Mallika Banerjee : বিয়ে ভেঙেছে, নতুন সম্পর্কে জড়িয়ে ঠকেছেন, তবু হ্যাপি এন্ডিং-এ বিশ্বাসী মল্লিকা..
হঠাৎই ভীষণ অসুস্থ। আত্মীয়রা আসা বন্ধ করে দিলেন, পাছে আমার মা তিন বোনকে খাওয়াতে টাকা চায়! ক্লাস এইটে পড়ি, কিছু তো করতে হবে, নাচ শেখাতে শুরু করলাম। এটুকু বুঝে গিয়েছিল, সমাজে থাকতে গেলে টাকা খুব দরকার। নাচ শেখানো পাশাপাশি ফিল্মে ব্যাকআপ ডান্সারের কাজ করা। মনে মনে ভাবতাম, আমি হিরোইন হতে পারব না? আমার জন্য, কেন ঢাকা প্লেটে খাবর আসবে না! কিন্তু কেনই বা করবে, দুটো বেনী, সেই দিদিমণি, মফঃস্বল, যাগ্গে...স্ট্রাগল চলল...
Mallika Banerjee, জি ২৪ ঘণ্টা ডিজিটাল ব্যুরো : বারবার ঠকতে হয়েছে তাঁকে, তবে এখনও বিশ্বাস হারাননি অভিনেত্রী মল্লিকা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিয়ে ভেঙেছে, আবারও নতুন করে সম্পর্কে জড়িয়েছেন মল্লিকা, আবারও ঠকেছেন। তবে রাস্তায় বের হলে রোজ ঠকতে হবে, বিশ্বাস হারালে চলবে না। বাবার শেখানো এই বিশ্বাস নিয়েই এখনও তিনি পথ হেঁটে চলেছেন। আজ তিনি টেলিপর্দার পরিচিত মুখ, কাজ করে ফেলেছেন বড় পর্দাতেও। তাঁর অভিনয় দক্ষতাতে মুগ্ধ দর্শক। সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে, প্রতিষ্ঠা পাওয়ার পিছনে নিজের জীবনের কঠিন লড়াই নিয়ে মুখ খুলেছেন মল্লিকা। তাঁর কথায়, আমার জীবনের কথা শুনে যদি কেউ অনুপ্রাণিত হয়, তাহলে নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করব।
মল্লিকা জানান, 'গঙ্গার ধারে বসে ভাবতাম, ওপারে কলকাতা, আর এপারে বেলুড়। ভাবতাম, গঙ্গামা কী ভীষণ নিষ্ঠুর, হঠাৎ করে ওপারটা শহর, আর এপারটাকে মফঃস্বল বানিয়ে দিয়েছে। আমি বেলুড়ের মেয়ে, আর আমরা তিন বোন, বাবার চিন্তা ছিল, তিন মেয়েকে বিয়ে দিতে গেলে অনেক খরচ করতে হবে। এরপর আমার জীবনে প্রথম বিপত্তি ক্লাস এইটে। বাবা সেন্ট্রাল গর্ভমেন্টে চাকরি করতে ঠিকই, তবে হঠাৎই ভীষণ অসুস্থ। আত্মীয়রা আসা বন্ধ করে দিলেন, পাছে আমার মা তিন বোনকে খাওয়াতে টাকা চায়! ক্লাস এইটে পড়ি, কিছু তো করতে হবে, নাচ শেখাতে শুরু করলাম। এটুকু বুঝে গিয়েছিল, সমাজে থাকতে গেলে টাকা খুব দরকার। নাচ শেখানো পাশাপাশি ফিল্মে ব্যাকআপ ডান্সারের কাজ করা। মনে মনে ভাবতাম, আমি হিরোইন হতে পারব না? আমার জন্য, কেন ঢাকা প্লেটে খাবর আসবে না! কিন্তু কেনই বা করবে, দুটো বেনী, সেই দিদিমণি, মফঃস্বল, যাগ্গে...স্ট্রাগল চলল।
আরও পড়ুন-পাশে আলিয়া, সদ্যোজাত রাজকন্যাকে বুকে আঁকড়ে বাড়ি ফিরলেন রণবীর
আরও পড়ুন-হাতে টাকাপয়সা নেই, ভূমিকম্পে ঘরছাড়া অভিনেতা আদিল হুসেন!
