বড়লোকের বিটি লো`র মতো গান যিনি সৃষ্টি করতে পারেন, তিনি মহান শিল্পী : বাদশা
বিশেষ ভিডিয়ো বার্তায় লোকশিল্পী রতন কাহারকে নিয়ে মুখ খুললেন `গেন্দা ফুল` গায়ক বাদশা।
নিজস্ব প্রতিবেদন : ''মহান লোকশিল্পী রতন কাহারের পাশে দাঁড়াতে চাই। আমার পক্ষে যেভাবে, যতটা সম্ভব ওনাকে প্রকৃত সম্মান দিয়ে, আর্থিক ভাবে ওনার পাশে দাঁড়াতে চাই।'' বিশেষ ভিডিয়ো বার্তায় লোকশিল্পী রতন কাহারকে নিয়ে মুখ খুললেন 'গেন্দা ফুল' গায়ক বাদশা।
বেশকিছুদিন ধরেই 'বড়লোকের বিটি লো'র গানের লাইনের সঙ্গে পাঞ্জাবি শব্দ জুড়ে বাদশা-র 'গেন্দা ফুল' মিউজিক ভিডিয়ো নিয়ে বিতর্ক তুঙ্গে। গানটির প্রকৃত স্রষ্টা, বীরভূমের লোকশিল্পী রতন কাহারের নাম না ব্যবহার করা নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রশ্ন তোলেন অনেকেই। Zee ২৪ ঘণ্টা ডট কম-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে রতন কাহার বাবু নিজেও জানান, ''বড়লোকের বিটি লো' গানটি তাঁর লেখা এবং গানের সুরও তাঁর করা''। এছাড়াও বিভিন্ন মাধ্যমে বিষয়টি নিয়ে লেখালিখি হয়। এই বিতর্কের খবর 'বাদশা'র কানেও পৌঁছোয়। আর এরপরই মঙ্গলবার রাতে সোশ্যাল মিডিয়ায় লাইভ ভিডিয়োতে আসেন গায়ক বাদশা নিজেই। এমনকি নিজের ইনস্টাগ্রাম হ্যান্ডেলেও তিনি তাঁর বক্তব্য তুলে ধরেন।
লম্বা ভিডিয়ো বার্তায় বাদশা বলেন, ''গেন্দা ফুল-এর জন্য অনেক ভালোবাসা পেয়েছি। বিশেষ করে বাঙালিদের কাছ থেকে। পাশাপাশি গোটা বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সাড়া পেয়েছি। 'গেন্দা ফুল' গানটি প্রকাশ করার পর একটি বিতর্ক তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে সোশ্যাল মিডিয়াতে। ভিডিয়োতে আমি বাংলা লোকসঙ্গীতের দুটো লাইন ব্যবহার করেছি। যেটা আমি বাংলা লোকসঙ্গীত বলেই জানতাম। পরে জানতে পারি, গানটি লিখেছেন একজন বিখ্যাত এবং বর্ষীয়ান বাঙালি লোকশিল্পী রতন কাহার। এরপর, আমি এর আগে এই গানের উপর প্রকাশিত ভিডিয়োগুলি খুঁজে দেখি, সেখানে কোথাও রতন কাহারের নাম উল্লেখ ছিল না। যে আর্টিস্ট সোসাইটি (যেখানে গোটা দেশের শিল্পীদের শিল্প কর্মের বিষয়ে তথ্যা থাকে) রয়েছে, সেখানে আমি খোঁজ নি। সেখানেও ওনার নাম আমরা পাইনি। কিন্তু তারপরেও বিভিন্ন লোকজনের মাধ্যমে আমরা জানতে পারি এই গানটি রতন কাহারের। আমি নিজে পাঞ্জাবি। যেমন আমাদের একটা সুন্দর সংস্কৃতি আছে, তেমন বাঙালিদেরও রয়েছে। আমি সবরকম সংস্কৃতিকেই শ্রদ্ধা করি। এক শিল্পী হিসাবেও আরেকজন শিল্পীকে সম্মান করি। যিনি এমন বাংলা লোকগানের সৃষ্টি করতে পারেন, তিনি মহান শিল্পী। আমি চেয়েছিলাম, গোটা বিশ্ব গানটা শুনুক। আমি নিজে লোকগান ভালোবাসি। এই গান যিনি লিখেছেন, তাঁর শুভাকাঙ্খীরা আমায় জানিয়েছেন, তাঁর আর্থিক অবস্থা ভালো নয়। আমি তাঁকে আর্থিক সাহায্য করতে চাই। তবে যতটা সম্ভব, যেভাবে সম্ভব আমি ওনাকে আর্থিক সাহায্য করতে চাই। আমি ওনাকে সাহায্য করতে পারলে খুশি হব। আমি শিল্পী হিসাবে কখনও ওনাকে অসম্মান করতে চাইব না। আমার এটা জানাতে কয়েকদিন সময় লাগলো। কারণ, লকডাউনের জন্য আমার তথ্য সংগ্র করতে সময় লেগে গিয়েছে। লক ডাউন না হলে আমি নিজেই রতন কাহার মহাশয়ের কাছে যেতাম। আমার কাছে এই তথ্য ছিল না। এর আগের ভিডিয়োগুলিতেও যদি আমি রতন কাহার মহাশয়ের নাম পেতাম, তাহলে দিতাম। এই ভিডিয়োটি বানানোর জন্য যাঁদের ভূমিকা রয়েছে, তাঁদের প্রত্যেকের নাম আমরা দিয়েছি। ওনার নামটা পেলে অবশ্যই দিতাম। বাঙালি সংস্কৃতি আমি ভালোবাসি। আমার কেরিয়ারে শুরুতেও যখন ওখানে শো করেছিলাম, তখনও বাংলা থেকে ভালোবাসা পেয়েছি। বাংলায় গেলে আমি অনেক ভালোবাসা পাই। এটা দুর্ভাগ্যজনক, একটা ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। গোটা ঘটনার জন্য দুঃখিত। এই গান বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়েছে। অন্যন্যা দেশে অনেকে তো বাংলা শব্দগুলি বুজতেও পারছেন না, তবুও গাইছেন। কারণ তাঁদের ভালো লাগছে। আপনারা যাঁরাই রতন কাহারকে চেনেন তাঁরা এই বার্তা পৌঁছে দিন যে আমি ওনার পাশে দাঁড়াতে চাই।...''
তবে এর আগেও 'বড়লোকের বিটি লো' গানটি স্রষ্টা হিসাবে রতন কাহারের নাম না দেওয়া নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছিল। এই বিতর্ক নতুন নয়। Zee ২৪ ঘণ্টা ডট কমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে রতন কাহার মহাশয় নিজেও জানিয়েছেন, ১৯৭২ সালে তিনি গানটি লেখেন। গানটি প্রসারভারতীতে তিনিই প্রথম গেয়েছিলেন। তবে ১৯৭৬ সালে স্বপ্না চক্রবর্তী গানটি রেকর্ড করেন। তবে সেখানও স্রষ্টার হিসাবে তাঁর নাম দেওয়া হয়নি।
'প্রসঙ্গত' 'বড়লোকের বিটি লো' গানটিতে রতন কাহারের নাম না দেওয়া নিয়ে ১৯৭৬ সালেও বিতর্ক তৈরি হয়েছিল। তবে বর্তমান বাদশা তাঁর 'গেন্দা ফুল' মিউজিক অ্যালবামে গানটির লাইন নতুন করে ব্যবহার করায়, সেই বিতর্কই নতুন করে সামনে আসতে শুরু করে।