`জননী` নেই, স্মৃতির সরণিতে বিশিষ্টরা
``সুপ্রিয়া-উত্তমের হিন্দু মতে বিয়ে হয়েছিল। কন্যা সম্প্রদান করেছিলেন সুপ্রিয়ার বাবা। ওরা ওটাকেই বিয়ে বলে মানত।``
নিজস্ব প্রতিবেদন: ধরা গলা, চোখের কোণ ভিজে যাওয়া মানুষগুলোর কারও কাছে তিনি বেণু দি', আবার কেউ বলেন বেণু আন্টি। সুপ্রিয়া দেবীর মতো একজন প্রবীণ ও অভিভাবক তুল্য অভিনেত্রীকে হারিয়ে বাংলার সিনে জগত্ আজ দৃশ্যতই অশ্রু সজল। একরাশ শূন্যতার মাঝে আজ থেকে শুধু স্মৃতিই সম্বল। পুত্রসম প্রসেনজিৎ থেকে দীর্ঘ কালের সহকর্মী মাধবী মুখোপাধ্যায়, সকলের স্মৃতিতেই আজ সুপ্রিয়া দেবী।
প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়, অভিনেতা
কাছের মানুষগুলো দূরে চলে গেলে অনেক কথাই মনে পড়ে যায়। সে বিষয়ে বলতে গিয়ে অভিনেতা প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় বলেন, '' বেনু আন্টির কাছ থেকে অনেক ভালোবাসা-আদর পেয়েছি। ছোটবেলায় 'রক্ত তিলক', 'খেলার পড়ে'তে একসঙ্গে কাজ করেছি। ইদানিং দেখা হলেই হাত ধরে বলতেন, বুম্বা কেমন আছিস বাবু? এরপর হয়ত উনি অন্য কারোর সঙ্গে কথা বলছেন তখনও আমার হত ধরে রয়েছেন। হাত ছাড়ানোর সাহস ছিল না। পরিবারের বড় সদস্য চলে গেলেন। আমার পারিবারিক ডাক্তারই বেণু আন্টিকে দেখতেন। ছোটবেলায় ওনার খাটে শুয়ে থেকেছি বহু সময়। অনেক স্মৃতি জড়িয়ে রয়েছে।''
ললিতা চট্টোপাধ্যায়, অভিনেত্রী
খুব কাছের বন্ধু, সহ অভিনেত্রীকে হারিয়ে মর্মাহত অভিনেত্রী ললিতা চট্টোপাধ্যায়। স্মৃতির সমুদ্রে ডুব দিয়ে ২৪ ঘণ্টাকে বলেন, ''আমি ভাবতেই পারিনি, খুব কষ্ট পেয়েছি। হঠৎ খবর পেয়ে, ভেঙে পড়েছিলাম। ১৯৬৪ থেকে ওকে চিনি। খুব ঘনিষ্ঠ ভাবে চিনি। একসঙ্গে মেলামেশা করেছি, পার্টি করেছি, কত আড্ডা, ভোলা যায় না। খুব কষ্ঠ হচ্ছে। চেষ্টা করিছি সেই কষ্ট থেকে বেরিয়ে আসতে, পারছি না।'' এরপর নানা কথা বলতে বলতে ললিতা জানান, ''সুপ্রিয়া-উত্তমের হিন্দু মতে বিয়ে হয়েছিল। কন্যা সম্প্রদান করেছিলেন সুপ্রিয়ার বাবা। ওরা ওটাকেই বিয়ে বলে মানত।''
মাধবী মুখোপাধ্যায়, অভিনেত্রী
কথা বলতে গিয়ে গলা ধরে এলেও, বন্ধু সুপ্রিয়া দেবীর সঙ্গে কাটানো অজস্র মুহূর্তের কথা বলেছেন মাধবী। তাঁর কথায়, ''আম্রপালি বলে একটি ছবিতে ও অসাধারণ নেচেছিলেন। এমনিতে খুবই ভাল নাচতেন। আর সেই মহিলাই শেষ দিকে হাঁটতে পারতেন না, ভাবলেই কষ্ট হয়। আমি একবার খুব বকেছিলাম। বলেছিলাম, তুমি ওয়াকার দিয়ে হাঁটতে পারতেন না! আমায় তখন বলল, আচ্ছা সে না হয় হবে, তুই আগে একদিন আয় আমার বাড়িতে, সারাদিন থাকবি। আমি রান্না করব, তুই খাবি।''
''শিল্পী যখন শিল্প জগত থেকে দূরে চলে যায় তখনই সে একা হয়ে যায়। উনি একা হয়ে গিয়েছিলেন। তাই হয়ত চলে গেলেন। উনি অসামান্য হোস্ট ছিলেন। নিজের পার্টিতে সব গেস্টের সঙ্গে আলাদা করে কথা বলতেন।''
শিবাশিস চট্টোপাধ্যায়, চিত্রনাট্যকার/সাংবাদিক
''আমার সু্প্রিয়া দেবীকে প্রথম দেখা সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজের ছাত্র হিসাবে কলেজের ১২৫ বছরে আমি যখন তাঁকে নিমন্ত্রণ করতে যাই। ততদিনে উনি ময়রা স্ট্রিটের বাড়ি ছেড়ে চলে এসেছেন মারুতি বিল্ডিংয়ের ফ্ল্যাটে। উনি একটা কাফতান পড়ে মাথায় তোয়ালে জড়িয়ে বেরিয়ে এসেছিলেন। এখনও চোখ বন্ধ করলে সুপ্রিয়া দেবীর সেই ছবি দেখতে পাই।''
''সুপ্রিয়া দেবী, কিশোর কুমার এবং ধর্মেন্দ্রকেও রান্না করে খাইয়েছেন। তিনি কীভাবে অতিথিকে সাজিয়ে গুছিয়ে খাবার দিতেন তা না দেখলে বোঝা যায় না।''
সৃজিত মুখোপাধ্যায়, পরিচালক
''প্রথম দেখা হয়েছিল ম্যাডলি বাঙালির সেটে। আমি তখন অঞ্জন দত্তকে অ্যাসিস্ট করছি। আমার দায়িত্ব ছিল ওনাকে স্ক্রিপ্ট পড়ে শোনানো।'' তাঁর কথার মধ্যে 'তোমার দাদা', 'তোমাদের দাদা' এই শব্দটা বারবার আসতে থাকত।
এছাড়াও কিংবদন্তী এই অভিনেত্রীর মৃত্যুতে টুইট করেছেন অনেকে।