মল্লিকা বলতে থাকেন, 'ছোটবেলায় প্রেমে পড়ি, একজন মানুষের হাত ধরে, এক কাপড়ে, বিশ্বাস করে কলকাতায় পাড়ি দিলাম। সংসার চলল, ছোট বয়সেই ছোট্ট একটা ফুটফুটে মেয়ে হল। বেশ চলছিল, সংসার, অন্য় মজা। হঠাৎ করে আমার জীবনেও ঘণ্টা বাজল, বিদায়ের...। বিবাহিত জীবনটা ভেঙে গেল। একদিন সকালে বর এসে বলল, একজনকে ভালোবাসি, তাকে বিয়ে করতে চাই, তোমার সঙ্গে থাকতে চাই না। ব্যাস অনেকগুলো টাকার ঋণ, ৯ বছরের সন্তান দিয়ে ও চলে গেল। কী করব! তিন বোন, ছোট বোন বলল, তুই তো নাচতে পারিস দিদি, অভিনয় করতে পারবি না? এরপর একদিন এক বন্ধু বলল, তুমি শাড়ি পরে, বড় নাকছাবি পরে চলে এসো, অডিশন দিতে। অডিশন হল, তারপর বলল ফটোশ্যুট আছে সিরিয়ালের জন্য। তারপর একদিন সকালে উঠে দেখি, খবরের কাগজে জোড়া ফটো, কলাকাতায় ২০০টা হোর্ডিং পরেছে (হাসিমুখে। আমার প্রথম বড় ব্রেক, সোহাগে সিঁদুর। এরপর জীবন চলতে থাকল।
এরপর মল্লিকার জীবনে আবারও বসন্ত এল। অভিনেত্রীর কথায়, 'একটা মানুষের সঙ্গে দেখা হল, সে হাত ধরে বলল, আমি পাশে আছি তো, তবে সে বলল, ওঁর সঙ্গে থাকতে হলে কাজ ছাড়তে হবে। মানুষ ভালো থাকার লোভে অনেক কিছুই করে। দু'বছর কাজ ছেড়ে দিলাম, ওঁর কথা মতো চলতাম। পরে বুঝলাম, ব্র্যান্ডের নিচে আসল ব্র্যন্ডটাই নকল। ঠিক করলাম, সম্পর্ক ছেড়ে বেরিয়ে যাব, আবার কাজ শুরু করব। এই সম্পর্কে থাকলে শুধু নিজেকে নয়, প্রত্যেক মহিলাকে অপমান করা হবে। আজকের দিনে এসে আর মার খাব না। পাশে দুই বোন, আমার মেয়ে আর আমার বেস্ট ফ্রেন্ড মা, আবার স্ট্রাগল শুরু। যাঁদের বলেছিলাম, কাজ করব না, তাঁদেরকে আবারও ফোন করা শুরু করলাম। আমার পরিচালক, প্রযোজক, ইন্ডাস্ট্রি আবারও আমায় কাজ দিল। আজ কলকাতা শহরে একটা ফ্ল্যাট করেছি, গাড়ি কিনেছি। দু'বোন নিজের পায়ে দাড়িয়েছে, মেয়ে ক্লাস টেনে পড়ে। আমার মায়ের চুলে পাক ধরেছে (কাঁদো কাঁদো গলায়)।' মল্লিকার কথায়, 'এখনও অপেক্ষায় আছি, হ্যাপি এন্ডডিংয়ের। আমার বাবা বলত, তুমি রাস্তায় চল তো, রোজ মানুষ তোমায় ঠকাবে, তারপরেও মানুষকে তোমায় বিশ্বাস করতে হবে। তাই এখনও আমার বিশ্বাস আছে হ্যাপি এন্ডিং-এর জন্য...।'