে সবে প্রেক্ষাগৃহ খুলতে শুরু করেছে। ফলে ওটিটি প্ল্যাটফর্মের বাইরে মানুষ এখন সাহসে ভর করে প্রেক্ষাগৃহের দিকে পা বাড়াতে শুরু করছেন। ছবি দেখার জন্য প্রেক্ষাগৃহ যখন জীবাণুমুক্ত করার কাজ চলছে, সেই সময় পরবর্তী ছবি ডিকশনারির শ্যুটিংও প্রচারও কদমে শুরু করেন ব্রাত্য বসু এবং বাংলাদেশের জনপ্রিয় অভিনেতা মোশাররফ করিম। তাদের মুখোমুখি জি ২৪ ঘণ্টা।


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

প্রতিনিধি (অনসূয়া বন্দ্যোপাধ্যায়) - দশ বছর পর ছবি পরিচালনায় ফিরলেন আপনি। বুদ্ধদেব গুহর দুটি গল্প অবলম্বনে ছবি করছেন, হঠাত্‍ এই গল্প বলতে ইচ্ছে হল কেন?


ব্রাত্য বসু - কলেজ জীবনে এই দুটি গল্প পড়েছিলাম। এই গল্প দুটোই আমার ভিতরে রয়ে গিয়েছিল। কোনও কোনও গল্প নাড়া দিয়ে যায় মাঝেমধ্যেই। এটিও সেরকম একটি গল্প। খুব সহজ করে বলতে গেলে খুব সরল কিন্তু গভীর। তাই মানবিক ভাবে খুব শক্তিশালী বলে মনে হয়েছিল।



প্রতিনিধি - বর্তমান সময়ে এই বিষয় ছবির মাধ্যমে তুলে ধরা জরুরি মনে হয়েছিল?


ব্রাত্য বসু -গত দশ বছরের অভিজ্ঞতায় আমার মনে হয়েছে, বাংলা ছবি তৈরির ক্ষেত্রে আমরা যদি একটু সহজ হতে পারি, তাহলে ভাল হয়। তাই সাধারণ একটি গল্প বলতে চেয়েছি।


প্রতিনিধি -মোশাররফ করিমও এই মুহুর্তে আমাদের সঙ্গে, প্রথমবার টলিউডে তাঁকে ছবি করতে দেখা যাবে, ব্রাত্য বসুর সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা কেমন ছিল আপনার?


মোশাররফ করিম - আগে থেকে আমার যে ভয় কাজ করছিল, তা হল ব্রাত্য বসু একজন মন্ত্রী। মনে হচ্ছিল তাঁর সঙ্গে কীভাবে ডিল করব। আবার ভালও লাগছিল। এত সহজ করে ব্রাত্য বসু কেন কথা বলেন, তা বেশ সমস্যা বলে মনে হচ্ছিল (একটু হেসেই )। পশ্চিমবঙ্গ বা কলকাতায় তো আগে কখনও কাজ করা হয় নি। একই ভাষায় কথা বলি কিন্তু ওঠা বসা হয়নি। ফলে সিঙ্ক করবে কি করবে না তা নিয়ে একটু চিন্তা ছিল। ঠিক করলাম চিত্রনাট্যে যা লেখা রয়েছে, তার বেশি কিছু করব না। পরে একবার রিহার্সালের সময় আমি একটা এক্সপ্রেশন অ্যাড করে ফেলি । ব্রাত্য় বসু নিজেই তখন বলেন, আপনি এটা করবেন। তখন আমি বুঝেছি, আমি ঠিক পথেই হাঁটছি। আমি যেমন ভাবছিলাম, ব্রাত্য বসুও তেমন ভাবছেন। কাজের শেষে মনে হয়েছিল, ঘাম দিয়ে জ্বর ছাড়াল। 



প্রতিনিধি - এই সূত্র ধরেই আমি একটা প্রশ্ন করি আপনাকে। বাংলাদেশ থেকে একটা সময় শিল্পীরা এখনে আসতে পারছিলেন না। বাংলায় এসে কাজ করতে পারছিলেন না। আপনার কী মনে হয়, শিল্পের এই বিনিময় কতটা জরুরি?


মোশাররফ করিম - আমার আসলে কোনও সীমাবদ্ধতাই ভাল লাগে না। এটা আমার একদমই ব্যক্তিগত মত। আমরা তো শিশু নই, আমরা সামাজিক জীব। শিশুরা যা বলতে পারে, সামাজিক জীব তা বলতে পারে না। আমার খোলা আকাশ ভাল লাগে, আমি বাড়তে চাই। কতদূর বাড়ব তাও জানি না কিন্তু চেটেপুটে খেতে ইচ্ছে করে।  


প্রতিনিধি - ব্রাত্য় দা ছবির নাম ডিকশনারি রাখলেন কেন? ডিকশনারি মানে সব কিছুর অর্থ যেখান থেকে পাওয়া যায়। কোথাও গিয়ে ওয়ান স্টপ সলিউশন কিন্তু সত্যিই কী সব অর্থ পাওয়া যায়?


ব্রাত্য বসু - একদমই। সব অর্থ জানলেও আসলে কতটা বোঝা যায়? সম্পর্কের অর্থ, জীবনের অর্থ কী বোঝা যায়। আসলে শব্দ কঙ্কাল থেকে আত্মায় যাওয়ার যে জার্নি, সেটাই আসলে ডিকশনারি। অভিধানকে অতিক্রম করে যা কিছু তাই ডিকশনারি।


প্রতিনিধি - এই ছবিতে আপনি আপনার স্ত্রীকে ডিরেক্ট করেছেন, তো সেটা কতটা কঠিন ছিল?


ব্রাত্য বসু -আসলে স্ত্রীরা তো আমাদের ডিরেক্ট করেন। ক্যাটাসট্রফি এবং ডিজাস্টারের পার্থক্যর মতো অনেকটা। বউকে ডিরেক্ট করা ও বউ আমাকে ডিরেক্ট করা আসলে ক্যাটাসট্রফি এবং ডিজাস্টারের মতোই। গ্ল্যাডস্টোন বলেছিলেন, আমি জলে ডুবে যাচ্ছিলাম সেটা ডিজাস্টার, আমি ডুবতে ডুবতে বেছে গেলাম সেটা ক্যাটাসট্রফি (হাসতে হাসতে বলেন ব্রাত্য বসু)।


প্রতিনিধি - আনার চরিত্রটা ঠিক কেমন?


মোশাররফ করিম - চরিত্রটা স্ক্রিপ্টেই লেখা খেটে খাওয়া মানুষ। ইংরাজির ক্ষেত্রে দুর্বলতা আছে। নিজের মধ্যে যা ঘাটতি, তা যেন ছেলের মধ্যে না থাকে, তা চান। ছেলেকে নিয়ে প্রচুর স্বপ্ন। গল্পে সেই আবেগ এবং জীবন বোধ ফুটে উঠেছে।


প্রতিনিধি -আবেগ ও বোধকে তাড়িত করতে এই ধরনের ছবিতে সঙ্গীত খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, তো এই ছবির ক্ষেত্রেও নিশ্চই তাই?


ব্রাত্য বসু -ভাবনার বীজটা বুঝে আমি যেভাবে ছবিতে দেখেছি, প্রবুদ্ধ বন্দ্যোপাধ্যায়ও সেভাবে দেখেছেন। তাই অদেখা যেন দৃশ্যমান হয়ে উঠেছে। তিনি অসাধারণ কাজ করেছেন এই ছবিতে।


প্রতিনিধি -আশা করি খুব তাড়াতাড়ি আমরা প্রেক্ষাগৃহে এই ছবি দেখতে পাব। ভয় কাটিয়ে ইতিমধ্যেই দর্শক ফিরেছেন প্রেক্ষাগৃহে। এই ছবি দেখতেও মানুষ ভিড় করবেন আমরা আশা করি।


ব্রাত্য বসু -আমি চাইব আপনারা সবাই দেখুন ছবিটা, আশা করি আশাহত হবেন না।


মোশাররফ করিম - পশ্চিমবঙ্গে এই প্রথম কাজ করলাম। আমার অনুভূতি খুবই সুখকর। আমি আনন্দ পেয়েছি এই কাজ করে। আমি বিশ্বাস করি আনন্দ সংক্রামক, তা ছড়িয়ে যায়। আপনাদের ভাল লাগবে।